হামলার পর মামলা: দেশরক্ষার আন্দোলন ও বিবস্ত্র গণতন্ত্র

মিনহাজ আল হেলাল
Published : 10 July 2011, 07:39 AM
Updated : 10 July 2011, 07:39 AM

মহাজোট সরকারের দিন যতই গড়াচ্ছে। মহা দুর্যোগ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা ততই ঘনীভূত হচ্ছে, বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, পথে প্রান্তরে ভয়াবহ অন্ধকার নেমে আসছে। অনিশ্চয়তার দোলাচলে জনমানুষের দিনগুলো কাটছে কোনরকম। নিরাপত্তা নামক বস্তুটি এখন সোনার হরিণ। শাসক দলের এক পর এক দেশবিরোধী কর্মকান্ড আফ্রিকার দেশগুলোকেও হার মানিয়েছে। কঙ্গো, জিম্বাবুয়েসহ আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশ সেখানকার মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাবে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পশ্চাৎ দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শাসকদের সীমাহীন অপকর্মের কথা কম বেশি সকলেরই জানা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় অগণিত শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে গড়া প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশও বর্তমান শাসক দলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশকে একটি গোলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে স্বয়ং সরকার এবং তার প্রধান। এমতাবস্থায় কোন দেশপ্রেমিক জনগণের পক্ষেই ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয়। সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের বলেই দেশের আপামর জনসাধারণ রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে। দেশ রক্ষার এই আন্দোলনে বর্তমান গোলাম সরকার হরতাল বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও অনেককে বাধ্য করেছে হরতালে নৈতিক সমর্থন যোগাতে।

মানুষের নিরাপত্তার অধিকার অনেক আগেই খর্ব করা হয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের তিনটি মৌলিক অধিকারও আর অবশিষ্ট নেই। শেয়ার বাজার থেকে ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেট কর্তৃক লক্ষাধিক কোটি টাকা লুট করে দুই কোটি লোকের পেটে লাথি মারার ঘটনা এখন পুরনো। এর সাথে যোগ হওয়া ক্ষমতাসীনদের নগ্ন দলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বিরোধী মত দমনে বিচার বিভাগের উপর কর্তৃত্ব আরোপ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পেটোয়া বাহিনীতে রুপান্তর, প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রে অযোগ্য এবং গুন্ডা কিছিমের লোকদের নিয়োগ, নিজস্ব ছাত্র ও যুব সংগঠন দিয়ে দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম ইত্যাদি যা গণতন্ত্রের সঠিক অনুশীলনের জন্য বড় বাধা। উপরন্তু দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি কদর রাষ্ট্রে পরিণত করতে ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ চালবাজি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। এ ছাড়াও দেশের খনিজ সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি দেশপ্রেমিক জনগণের হৃদয়ে কুঠারাঘাত করেছে। সর্বোপরি সংবিধান হতে মহান আল্লাহ তায়ালার উপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় জনগোষ্ঠীর সাথে চরম অবমাননাকর আচরণ করা হয়েছে যা সর্ব সাধারণকে বাধ্য করেছে জালিম সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে।

দেশকে যেখানে প্রত্যক্ষই ইজারা দেওয়া হচ্ছে, অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে সেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে হরতাল পালন কিংবা সরকার পতন আন্দোলন করা যথেষ্ট যুক্তি সংগত। অথচ জনগণের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে দেশবিরোধী সকল কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেও নির্লজ্জ বাধার সৃষ্টি করছে সরকার। পুলিশ বাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষ এমনকি সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করছে। পাইকারিভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে দেশরক্ষার আন্দোলনে শরীক হওয়া লোকদের, লজ্জাজনকভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে নারীদের। যেখানে আইনপ্রণেতাদের নূন্যতম নিরাপত্তা নেই, শিক্ষকদের নিরাপত্তা নেই; সেখানে সাধারণ মানুষ কতটুকু নিরাপদ সেটা বিচারের ভার জনগণের। বিশেষ করে বিরোধী দলের চিফ হুইপকে যেভাবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং নির্যাতন করা হয়েছে তাতে দেশের গন্তব্য নিয়ে যে কোন বিবেকবান মানুষই শঙ্কিত হবেন। পুলিশি বাহিনীতে কর্মরত ছাত্রলীগের গুন্ডাদের এ ধরনের অমানসিক কাজেও সরকার সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বরং আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে পুলিশি কাজে বাধা প্রদানের হাস্যকর মামলাও টুকে দেওয়া হয়েছে। মূলত গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকেই এই ধরনের গাঁজাখুরি মামলা ঋজু করা আরম্ভ হয়। আর এই ধারাবাহিকতা চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির পুতুল সরকারের আমলে।

সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার বিরুদ্ধে পুলিশী কাজে বাধা দেওয়ার যে মামলা দেওয়া হয়েছে সেটা শুধু হাস্যকরই নয় ভিত্তিহীনও বটে। এ সরকারের আমলে শুধু হরতাল কিংবা মিছিল মিটিংয়ের জন্য নয়, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লোকজনের উপরও পুলিশ দিয়ে নির্বিচারে হামলা এবং ধর পাকড় করা হয়েছে। এগুলো নিশ্চিতই প্রমাণ করে বাকশালের উত্তরসুরি আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। জনাব ফারুকের আচরণ যদি আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী হত, তাহলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া যেতে পারত। সেটা না করে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ যেভাবে লাথি, কিল, ঘুষি অতপর বস্ত্র খুলে পিটিয়ে যখম করেছে তাতে দেশের গণতন্ত্রেরই বস্ত্রহরণ করা হয়েছে। গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও পুলিশের হাতে সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ টুকটাক লাঠিপেটার স্বীকার হলেও মিস্টার ফারুকের ক্ষেত্রে এ যাবৎ কালের সকল ঘৃন্যতা অতিক্রম করা হয়েছে। বিশেষ করে দৌড়ে পালানো অবস্থায় লিফটের সামনে থেকে ধরে এনে ক্যামেরার সামনে যেভাবে চ্যাংদোলা করে টানাহেঁচড়া করা হয়েছে তাতে গণতন্ত্রের নিঃস অবস্থারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের স্বীকার বিভিন্ন লোকের লেখা কিংবা বক্তব্য শুনে অনেক সময়ই সত্য মিথ্যার দোলাচলে দোল খেয়েছি। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি যদি টিভি ক্যামেরার সামনে একজন আইনপ্রণেতাকে এভাবে কুকুরের মত নাজেহাল করা হয় তাহলে না জানি মানুষ রিমান্ডে কত নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়?

সামনের দিনগুলোতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন আন্দোলন আরও বন্ধুর হবে কোন সন্দেহ নেই। হয়ত আরও অনেক ফারুককে রক্ত দিতে হবে। আরও অনেক মাহমুদুর রহমানকে অন্যায়ের স্বীকার হতে হবে। আরও অনেক নারীকে নাজেহাল হতে হবে। আরও অনেক সিরাজুর রহমানকে কলম সন্ত্রাসের মুখোমুখি হতে হবে। আরও অনেককে অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে চার দেওয়ালে বন্দী হতে হবে। তবুও দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের প্রতি আহবান মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত থাকতে। হামলা মামলাকে তুচ্ছজ্ঞান করে দেশ রক্ষার আন্দোলনে শামিল হওয়ার অঙ্গীকার করতে। মজলুমদের আর্তনাদ কখনই বৃথা যায় নি। জেল জুলুম নির্যাতন করে কখনও দেশপ্রেম স্তব্ধ করা যায় না। সামনের দিনগুলোতেও সেটা সম্ভব হবে না। ইতিহাস সাক্ষী দেয় জালিমদের পতন অনিবার্য, সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। জালিমদের বিরুদ্ধে আরেকটি স্বাধীনতার লড়াইয়ে দেশপ্রেমের জয় হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।