রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "হাওয়া খাইলে পেট ভরে না, আহার করিলে পেট ভরে, কিন্তু আহারটি রীতিমত হজম করিবার জন্য হাওয়া খাওয়ার দরকার।" জাতি গঠনে খেলাধুলাও এই হাওয়ার মতো৷ কিন্তু ফেসবুকে আমাদের এপ্লাস জেনারেশনের খেলাধুলা নিয়ে মাতামাতি দেখে মনে হয়, আমরা খাবার ছেড়ে হাওয়া খেয়েই জীবন ধারনের চেষ্টা করে যাচ্ছি৷
চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ তারা যুক্তি দেখিয়েছিল, এত শিক্ষিত লোকের কাজ দিবো কোথা হতে! সুতরাং তারা যুবসমাজকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত না করে ভোকেশনাল ট্রেনিং দিতে শুরু করেছিল৷ একশ বছর আগের সেই সিদ্ধান্তের কারণে আজ চৈনিকপণ্য বিশ্ববাজার দখল করে আছে৷
চীনের মতো আর কোন দেশে এতো শিল্প-উদ্যোক্তা নেই৷ চীনে তৈরি হয় না এমন জিনিস আবিষ্কৃত হয়নি এখনো৷
চৈনিকপণ্যের ক্ষণস্থায়ীত্বের দূর্ণাম আছে, কিন্তু তারা উপযুক্তমূল্য পেলে শতবছর নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারবে এমন পণ্যও তৈরি করে দিতে পারে৷
এই রকম একটা উদ্যোগ আমাদের দেশে কেন নেওয়া হয় না? একজন ক্রিকেটার একম্যাচ ভালো খেললে তাকে যেভাবে সরকারি বেসরকারিভাবে উপহার দেওয়া হয়, তেমনি কোন উদ্যোক্তাকে কেন দেওয়া হয় না?
একসময় আমাদের জিঞ্জিরার ওয়ার্কশফগুলোতে সকল প্রয়োজনীয় পণ্য নকল করতে দেখতাম৷ তাদের নকলবাজিকে যদি প্রমোট করে নতুন পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতো তাহলে ঘরে ঘরে কারখানা তৈরি করা অসম্ভব ছিল না৷ তাহলে আজ বিশ্ববাজারে আমাদেরও দুচারটা পণ্য পাওয়া যেতো৷
বাঙালি যেদিকে ঝুঁক আসে সেদিকে পুরো হেলে পড়ে, এটা চারিত্রিক দূর্বলতা, এই দূর্বলতা পরিত্যাগ করতে হবে৷ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি কাপড়ের চাহিদা দেখে যেমন হাজার হাজার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গড়ে উঠলো, তেমনি অন্যান্যপণ্যেরও বিশ্ববাজারে চাহিদা সৃষ্টি করা যেতো৷ সে উদ্যোগ কেউ নেয়নি৷
পাটের বস্তার বৈশ্বিক চাহিদা না থাকায় আদমজী জুট মিল বন্ধ করা হলো, অথচ সেখানে বস্তা তৈরি বন্ধ করে কার্পেট তৈরি করলে কয়েক হাজার লোক বেকার হতো না৷ বিশ্ববাজারে কার্পেটের চাহিদা রয়েছে৷
বড় শিল্পকারখানার চেয়ে ক্ষুদ্র শিল্প বেশি কার্যকর হতে পারে৷ বিসিকের নীতি ও কর্মপদ্ধতির সংস্কার করে এটাকে কার্যকর করা যেতে পারতো৷ বিসিক ক্ষুদ্রশিল্পের প্রমোটর হলেও বিসিকের শিল্পনগরীগুলো বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দখলে চলে গেছে, ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিকশিত হতে পারেনি৷
বাংলাদেশি পণ্যকে বিশ্ববাজারে পরিচিত করার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না৷ এমনকি দেশের অভ্যন্তরেরও দেশিয় পণ্যের চেয়ে বিদেশিপণ্যের চাহিদা বেশি৷ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো দেশে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে পাঠায় না, বরং বিদেশিপণ্য দেশে এনে বিক্রি করে৷ এতে দেশে যেমন কর্মসংস্থান হয় না, তেমনি দেশের বাজারও বিদেশি পণ্যের দখলে চলে যায়৷
দেশিয় পণ্যকে দেশের বাজারে পরিচিত ও জনপ্রিয় করতে হবে৷ বিদেশে দেশিয় পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে৷
যুবসমাজকে খেলাধুলা, নাটক, সিনেমা, সাহিত্য থেকে ফিরিয়ে পণ্য উৎপাদনমুখী করতে হবে৷ খেলোয়ার, অভিনেতা বা কবি হওয়ার চেয়ে উদ্যোক্তা হতে বেশি উৎসাহিত করতে হবে৷ বিসিক শিল্পনগরীকে কার্যকরভাবে ক্ষুদ্রশিল্পের জন্য ছেড়ে দিতে হবে৷ প্রতিটি গৃহকে পরিণত করতে হবে একেকটা শিল্পকারখানায়৷
সুদিন নিশ্চিত আসবে৷ মেধাহীন, লোভী, দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিকদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে৷