জেলে বন্দীজীবন কাটানো সামর্থ্যহীন-অসহায় বন্দীদের জন্য

মিঠুন চাকমা
Published : 22 Jan 2013, 09:38 AM
Updated : 22 Jan 2013, 09:38 AM

(ক)

হোটেলের একটি চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিটির নাম দূর্গাপদ মুন্ডা। খাগড়াছড়ির রামগড়ের কাছাকাছি ফটিকছড়িতে অবস্থিত একটি চা বাগানে কাজ করতেন। সাড়ে সাত মাস আগে তিনি ফটিকছড়ি কর্ণফুলি চা বাগানে তার বোন জামাই পূর্ণচন্দ্র মুন্ডার কাছে বেড়াতে যান। এসময় পুলিশ এসে তাদের আটক করার চেষ্টা করে। সবাই পালিয়ে যেতে পারলেও দূর্গাপদ মুন্ডা পালিয়ে যেতে পারেননি। ফটিকছড়ি থানার পুলিশ তাকে ২২(গ) ধারায় মাদক আইনে আটক দেখায়। সেসময় থেকে আজ পর্যন্ত মোট সাড়ে সাত মাস তিনি চট্টগ্রাম জেলে বন্দী ছিলেন। আজ ২২ জানুয়ারি, ২০১৩ তিনি জেল থেকে মুক্তি পেলেন।ইউপিডিএফ-এর একজন সদস্যের প্রচেষ্টায় এক উকিল নিয়োগ করে তাকে জেল থেকে মুক্ত করা হয়।
জেল থেকে তাকে মুক্ত করতে উকিল খরচসহ সব মিলে খরচ হয়েছে ১৪০০ টাকার মতো।

একজন চা শ্রমিক সারাদিন চা বাগানে খেটে প্রতিদিন আয় করেন সর্বসাকুল্যে ৪৫ টাকা।

দূর্গাপদ মুন্ডাকে আজ প্রশ্ন করলাম। এই সাড়ে সাত মাসে আপনার পরিবার দেখা করতে আসেনি? তারা কি জানে যে আপনি বন্দী আছেন?
দূর্গাপদ মুন্ডার তিন সন্তান। তার স্ত্রী রমনী মুন্ডা।
ওই ব্যক্তি যদি এই সামান্য মাত্র ক'টি টাকা দিয়ে উকিল নিয়োগ করে তাকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা না করতো তবে বোধহয় তার জেলজীবন আরো দীর্ঘতর হতো, এমনকি হয়তো পরে সবাই তাকে ভুলে যেত। সে হয়ে যেত জেলখানার কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দী থাকা এক অধিবাসী!
জেলে যারা যান তাদের কাছ থেকে আমি এমন অনেক কথা শুনেছি, জেনেছি যে অনেকে তাদের জীবনের মূল্যবান সময় এমনকি জীবন পর্যন্ত তারা জেলবাসী হয়েই থেকেছেন।

তাকে চট্টগ্রাম অক্সিজেনে 'শান্তি পরিবহনে' তুলে দিয়ে বললাম। ভাল থাকবেন।

(খ)

জেল থেকে মুক্ত হয়ে আসা এক সহযোদ্ধার কাছ থেকে জানতে পারলাম চট্ট্রগ্রামে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ত্রিপুরা জাতিসত্তার এক ২১-২২ বছরের যুবক জেলে বর্তমানে আটক অবস্থায় আছে(তার নাম চিংকুমার ত্রিপুরা, গ্রাম খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার কাছাকাছি ভারত সীমান্তের ওপাড়ে কোনো একটি ত্রিপুরা গ্রাম।)। বোধকরি সীমান্ত পাড় হয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে সে আটক হয়ে বর্তমানে জেলে আছে। চট্ট্রগাম জেলখানার যমুনা ভবনের বিদেশী ওয়ার্ডে তাকে রাখা হয়েছে। সে সাত-আট মাস ধরে জেলে বন্দী। তার পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন কেউই জানেনা যে সে জেলে বন্দী।
সাধারণত বিদেশী বন্দীদের কপালে যা হয়ে থাকে ভাগ্য সহায় না হলে তাদের জীবন না যাওয়া পর্যন্ত জেলেই থাকতে হয়। আইনের মারপ্যাঁচে তাদের মুক্তি হলেও জেলের আইন এবং দেশের আইন অনুযায়ী তাদের জেলেই থাকতে হয় যতদিন দু্ই রাষ্ট্রের মধ্যে বন্দী বিনিময় না হয় বা যতদিন অন্য কোনো মানবাধিকার আইন অনুযায়ী তাদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করা না হয়।
যে যুবকটি জেলে রয়েছে সেই যুবকের পরিবার পরিজন যেহেতু জানেই না সে কোথায় রয়েছে সেহেতু তাকে তারা কীভাবে সাহায্য করবে? আর জানলেও তাকে ছাড়িয়ে নিতে যে ঝক্কি এবং অর্থ খরচ হবে সে পরিমাণ ক্ষমতা বা অর্থ কি তাদের রয়েছে?

(গ)
এই দু'জনের একজন মাত্র সাড়ে সাতমাস বন্দি থাকার পরে ছাড়া পেয়েছেন। দূর্গাপদ মুন্ডা এমন কোনো গুরুতর অপরাধই করেননি। অথচ তাকে জীবনের মূল্যবান সাড়ে সাত মাস থাকতে হলো কারাপ্রকোষ্ঠে। তারপরও আজ তিনি ছাড়া পেলেন।
অথচ ভারতের চিংকুমার নামের সেই যুবক কি তার সারাটি জীবন ভীনদেশের জেলেই কাটাবেন?

(ঘ)

বিনা কারণে বা অতি সামান্য কারণে জীবনের সারাটি সময় যারা বন্দী জীবন ভোগ করেন তাদের নিয়ে আমাদের এই সমাজ এবং বিচার-আদালত একটু মানবিক হবে এই প্রত্যাশা রইল