ভালোবাসা: কেন্দ্রে ঘোরে লাভ-ক্ষতি

এডওয়ার্ড মিঠু
Published : 9 March 2015, 05:50 PM
Updated : 9 March 2015, 05:50 PM

যাকে এতোদিন বুকের মধ্যে আগলে রাখতো। ঘন্টার পর ঘন্টা যার জন্য অপেক্ষা করতো, যার জন্য বাবা-মায়ের কথা কথাই মনে হয়নি, তাকে খুন করে কেন? এটাই আমার লেখার বিষয়। ভালোবাসার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আমি যাব না। প্রেমে বিচ্ছেদ হলে একজন হতাশায় ডোবে আরেকজন আনন্দে ভাসে এটাই নিয়ম। কেন একজন প্রেমিক বা প্রেমিকা প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে যায়? ব্যাপক চিন্তাভাবনা করলাম। তথ্য সংগ্রহের জন্য মাঠ পর্যায়ে (পার্কে পার্কে ঘুরে) প্রেমে বিফল হওয়া বেশ কিছু ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কথা বললাম। অনেকেই বিচ্ছেদের পর তাদের কি হাল হয়েছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে উত্তর পাওয়া গেলো যে, ভালোবাসার কারণে নয় নিছক লোকসান পোষাতেই এই প্রতিশোধ। কেমন?

 প্রেমে পড়লে একজন আরেকজনকে সময় দেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলে। এমন অসংখ্য লোক পাওয়া যাবে, যারা সারারাত ফোনে কথা বলেছে। রাতে কথা বলার সময় মনে করেছে এই রাত যদি হাজার রাতের সমান হতো ভালো হতো। রাত ফুরিয়ে গেছে কিন্তু কথা ফুরায়নি এমন হয়েছে অসংখ্যবার। এমন ছয় মাস কথা বলার পর প্রেমিক অথবা প্রেমিকা যদি চলে যায়। তাহলে একজন প্রেমিক বা প্রেমিকা তার এই সময়ের লোকসানে জন্য কিছুদিন আক্ষেপ করবেন। সেক্ষেত্রে তার প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপারটা অতো তীব্র হতে নাও পরে। যদি এই প্রেম পাঁচ থেকে দশ বছরের বেশি মেয়াদী হয়। তাহলে প্রতিশোধের মাত্রাটাও তীব্র হবে। মনে হতেই পারে এর সঙ্গে লোকসানের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু আছেই।

ঠিক একইভাবে এই সময়ে একজন আরেকজনকে ভালোবেসেছে। একসঙ্গে হাসি-কান্না ভাগ করছে। একজন আরেকজনের জন্য ভয়-আতঙ্ক পাড়ি দিয়েছেন। স্বপ্ন দেখেছেন। যখন এই

আবেগগুলো সঠিক স্থানে ব্যবহার হয়নি বলে মনে হয়েছে। তখন একজন ভাবেন এই সময়ে এই আবেগগুলো লোকসান ছাড়া আর কিছুই নয়। এই লোকসানই একজনের মধ্যে প্রতিশোধ নিতে উস্কে দেয়। আর এই দিনগুলিতে যে বেশি আবেগ ঢেলেছেন, সেই বেশি প্রতিশোধ পরায়ণ হবে।

যে ছেলেটি বা মেয়েটির আর্থিক অবস্থা সমাজে খারাপ, দেখবেন, বিচ্ছেদের পর সেই বেশি ভেঙ্গে পড়ে। সেই বেশি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়। যদি দেখেন, কোনো মেয়ের বাবা চিকিৎসক আর কোনো ছেলের বাবা রিক্সাচালক। সেই ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের পর প্রতিশোধ পরায়ণ হবে ছেলে। প্রতিশোধ নিতে চাইবে। অথবা এই প্রেমে যে বেশি ঢাকা খরচ করেছে, লোকসান হবে তারই। সেই হবে প্রতিশোধ পরায়ণ।

 সামাজিকভাবেও এই নিয়মটা আছে। আমার মন বলে প্রেমিক-প্রেমিকারা এটা স্বীকার করে না। ধরুণ, কোনো মেয়ের বাবা চিকিৎসক আর ছেলের বাবা মুদি দোকানদার। তাহলে, বিচ্ছেদের পর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাবে ছেলের দিক থেকে। ঠিক চেহারাও এই সামাজিকতার মাপকাঠিতে আসবে। কারণ, সমাজে যে বেশি সুন্দর বা সুন্দরী সে প্রতিশোধ পরায়ণ হবে না। প্রতিশোধ পরায়ণ হবে, যে দেখতে কম সুন্দর।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে থাকেন সে, যে সামাজিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল। আর প্রতিশোধের কারণ, ভালোবাসা নয়, লোকসান। কিভাবে? ধরুণ, কোনো যুগল প্রেম করলো বেশ কয় বছর। তারপর একদিন ছেলে হোক আর মেয়ে হোক এই সম্পর্ক আর রাখা সম্ভব না বলে এক অপরকে জানিয়ে দিলো। এখন এই ভালোবাসার সমাপ্তি মেনে নিতে পারবে না কে? যে সামাজিকভাবে দূর্বল অথবা অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল। প্রতিশোধ নেয় লোকসান কাটাতে।