বিদ্যুত বিড়ম্বনা,পরিকল্পনাহীন ও রাজধানি কেন্দ্রিক বিদ্যুতায়ন

মিঠুন চাকমা
Published : 15 May 2015, 06:27 AM
Updated : 15 May 2015, 06:27 AM

বিদ্যুত তথা সোজা কথায় কারেন্ট এখন আধুনিক সমাজ জীবনের অপরিহার্য একটি উপাদান। বিদ্যুত না থাকলে নাগরিক জীবনে বর্ণনাতীতভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে হয় এটা সবার জানা।

খাগড়াছড়ির জেলা শহরের মতো মফস্বল শহরে বেশ কয়েকমাস হলো বিদ্যুতে বিভ্রাট চরমে পৌঁছেছে। আর বিদ্যুত বিভ্রাটকে যেন খাগড়াছড়িবাসী স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছেন! বেশ কয়েকদিন হলো দিনের দুই তিন ঘন্টা বাদে বাকি সারাদিন এবং রাত শহরে বিদ্যুত থাকে না। কিন্তু এ নিয়ে শহরবাসীর গা সওয়া হওয়ায় কোনো বাদ প্রতিবাদ যেন নেই। সামান্য দুয়েকটা ফেবু স্ট্যাটাস ব্যতীত এ বিষয়ে উচ্চবাচ্য করতেও দেখা মেলা ভার। কেন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে পরে বলার চেষ্টা থাকবে।

দেশে বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে ইংরেজি পত্রিকা নিউ এজ আজ ১৪ মে প্রকাশিত প্রিন্ট সংখ্যার লিড শিরোনাম করেছে- POOR POWER SUPPLY SYSTEM, Higher production brings no benefit.

তথ্যসূত্র: নিউএজ, ১৪ মে, ২০১৫, প্রথম পাতা

শিরোনামের বাংলা মানে, দুর্বল বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা, বেশি উৎপাদন হলেও তা কাজে দিচ্ছে না।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিদ্যুত উৎপাদন বেড়ে গেলেও আগামী ছয় বছরে দেশের জনগণ তার সুবিধা পাবে না। এর পেছনের কারণ হলো, বিদ্যুত সঞ্চারণ ও বিতরণ ব্যবস্থার সুবিধাদি বিদ্যুত যে পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে তার তুলনায় অপ্রতুল। দেশে বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতার পরিমাণ হলো ১১ হাজার মেগাওয়াট। পিক আওয়ারে বিদ্যুত চাহিদা হলো ৮৫০০ মেগাওয়াট কিন্ত জাতীয় বিদ্যুত লোড ডেসপাচ সেন্টার ৭৭০০ মেগাওয়াটের মধ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ সীমিত করে দিয়েছে। এই রিপোর্টের মাধ্যমে এটা বোঝায় যে, দেশে বিদ্যুত সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। এবং আগামী ছয় বছরের জন্য তা বহাল থাকবে।

রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশের রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে গড়ে দুই তিন ঘন্টা বিদ্যুত থাকে না। আর গ্রাম এলাকায় বিদ্যুত থাকে না তার দ্বিগুণ সময়ের জন্য। রিপোর্টটিতে খাগড়াছড়ি শহরকে গ্রাম এলাকা নাকি শহর এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে তা পত্রিকাটির রিপোর্টার বলতে পারবেন। অথবা তিনি আদৌ খাগড়াছড়ি শহরকে বিবেচনায় নিয়ে এই রিপোর্ট নাও করতে পারেন। এটাই লিখন যে, মফস্বল শহরকে তার সমস্যাকে রাজধানীর প্রচার প্রোপাগান্ডার কেন্দ্রকে ভেদ করতে বিপুল বেগ তথা শক্তি নির্গত করতে হয়।

এটাই সত্য যে, বিদ্যুত সঞ্চারণ ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য অবকাঠামো প্রস্তুত না করে 'বিদ্যুত উৎপাদন' বাড়িয়ে সরকার যেমন শহরবাসি তথা রাজধানিবাসির কাছ থেকে নাম কুড়ানোর জন্য, তাদের সমর্থন পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালায়। তেমনি এই রাজধানি কেন্দ্রিক মিডিয়াও রাজধানিকে নিয়েই তাদের খবরের ইভেন্ট তৈরি করে।

ফলাফল হলো, বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে 'রাজধানী' ব্যতিত দেশের বাকী এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সুবিধা পেতে দেশবাসীকে আরো ৬ বছর অপেক্ষা করার জন্য বাধ্য করতে হয়। অন্যদিকে মিডিয়া বা পত্রিকায় নিরন্তরভাবে স্থান পায় না 'রাজধানী' ব্যতিত দেশের অন্যন্য অঞ্চলের দুর্দশার খবর।

সরকার পরিচালকদের রাজধানীকেন্দ্রীক চিন্তা-পরিকল্পনার সাথে জাতীয় মিডিয়ার রাজধানী কেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ফারাক তেমন নেই!