শিক্ষক সমাজ: জাতির প্রত্যাশা

মিনহাজ আল হেলাল
Published : 28 July 2011, 10:05 AM
Updated : 28 July 2011, 10:05 AM

সেই স্কুল জীবন থেকেই পড়ে আসছি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না, শিক্ষক সমাজ দেশ গড়ার কারিগর, আরও কত কি। এগুলো নিয়ে রচনা, সারাংশ, ভাব সম্প্রসারন, অনুবাদসহ কত কিছু যে পড়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না। কথাগুলো অত্যন্ত সত্য কোন সন্দেহ নেই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই কথাগুলো এখন শুধু কাগজ কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। জাতিকে শিক্ষিত করতে যা করা প্রয়োজন সেগুলো আমরা কতটা করতে পারছি সেটা নিয়ে আমাদের কোন ভাবনা নেই। শিক্ষক সমাজ কি কাজ করলে দেশ গড়া সম্ভব হবে সে দিকে আমাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। আর শিক্ষকরা সেটা নিয়ে তো কোন চিন্তাই করেন না।

একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে শিক্ষকদের ভুমিকা কারোরই অস্বীকার করার উপায় নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের অবদানের কোন বিকল্প নেই। হোক না সে স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষকদের সঠিক এবং যুগোপযোগী দিক নির্দেশনার অভাবে শিক্ষার্থীরা তো বটেই সমগ্র জাতি একটা তলাহীন ঝুড়িতে পরিনত হয়েছে। প্রতিটি দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেই দেশের ছাত্রদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন। তারা রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনসহ প্রতিটি বিষয়ে সরকারের জন্য পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। দেশের যে কোন সংকটাপন্ন মুহুর্তে তারা বলিষ্ট ভুমিকা রাখতে সক্ষম হন। ব্যতিক্রম আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এখানে শিক্ষকদের দ্বারাই সংঘটিত হয় খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের অপকর্ম। শিক্ষকরা ছাত্র ছাত্রীদের হাতে বই খাতা কলমের পরিবর্তে অস্ত্র তুলে দিতে মোটেও লজ্জা বোধ করেন না। উপরন্তু তারা জড়িয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের কলঙ্কিত, দূষিত রাজনীতির সাথে। নিজের সামান্য পদ পদবীর জন্য ওনারা এখন নীতিহীন কাজ করতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না।

বিগত কয়েক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলে অত্যন্ত হতাশ হতে হয়। শিক্ষকদের কাছ থেকে জাতি কি পেয়েছে সেটা বিবেচনার দাবী রাখে। যতটা দেখেছি, যতটা শুনেছি আর যতটা জেনেছি তাতে খুব বেশি কিছু যে ওনারা দিতে পেরেছেন তা বলতে পারব না। এই সময়ে তারা আমাদের দিতে পেরেছেন কিভাবে সরকারের লেজুড়বৃত্তি করা যায়, কিভাবে পছন্দের ছাত্র সংগঠন দিয়ে বিরোধী মতের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের লাঞ্চিত করা যায়, কিভাবে নিজের সামান্য স্বার্থের জন্য দেশবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া যায়, কিভাবে নিজের দায়িত্বের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করে সেশন জটে ফেলে অগনিত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া যায়, কিভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ নষ্ট করা যায়, কিভাবে পছন্দের অথবা নিজদলের ছাত্র ছাত্রীদের বেশি নম্বর দিয়ে উচ্চতর শ্রেনী পাইয়ে দেওয়া যায়, কিভাবে যোগ্য এবং মেধাবীদের বাদ অযোগ্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় ইত্যাদি শিক্ষা। ওনারা ছাত্র ছাত্রীদেরকে সত্যিকারের শিক্ষা দিতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। আর এই কয়েক দশকের অপকর্মের কুফল এখন মারাত্মকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে দেশের প্রতিটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন শিক্ষার পরিবেশ হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। এর দায়ভার শিক্ষক সমাজ এড়াবেন কিভাবে?

সময় হয়েছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনগুলোকে সুন্দর করে নিজেদের মত করে সাজিয়ে নেওয়ার। আর এরজন্য শিক্ষকদের কাছে জাতির প্রত্যাশার অন্ত নেই। সমগ্র জাতি চেয়ে আছে এখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায়। জাতি শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন ভুমিকা আশা করে যেটা ধর্ম বরণ নির্বিশেষে সবার জন্য একটা শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে। এজন্য শিক্ষকদের হতে হবে নিবেদিত প্রান দেশপ্রেমিক। দেশের স্বার্থের জন্য তারা কোন রক্তচক্ষুকে ভয় পাবেন না। নীতির প্রশ্নে তারা হবেন আপোসহীন। তাদের চরিত্র হবে এমন যেটা নিয়ে কেউ কোন উচ্চ বাক্য করতে না পারে। তারা হবেন স্বার্থহীন, সত্য এবং ন্যায়পরায়ণ। তাদের চোখে সকল ছাত্র ছাত্রীরা হবে সমান। তারা বাংলাদেশের স্বার্থপর রাজনীতির নগ্ন চাটুকারীতায় মগ্ন হবেন না। রাজনীতির যতটুকু দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয় ততটুকু বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবেন। আগামী প্রজন্মকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে তারা অবিভাবকের দায়িত্ব পালন করবেন। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ রক্ষায় তারা হবেন সদা তৎপর। শিক্ষকদের চারিত্রিক এই পরিবর্তনগুলো সাধিত হলেই কেবল আগামীদিনের জন্য একটি সুন্দর প্রজন্ম রেখে যাওয়া সম্ভব।