আন্তঃপলিটেকনিক ‘স্কিলস কম্পিটিশন’ নাকি ‘বৈষম্য কম্পিটিশন’?

মিনহাজুর রহমান
Published : 4 Dec 2017, 01:17 AM
Updated : 4 Dec 2017, 01:17 AM

পলিটেকনিকে প্রচলিত স্কিলস কম্পিটিশন নিয়ে লিখব লিখব করে এক বছর পার হয়ে গেল। তারপরও কিছু একটি লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় লিখছি। বর্তমানে পলিটেকনিকে যে পদ্ধতিতে স্কিলস কম্পিটিশন হয় তা চালের সাথে চিনির তুলনার মত। কেমন তুলনা, বলছি। বর্তমান পদ্ধতিতে একটি পলিটেকনিক থেকে ৭-১০ টি ডিপার্টমেন্ট একসাথে অংশগ্রহণ করে এবং নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে তিনটি দল পরবর্তী পর্বে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। হয়ত এই তিন দল একই ডিপার্টমেন্টেরও হয়ে যায়। আর প্রশ্নটা সেখানেই, আমি তাই প্রথমেই বলছি চালের সাথে চিনির তুলনা। দুইটাই আমাদের জন্য প্রয়োজন কিন্ত ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে।

এই প্রতিযোগিতাতে কম্পিউটার এর প্রজেক্ট এর সাথে মেকানিক্যাল এর প্রজেক্ট এর যদি তুলনা করা হয় তবে কি ঘটবে? মেকানিক্যাল জয়ী হবে। কারণ মেকানিক্যাল এর একটা ফিজিক্যাল স্টাকচার আছে যা কম্পিউটার এর নাই। কম্পিউটার এর সাথে যদি ইলেকট্রনিক্স এর তুলনা হয় তবে কি হবে? ইলেক্ট্রনিক্স জয়ী হবে কারণটা একই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কম্পিউটার এর সাথে কি মেকানিক্যাল এর তুলনা হয়? বা ইলেকট্রনিক্স এর সাথে কম্পিউটার এর? আমি বলব, না। কারণ প্রত্যোকে প্রত্যোকের অবস্থান থেকে সেরা এবং এসব উদ্ভাবনী প্রকল্পের ব্যাবহারও ভিন্ন।

মেকানিক্যাল এর তুলনা তো মেকানিক্যাল এর হয়, তারা তাদের মাঝেই কম্পিটিশন করবে। কম্পিউটারের তুলনা কম্পিউটার এর সাথে হয়, কারণ তারাও নিজেদের মাঝে কম্পিটিশন করবে। কারণ তাদের ক্ষেত্র-উদ্দেশ্য ভিন্ন। তাহলে কেন বর্তমান পদ্ধতিতে এত বৈষম্য, কেন প্রত্যোকে নিজের অবস্থানের সেরা প্রজেক্ট বানিয়েও গুরুত্ব পাচ্ছেনা? তার উত্তর একমাত্র কর্তা ব্যক্তিরা দিতে পারবেন। আমরা তো শুধুমাত্র পরিস্থিতির স্বীকার।

গত তিন বছরে ৩টি স্কিলস কম্পিটিশন দেখেছি। প্রতিবারই দেখলাম ইলেক্ট্রনিক্স রিলেটেড প্রজেক্ট ছাড়া কোন প্রজেক্ট এর গুরুত্ব নাই। প্রথমবার কম্পিউটারের বড় ভাইয়েরা ভালো তিনটা প্রজেক্ট নিয়ে কম্পিটিশন এ গেছেন। কিন্ত ওনাদের কোন গুরুত্বও দেখলাম না। এরপর আমরা নিজেরাই স্কিল কম্পিটিশন এর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। গত বছর কম্পিউটার থেকে যখন রোবট গেল তখন একদম জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। ব্যাস হয়ে গেল, এখন আমাদেরও ইলেক্ট্রনিক্স রিলেটেড প্রজেক্ট বানাতে হবে যদি স্কিলস কম্পিটিশন এর সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে চাই। কারণ, না হলে তো আমাদের নামই উচ্চারণ হবে না কম্পিটিশন এ। তাহলে আমরা যারা কম্পিউটার রিলেটেড প্রজেক্ট নিয়ে যাব বা যেতে চাই তাদের ভবিষ্যত আগে থেকেই লেখা থাকে।

** [এটি শুধু পলিটেকনিক এর স্কিলস কম্পিটিশন এর ক্ষেত্রে। অন্য কম্পিটিশন গুলোতে এপ রিলেটেড প্রজেক্ট এর আলাদা গুরুত্ব থাকে।]

একই অবস্থা হয় অন্যদের ক্ষেত্রেও, বিশেষ করে দেখলাম গার্মেন্টস, এনভায়রমেন্ট সহ বেশ কিছু ডিপার্টমেন্ট এর প্রজেক্ট এর ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বই থাকেনা। কিন্ত তাদের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে তারা অনেক ভালো একটা প্রজেক্ট করেছে। কিন্ত এসব প্রজেক্ট তো আর কম্পিউটার বা ইলেক্ট্রনিক্স এর সাথে তুলনা করে পারবেনা।

এখন কথা হল স্কিলস কম্পিটিশন করে অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট গুলোকে ছোট করার কোন মানে হয়? আমি তো কোন মানে খুঁজে পাইনা। কর্তৃপক্ষ চাইলেই পারে এই বৈষম্য দূর করতে। প্রতি ডিপার্টমেন্ট থেকে আলাদা আলাদা টপ নির্বাচন করতে।

আমি জানিনা আমার এই লেখা কর্তৃপক্ষ এর চোখে পড়বে কিনা। যদি পড়ে তবে একটাই অনুরোধ থাকবে প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট কে আলাদা আলাদা গুরত্ব দিয়ে আলাদা টপ নির্বাচন করুন। তাহলেই বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রেই সেরাদের পাবে। কারণ দেশ এগোতে হলে সবাইকে নিয়ে এগোতে হবে।

লেখক –
মিনহাজুর রহমান
কম্পিউটার টেকনোলজি
৭ম পর্ব
চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট