৫০০ গুলিসহ দুই পুলিশ গ্রেপ্তার খবর এবং কিছু প্রশ্নবোধক চিহ্ন

মিঠুন চাকমা
Published : 26 Oct 2012, 06:12 PM
Updated : 26 Oct 2012, 06:12 PM

বিডিনিউজ২৪.কম এর ওয়েবসাইট সহ প্রায় সব জাতীয় পত্রিকায় একটি খবর মোটমুটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, ঢাকা শহরের এক জায়গা থেকে "৫০০ রাউন্ড গুলিসহ ২ পুলিশ আটক" হয়েছেন।

খবরটি আদতে প্রথমে সাদা চোখে খুবই নিরীহ গোছের মনে হয়। তবে যেহেতু এই আটক হওয়া পুলিশ দুইজন একটি বিশেষ অঞ্চল হতে এবং যেহেতু তারা একসময় সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন এবং যেহেতু তারা বৃহৎ জাতিসত্তা বহির্ভূত অন্য জাতিসত্তার সদস্য তাই এই খবরটির অন্য একটি ডাইমেনশন সৃষ্টি হয়।

বিডিনিউজ২৪.কম লিখেছে, "গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কাফরুল থানা পুলিশ তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের কাছে ৫০০ রাউন্ড রাইফেলের গুলি পায়"। দুইজন সাধারণ পুলিশ সদস্য ঢাকার রাজধানীতে ১০০ নয় ২০০ নয় ৫০০ গুলি সংগ্রহ করেছে এবং তা পাচারের উদ্যোগ নিচ্ছে তা কেমন জানি অবিশ্ব্যাস্য মনে হয়। যদি বিশ্বাসই করি তবে এত বেশী পরিমাণ গুলি তারা কীভাবে সংগ্রহ করলো? তারা কি পুলিশের গোলাবারুদ শাখা হতে তা সংগ্রহ করেছে? যদি তা করে থাকে তবে, পুলিশের গোলাবারুদ সংরক্ষণ ডিপার্টমেন্ট কি ঘাস খেয়ে থাকে? তারা কোথায় যায় এত গুলি গোলাবারুদ সংরক্ষণ ডিপার্টমেন্ট থেকে পাচার হতে?যেখানে একটি গুলির হিসাবও প্র্রতিদিন নেয়ার বিধান রয়েছে নিরাপত্তা প্রশাসনে সেখানে তারা এত পরিমাণ গুলি কীভাবে সংগ্রহ করেছে তা আমার মাথায় আসছে না, একদম মিলাতে পারছিনা। এসব জিনিস অফিসের বাইরে নিয়ে বাড়িতে আনা তাও কেমন জানি সন্দেহজনক ঠেকে।

বিডিনিউজ২৪.কম লিখেছে "তারা মিরপুর ১৪ নম্বরে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত ছিলেন"। আমার অবশ্য জানা নেই পুলিশের এই ডিপার্টমেন্টের কী কাজ। তবে তাদের কাজ যাই-ই হোক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেন্দ্রীয় দপ্তর হতে এত বেশী পরিমাণ 'গুলি' হারিয়ে যাওয়াকে কিন্তু স্বাভাবিক মনে করা ঠিক হবে না।

আর এত পরিমাণ একে47 রাইফেলের গুলি ঢাকায় দুইজন পুলিশ অন্য কোনো মাধ্যম হতে যদি সংগ্রহও করে থাকে তবে তাও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। বাংলাদেশের রাজধানী অঞ্চল ঢাকার মতো নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায় এত অধিক পরিমাণ গুলি তারা কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে তাও এখানে আলোচনায় আনা প্রয়োজন। যদি এটাই সত্য হয় যে তারা অন্য উৎস থেকে এসব সংগ্রহ করেছে তবে এই ব্যর্থতা কিন্তু সরকারকে নিতে হবে।

এসব প্রশ্ন এখানে আনার কথা এই জন্য বলা হচ্ছে কারণ, কেন জানি মনে হয় এই ঘটনা হচ্ছে একটি সাজানো নাটক। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে সমাধান না করার জন্য হয়তো এমন এক গভীর চক্রান্ত।

আমার এই বক্তব্যের বিপক্ষে যদি কারো কোনো ব্ক্তব্য থাকে তবে তা প্রকাশ করলে খুশী হবো। এমনকি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের যদি কোনো যুক্তি থাকে তাও তাদের জানানো প্রয়োজন। শুধু ভাড়া বাসা থেকে গুলিসহ গ্রেপ্তার করার পরে তাদেরকে সংবাদ মাধ্যমে এনে তা ফলাও করে প্রচার করেই তাতে ক্ষান্ত থাকলে কিন্তু তা প্রশ্নবোধক থেকেই যাবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে নানামুখী কৌশল নির্ধারণ করা হয় এবং সরকার পার্বত্য সমস্যাকে সমাধানের জন্য উদ্যোগ না নিয়ে সবসময় নানামূখী চক্রান্ত চালায় বলেই আমাদের এই চিন্তার উদয় হচ্ছে। সরকার নিছক 'আটক করে' ক্ষান্ত হবে নাকি এর সঠিক উত্তর দেবে তার উপর কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করছে।

চাকমা ভাষায় একটি প্রবাদ বাক্য হচ্ছে,"সিবিদি হেনেই জিল ঘা অহলে। দোই পিলে দ্যালেও দর গরে"। তার মানে হচ্ছে, "চুন খেয়ে জিহ্বায় ঘা হলে দই এর হাঁড়ি দেখলেও ভয় হয়"। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের হচ্ছে সেই অবস্থা।

বারবার সরকারের নানা আশ্বাস প্রদানের পর বিশ্বাস ভঙ্গ করে সেই আশ্বাসে চুনকালি লেপন করার কারনে সরকারের ভালো উদ্যোগও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে বাঁকা চোখে দেখতে হয়।