শুধু খুতবা নয়, সমগ্র ব্যবস্থাটাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

তাহের আলমাহদী
Published : 18 July 2016, 03:39 AM
Updated : 18 July 2016, 03:39 AM

ধর্মীয় সহনশীলতা ও সৌহার্দ্যের দেশ বাংলাদেশ৷ এর উল্টোদিকও আমরা দেখেছি৷ ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার আগে সুপরিকল্পিতভাবে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ সে ধারা এখনও বজায় রেখেছে পাকিস্তানি ও ভারতীয় কিছুু উগ্রপন্থী দল৷ দু'চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও আমরা বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালো আছি৷

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা মুসলমানদের শতধা বিভক্তি৷ এর জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা৷ এমন আজগুবী ব্যবস্থা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই৷

সাধারণ শিক্ষায় যেমন ধর্ম অবহেলিত, ধর্মীয় শিক্ষায়ও জাগতিক জ্ঞান অবহেলিত৷ বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা দু'ধারায় বিভক্ত৷ আলিয়া ও কাওমী৷ আবার কাওমী ধারার উপধারার অভাব নেই৷ এই জন্য আলেমদের মধ্যে মত ও পথের ছড়াছড়ি৷

সাধারণ মানুষের উপর আলেমদের প্রভাবের কারণে তারাও মত-পথের বিভ্রান্তিতে দিশেহারা৷

গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনায়, মাদ্রাসা শিক্ষিত সন্ত্রাসীদের চেয়ে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত সন্ত্রাসীদের অংশগ্রহন নতুন চিন্তার কারণ হয়েছে৷ এটা মোটেই অবহেলার বিষয় নয়৷

দেশের সকল মানুষ ধর্মপ্রাণ হয়ে যাক, তা চাইলেও সম্ভব নয়, প্রয়োজনীয়ও নয়৷ তবে, বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতে সকল মানুষকে ধর্মের স্বরূপ জানা জরুরী৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী ছাত্রটি কেন হঠাৎ জঙ্গী হয়ে গেছে এই কারণ অনুসন্ধান করা দরকার৷ প্যারাসিটামল তিন বেলা সেবন করলেই সকল রোগ নিরাময় হয় না, রোগ চিহ্নিত করেই ঔষধ প্রেসক্রাইব করতে হয়৷ রোগের কারণ না জানলে ঔষধ আবিষ্কারও সম্ভব হয় না৷

আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এই ছাত্রগুলোর যদি ইসলাম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকতো তবে তারা মানুষ খুন করে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো না৷ ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের ব্যাপকতা অশিক্ষিত পাকিস্তান ও আফ্রিকার দেশগুলোতে৷ এই থেকে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷

গুলশান ও শোলাকিয়ার সন্ত্রাসী ঘটনার পর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জুমার খুতবাহ নিয়ন্ত্রণ করার৷ সিদ্ধান্তটি প্রশংসা যোগ্য৷ জুমার নামাযে ওয়াজের নামে ঈমাম সাহেবদের জ্ঞাত ও অজ্ঞাতে ধর্মীয় উস্কানী দিতে দেখেছি৷ অনেক ক্ষেত্রে মুসাল্লিদের উত্তেজিত করে রাখতে না পারলে চাকরীও থাকে না ঈমামদের৷ বেশির ভাগ মসজিদে স্বল্প বেতনে অল্পশিক্ষিত লোকদের ঈমাম নিয়োগ করা হয়, যাদের প্রকৃতার্থে ধর্মীয় জ্ঞানের খুবই অভাব৷ আবার কিছু মসজিদে বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের ঈমাম বানানো হয়, যারা উচ্চশিক্ষিত হলেও তাদের কার্যকলাপ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়৷ এই বিষয়টি আমরা যেমন জানি, সরকারেরও অজ্ঞাত নয়৷

এইজন্য শুধু খুতবা নিয়ন্ত্রণ করলেই হবে না, আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে৷ ইসলামী বিধানমতে মসজিদ সমূহ পরিচালনা করতে হবে৷ সকল মসজিদে জুমার নামায পড়ানো হবে না, বরং সরকার নির্ধারিত মসজিদেই জুমা হবে এবং সরকার নিয়োজিত ঈমামই সে নামায পরিচালনা করবেন৷ খুতবাটি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লিখে দিবে৷ ইসলামী খেলাফত বা ইসলামী আইনে পরিচালিত রাষ্ট্রসমূহে এই ভাবেই জুম্মার নামায নিয়ন্ত্রিত হয়৷

এই পদক্ষেপ নিলে সর্বপ্রথম আলেমদের নিকট হতেই বাধা আসবে৷ আর তাদের প্ররোচনায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবে, আন্দোলনে নামবে৷ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ শক্তি দিয়ে হবে না, প্রজ্ঞা দিয়ে করতে হবে৷

এইজন্য আগে প্রভাবশালী আলেমদের নিয়েই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে৷ আলেমদের একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে৷ সবাইকে সরকার দলীয় হতে হবে, তা নয়৷ তবে তাদেরকে নিয়ে কমিটি, সভা-সমাবেশ করা যেতে পারে৷ রাজনৈতিক প্রভাব এখানে কোন মূল্য দিবে না৷ বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রধান, মসজিদের ঈমাম, ওয়াজ ফেরি করা বক্তা সকলকেই এই সকল কমিটিতে রাখতে হবে৷

সরকারকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, দলীয় কোন প্রভাব এই সব কমিটির উপর যেন না পড়ে৷ তাহলে উল্টো প্রোপাগান্ডায় উদ্দেশ্যই পণ্ড হয়ে যাবে৷