মেঘ-পাহাড়ের দেশ আমাদের এই মায়াবতী শহর সুনামগঞ্জ। জেলার উত্তর দিক ঘেঁষে থাকা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় দেখে মনে হয় যেন নিজ হাতে আগলে রেখেছে সুনামগঞ্জকে। জ্যোৎস্নার শহর নামে অনেকের কাছে পরিচিত তিন হাজার ৭৪৭ কিলোমিটারের ছোট্ট এই শহরটি। আয়তনে শহর ছোট হলেও এখানকার মানুষের মন আকাশ সমান। সুনামগঞ্জ না আসলে কেউ এ শহরের মানুষ সম্পর্কে সঠিক কথাটি বলতে পারবে না।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ বাস রয়েছে আমাদের সুনামগঞ্জে। সবার মধ্যে মনের একটি মিল পরিলক্ষিত হয় এখানে। অল্পে তুষ্ট এই শহরের মানুষগুলো অতি সাধারণ এবং সুখে-শান্তিতে দিন পার করে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এখানকার মানুষের অবদান অসীম। সংস্কৃতিপ্রেমী এই শহরের মানুষ সুর নিয়ে খেলা করে। আনন্দ কিংবা ক্লান্তি ক্ষণে মনের প্রশান্তির আশায় সুরের ভেলায় ভেসে যায় মানুষগুলো।
মাছ ধরে জীবন চলে টাঙ্গুয়ার হাওরবাসীদের
সুনামগঞ্জ 'হাওর কন্যা' হিসেবে সুপরিচিত। অন্যতম টাঙ্গুয়ার হাওর, যেখানের সৌন্দর্য দেখতে অনেক পর্যটক আসেন প্রতিবছর। কাছ থেকে দেখা যায় মেঘালয় পর্বতমালা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রতি বছর ভিড় জমান পর্যটকরা। পর্যটনের অন্যতম জায়গাগুলো হল- হাসন রাজার বাড়ি, নারায়নতলার সীমান্ত হাট, বাঁশতলা শহীদ মিনার, ডলুরা স্মৃতিসৌধ, সুখাইর জমিদার বাড়ি, গৌরারং জমিদার বাড়ি প্রভৃতি স্থান।
বিস্তীর্ণ টাঙ্গুয়ার হাওরের জলের সীমানার ওপাড়ে ভারতের পাহাড়
ঐতিহ্যগুলো সযত্নে অটুট রেখেছেন জেলার অধিবাসীরা। প্রতি বছর নৌকা বাইচ, কাবাডি, হা-ডু-ডু, কুস্তি খেলা, গরুর লড়াই, ধামাইল নৃত্য, নবান্নের পিঠা উৎসব, বৈশাখের আমেজ কিছুই যেন বাদ থাকে না আমাদের সুনামগঞ্জে।
সুনামগঞ্জে জন্ম নিয়েছেন অনেক গুণীজন। মরমি কবি হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিম, রাধারমণ দত্ত, এমএজি ওসমানী, ডা. সাদিক, সৈয়দ শাহনূর, দুর্বিন শাহ, ধ্রুব এষ সহ আরও নাম না জানা অনেক গুণীজনের জন্ম এই মাটিতে।
জল এবং জীবনের গভীর সম্পর্ক এখানে। পাহাড়, নীল আকাশ ও নদী যেন এক সাথে মিলেমিশে আছে হাজার বছর ধরে। এসব সৌন্দর্য দেখার সুযোগ রয়েছে একমাত্র এখানেই। সবুজের সমাহার দেখলে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়, মনে হয় যেন সবুজের গালিচা।
সুনামগঞ্জের মানুষ ভীষণ অতিথি প্রিয়। সবার সাথে রয়েছে সুসম্পর্ক। সুনামগঞ্জের ধান, পাথর ও মৎস সম্পর্কে সারা দেশের জানা। 'মাছ-পাথর-ধান, সুনামগঞ্জের প্রাণ'- হিসেবে খ্যাত এই তিনটি খাতের বিশাল অংশ সারা দেশে যায় বিভিন্ন ভাবে।
আমাদের শহরের মানুষগুলো অনেক ভালো। এর প্রমাণও মিলে যথারীতি। অনেক সরকারি চাকরিজীবী আছেন এ শহরে, যারা আমাদের শহরের মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এই স্বপ্নের শহরে।