স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও স্বাধীনতা রক্ষার শক্তি

মিনহাজ আল হেলাল
Published : 7 August 2011, 05:08 AM
Updated : 7 August 2011, 05:08 AM

স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের একক কৃতিত্ব দাবিদার বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা গত ৪০ বছর ধরে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর বিপক্ষের শক্তির ধুয়া তুলে ভোটের রাজনীতিতে জনগনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত। স্রেফ ক্ষমতায় আরোহন করতে এবং কখনও কখনও ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জনসাধারণকে ধোঁকায় ফেলতেই তাদের এই অপচেষ্টা। আশ্চর্য এবং বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে এই গোষ্ঠী শুধুমাত্র সত্য কথা তথা তাদের বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মত লোককেও স্বাধীনতা বিরোধী বলতে পিছপা হয় না। অন্যদের কথা বলাই বাহুল্য। হালের চিত্র দেখে প্রতিটি সুস্থ বিবেকবান লোকের কাছেই স্পস্ট শুধুমাত্র বিশেষ এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধীতাকারীদের অনেকেই এখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে। অন্যদিকে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করা সত্ত্বেও বিরোধী মতের হওয়ায় এই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাদেরকে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে কটুক্তি করা হয়।

হাই স্কুলে পড়েছিলাম, "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন"। বাচ্চা ছেলে মেয়েদের এত কঠিন এবং অর্থবোধক কথা পড়ানোর যুক্তি আমার কাছে অস্পস্ট। তবে শুধু গাইড বইয়ের সরনাপন্ন না হয়ে ছাত্র ছাত্রীদের মগজে স্বাধীনতা রক্ষার বাস্তব সম্মত চ্যালেঞ্জগুলো ঢুকিয়ে দিতে পারলে সেটা দেশের জন্য কল্যাণকর হত বলেই আমার ধারনা। স্কুলে যখন এটা পড়েছিলাম শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশ করার উদ্দেশ্য নিয়েই পড়েছিলাম। এটা যে বড্ড বাস্তব একটি কথা সেটা ঘূণাক্ষরেও কল্পনায় আসেনি। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সত্য সত্যই বুঝতে পারছি স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন কত কঠিন। স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে, কিন্তু এ আন্দোলনের কোন সমাপ্তি নেই। সাম্রাজ্যবাদীদের কুনজরে পতিত আমাদের মত গরীব দেশের মানুষের প্রতিনিয়তই করতে হয় স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন। আর সেটা যদি হয় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির দাবিদারদের বিপক্ষে, তাহলেতো দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনগোষ্ঠীর পরীক্ষার অন্ত নেই।

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন একটি ইতিহাস। এই ইতিহাসে আমার আগ্রহ রয়েছে। স্বাধীনতার সত্য ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে অনুপ্রাণিত হই। যে সকল মহা মানব মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছেন তাদের প্রতি রয়েছে আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা। ৪০ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর বিপক্ষের শক্তির শ্লোগান এখন একেবারেই মৃত। বরং "স্বাধীনতা রক্ষার শক্তি আর স্বাধীনতা বিকিয়ে দেওয়ার শক্তি" হওয়া উচিৎ নতুন শ্লোগান। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী কোন বাংলাদেশীর জন্যই "স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি কিংবা বিপক্ষের শক্তি" কথাটি প্রযোজ্য নয়। রাজনৈতিক এই ক্যাচাল ১৯৭১ সালের পরে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিবর্গকে জড়িত করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নয়, স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামেই বেশি আগ্রহ। অগনিত শহীদদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করাই এখন মুক্তিকামী মানুষের প্রধান চাওয়া।

পরাধীনতার কবল থেকে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষদের মুক্তির যে মহান উদ্দেশ্য ও আকাঙ্খা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, আজ সে আশা আকাশ কুসুম কল্পনা। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, নিরাপত্তা তো শিকেয় উঠেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের ভুখণ্ড অন্যের হাতে তুলে দিতেও কার্পণ্য করে না বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার। সীমান্তে পশুর মত মানুষ হত্যার কথা না হয় বাদই দিলাম, লাশ ফেরত পাওয়াটাই এখন পরম পাওয়া হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের জন্য। মনে হয় যেন লাশগুলো ফেরত দিয়ে কত বড় অনুগ্রহ না করল বন্ধুরাষ্ট্র (?)। বন্ধু রাষ্ট্রের (?) পিশাচ বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের চাষীদের চাষ করা ফসল কেটে নেওয়া, গবাদি পশু ধরে নিয়ে যাওয়ার কাহিনী অনেক পুরনো, এখন চলছে ২৯ টাকার চাল ৪০ টাকায় গছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা। শুধু সীমান্তে নয় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করারও অপচেষ্টায় লিপ্ত পার্শ্ববর্তী দেশ। ফলশ্রুতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানী আশংকাজনকহারে হ্রাস পেয়েছে। আর আমার দেশের গোলাম সরকার রয়েছে বন্ধুত্ব জোরদার করায় ব্যস্ত। তাদের দেশপ্রেম বিচারের ভার জনগনের উপরেই ছেড়ে দিলাম।

বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব একেবারেই নিরাপদ নয়। তারা দেশের খেয়ে, দেশের পরে ভারত উন্নয়নে ব্যস্ত। বাংলাদেশের কথা একটা বললে ভারতের কথা বলে তিনটা। শুধু ভারত তোষামোদেই ক্ষ্যান্ত হয় নি সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির প্রেতাত্মা বর্তমান সরকার, দেশের অভ্যন্তরে শুরু করেছে সীমাহীন দমন নিপীড়ন। সারা দেশে চলছে "ধর মার খাও" এর রাজত্ব। জনসাধারণকেও নিয়ে চরম মশকরায় লিপ্ত হয়েছে মহাজোট সরকার। এই সরকারের নিকট সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, ধর্ষন ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কারও উচ্চাশা নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রনে যেখানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বানিজ্য মন্ত্রী সাধারন মানুষকে পরামর্শ দেন কম খাওয়ার। কত বড় নির্লজ্জ এবং নিমকহারাম হলে এমন কথা বলা যায় সেই বিতর্কে যাওয়া সময়ের অপচয়। ভোটের আগে দশ টাকায় চাল খাওয়ার ওয়াদা আর ভোটের পরে কম খাওয়ার আদেশ। চমৎকার! কুশাসনের একটা সীমা পরিসীমা আছে? প্রশ্ন জাগে এটাই কি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দেশ্য? মানুষকে চাহিদামাফিক দুমুঠো অন্ন যোগানো কি মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল না? সাধারন মানুষের কোন অধিকার এখানে নেই। উপরন্তু আইন আদালত ধ্বংস করে স্পষ্টতই দেশকে একটি নৈরাজ্যকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার।

পূর্বপুরুষেরা স্বাধীনতা আন্দোলন করেছে, আর আমাদের সামনে এসেছে স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন। এই আন্দোলন বন্ধুর হবে কোন সন্দেহ নেই। এই আন্দোলনে মুক্তিকামী মানুষদের অনেক নির্যাতন কষ্ট সহ্য করতে হবে। সময় হয়েছে আরেকটি শপথ নেওয়ার। সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার, যেই মুক্তি সংগ্রামের জন্য প্রান বিসর্জন দিয়েছেন অগনিত বীর সেনানী। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরোধী বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবী করা এখন মানুষের কাছে অনেকটাই খোলাসা। একের পর এক দেশবিরোধী কাজ করে, দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়ে, সর্বোপরি সোনার বাংলাদেশকে কারাগারে পরিনত করে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবী করায় জনমানুষের কাছে এদের মুখোশ ভালোভাবেই উম্মোচিত হয়েছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের উপর সাধারন মানুষের নূন্যতম আস্থা নেই। প্রিয় বাংলাদেশকে শান্তিময় করে গড়ে তুলতে এদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের সোচ্চার হওয়া সময়ের দাবী। দেশের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে শামিল হওয়া প্রতিটি মানুষের ঈমানী দ্বায়িত্ব।