তরুণী কিশোরী তুমি সাহসিনী!

মিঠুন চাকমা
Published : 25 May 2015, 04:54 AM
Updated : 25 May 2015, 04:54 AM

২১মে বস্পতিবার রাতে ঢাকার  রাস্তায় মাইক্রোবাসের ভেতর গারো তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কয়েকজন অর্ধপশুর হাতে। ধর্ষণকারীরা শাসিয়েছিল কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নিতে।  কিন্তু তরুণী যে সাহসিনী! দুর্দান্ত সাহসী তরুণী ঘটনার পরেই নিজে নিজে থানায় যান। বিচার চাইতে তিনি থানায় গিয়েছিলেন। প্রথম থানায় গিয়ে তাকে, একজন অসহায় নারীকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়। দ্বিতীয়বার তিনি আরেকটি থানায় যান। সেখান থেকেও তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তৃতীয়বার আরেকটি থানা, ভাটারা থানায় তিনি যান। সেখানে পুলিশ তার অভিযোগ গ্রহণ করে। তারপরেই শুরু হয় চঞ্চলতা!

এত রাতে এক বিধ্বস্ত মহিলা, তরুণী এক কিশোরী, একা, কিছুক্ষণ আগে যার শরীরে পাশবিকতার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, সেই মহিলা . তরুণী এক কিশোরী, একা, বিচার চাইতে ঘোরেন থানা থেকে থানায়। কী দুর্দান্ত সাহস ও মানসিক ধৈর্য স্ট্যামিনা থাকলে তা সম্ভব হতে পারে! জয়তু হে সাহসিনী তরুণী! মাতা জননী  ভগিনী তুঝে সালাম! সালাম তুঝে সালাম!

কিন্তু কী  নিদারুণ! এক তরুণী গভীর রাতে, একা একা তিনটি থানায় গেলেন, দুইটি থানায় তার অভিযোগ গ্রহণ করা হলো না! দুইটি থানায় যারা দায়িত্বে ছিলো, তারা যে নিজ দায়িত্ব পালন করেনি, অসহায়, এক বিচারপ্রার্থীর পক্ষে যে দাড়ায়নি, সেই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কি অন্তত প্রতীকী শাস্তিও কি সরকার প্রশাসন দেয়ার দায় নেবে না? না, কোনো পত্রিকা বা মিডিয়ায় দেখিনি যে, তাদের কর্তব্যে অবহেলার দায়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তবে আমার মতে শাস্তি যদি দিতেই হয় তবে প্রতীকী শাস্তিই দেয়া হোক। দায়িত্বের অবহেলা তো এখন সাধারণ ব্যাপার সকল প্রশাসনের ক্ষেত্রে!

মাইক্রোবাসে সংঘটিত এই ধর্ষণকান্ডের পরে প্রশাসন মিডিয়ার টনক নড়েছে। নড়েচড়ে বসেছে গোয়েন্দারা।তদন্ত চলছে। অর্ধপশু ধর্ষকদের ধরতে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। তদন্তের সার্বিক তদারকি করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। ডিবি উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলমকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন গুলশান জোনের অতিরিক্ত কমিশনার মাহবুব হাসান ও ডিবির সহকারী কমিশনার ওবায়দুল হক।

সরকারও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দিয়েছে প্রশাসনকে। মন্ত্রণালয়ের কেবিনেট বৈঠকে গারো তরুণী ধর্ষণ বিষয়ে আলোচনা হবে। হবে আরো অনেক কিছু!

গারো তরুণী ধর্ষণের বিচার হোক যথাযথভাবে তা আমরা সবাই চাই।

তারপর ধর্ষণকান্ডের মাত্রাতিরিক্ত বাড়বাড়ন্ত নিয়ে সরকার প্রশাসন সমাজ এই রাষ্ট্র সবাই সকলে গভীরভাবে চিন্তা করুক তাও আমরা চাই। আমরা আবার কয়েকদিনের মধ্যে সবকিছু ভুলে যাবো তা নিশ্চয় আমরা চাই না।

 সাহসিনী তরুণী কিশোরী, আমার ভগিনী, মা জননী, সেও হয়তো একদিন সমাজে মিশে যাবে, নতুন করে নিজেকে সাজাবে! কিন্তু, এই যে এই সমাজে, সমাজের শত শত কোণে প্রতিকোণে, গ্রামে নগরে, ঘরে, বাজারে, বিল্ডিঙে মাঠে ময়দানে অফিস অঞ্চলে আরো শত হাজার লক্ষ লক্ষ মা জননী ভগিনী, তারা বিচার পায়নিতারা পাবে না), তারা বিচার চায়নি (তারা বিচার চাইবে না), বিচার না পেয়ে তারা ফেরত চলে গেছে (তারা ফেরত চলে যাবে), তারা অন্ধকারে জীবন কাটিয়েছে(অন্ধকারেই তাদের জীবন কাটবে), এই যে, সমাজ, আমার প্রাণের সমাজ আমার রাষ্ট্র, আমারই আমাদেরই শাসনব্যবস্থা, সমাজকুঠরি তার কি কোনো বিহিত ব্যবস্থা নিতে আগামীতে ভূমিকা রাখবেনা???