দেশ বাঁচানোর জন্য, ধন্যবাদ

মির্জা লিও
Published : 8 Oct 2012, 06:58 AM
Updated : 8 Oct 2012, 06:58 AM

কাজী নজরুল বলেছেন, তোমার যতটুকু শক্তি আছে প্রয়োগ কর , দেশের কাছে , খোদার কাছে অসংকোচে দাঁড়াইবার পাথেয় সঞ্চয় কর , তোমার বিবেকের কাছে তুমি অগাধ শান্তি পাইবে ।
জানি না আমরা কয়জন বিবেকের কাঠগড়ায় নিজেকে হাজির করি । অনেকেই হয়ত বিবেক আছে সেটা ভুলে গেছি ।

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি । তখন আমি স্ট্যান্ডার্ড টু – থ্রি'তে পড়ি । ছোট জেলা আমাদের , পঞ্চগড় । বুক চিরে ছোট নদী করতোয়া বয়ে গেছে । শহরে প্রতিবছর মেলা বসতো , আর মেলায় আসতো সার্কাস । একটা সার্কাস প্রায় আসত , নাম দি লায়ন সার্কাস । শহরের শিশু – কিশোরদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইত । বাঘ , হাতি , সিংহ , ঘোড়া , বাঁদর সহ কত প্রাণির খেলা দেখাত তারা । জোকাররা ছিলো বিনোদনের কেন্দ্রে । ধুলোবালির নগরজীবনে সেগুলো আজ ম্লান স্মৃতি ।

সার্কাসের হাতির মাহুত বেরুত হাতি নিয়ে পঞ্চগড় শহরে । কলাগাছ হাতির প্রিয় খাদ্য । কলাগাছ খুঁজে বের করা হাতির কাজ । রাস্তায় হাতি তার সুবৃহৎ শুড় দিয়ে সালাম দিত পথচারীদের । তখন হাতি দেখার জন্য আমরা সকল শিশু – কিশোররা বেরিয়ে আসতাম পাড়া থেকে শহরের প্রধান সড়কে । পাড়ার কুকুরগুলোও ছুটতো প্রধান সড়কের দিকে । হঠাত হাতি দেখে কুকুর গুলো পাড়ার মোড় থেকে চিৎকার জুড়ে দিতো । কুকুরের সেই চিৎকার থেকে জীবনের কঠিন একটি শিক্ষা আমি পেয়েছি । আর তা হলো পাড়ার কুকুরের চিতকারে হাতির বড়ত্ব এতটুকু কমে না । বরং কুকুরের অসহায়ত্ব গুঢ় ভাবে প্রকাশ পায় । ডঃ ইউনুস, ডঃ কামাল , অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ সহ অনেকেই এই দেশের হাতি । ডঃ ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তি বিদেশে আমার বুকের পাঁঠা দশ ইঞ্চি ফুলিয়ে দিয়েছিল ।তখন আমি সেই দেশের সকল জাতীয় দৈনিকে হেড লাইনে বাংলাদেশের নাম দেখেছি । আমার ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলের ২০টিরও বেশী দেশের ছাত্রদের আমরা মিষ্টি খাইয়েছিলাম । সেই রকম আনন্দের উপলক্ষ ক্রিকেটে জয় ছাড়া বাঙালি রা কমই পায় । আমি তখন একবারও বলিনি ডঃ ইউনুস নোবেল জিতেছে, আমি বলতাম বাংলাদেশ নোবেল জিতেছে । ভয় হয় নোবেল কেউ যদি বাংলার মাটিতে আবার জিতে । সে ফিরবে তো দেশে । আমরা পাঁচ বছরের জন্য দেশ টাকে আমানত হিসেবে দেই তাদের হাতে । আমরা সঠিক ভাবে কাওকেই বিদায় দিতে পারি নি । ট্রাজেডিতে ভরা আমাদের ইতিহাস । আমরা আমাদের জাতির পিতাকেও হত্যা করেছি । কোথায় যেন বারবার মীরজাফর রা ফিরে ফিরে আসে এই বাংলায়। চাটুকাররা ভুল বুঝায় মনদরে বসা কর্তা ব্যক্তিদের ।

আমরা ধন্যবাদ দিতে ভুলে যাই এই বাংলার হিরোদের । আমাদের হিরো সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান আর রবিনহুড নয় । বাংলার হিরো তার আবহমান সময়ের তরুন , কৃষক , প্রবাসী শ্রমিক , পোশাক শ্রমিকরা । তাদের টাকায় এই দেশ চলে । কোনদিন মন থেকে সম্মানে তাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন । ইংরেজরা থ্যাংকস দিতে পিছপা হয়না কখনও । ধন্যবাদ শব্দটির ব্যবহার টি মনে আমাদের বাড়াতে হবে । উপযুক্ত জায়গায় ধন্যবাদ দেওয়া মনে হয় উচিত । তাই বলে চোর বাটপার দের ধন্যবাদ দিয়ে দেশপ্রেমিকের ঝান্ডা হাতে তুলে দিলে ক্ষতি হবে বৈকি ।

দেশ চলে যাদের ঘামে তারা কি পায় তাদের পুরো প্রাপ্য ?? জানি না । কিন্তু তোমাদের শ্রমের মুল্য ও সম্মান দিতে পারিনি । যেই দেশের জন্য তোমাদের নিরন্তন পরিশ্রম সেই দেশের সম্পদ লুন্ঠন হয় সকল সময় । লুন্ঠনকারীরা বিভিন্ন পরিচয়ে আসে আমাদের সামনে কিন্তু উদ্দেশ্য তাদের সবারই এক ও অভিন্ন । শুধুই লুন্ঠন ।

সকল লুন্ঠনকারীদের ঘৃনাজ্ঞাপন পুর্বক আজ বলতে চাই –
দেশ বাঁচানোর জন্য
কৃষক ভাই , ধন্যবাদ ।
গার্মেন্টস শ্রমিক ভাই/ বোনেরা , ধন্যবাদ ।
প্রবাসী ভাই/ বোনেরা , ধন্যবাদ ।