তারা এখন আরেকটি দেশকে ভালবাসবে, তারা সুখে থাকুক!

মিঠুন চাকমা
Published : 6 June 2015, 05:33 PM
Updated : 6 June 2015, 05:33 PM

তারা এতদিন যে দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত সেই দেশকে অন্তত বাহ্যিকভাবে ভালবেসে এসেছে। এবার তারা আরেকটি দেশকে ভালবাসবে! সেই দেশটিই এখন থেকে হলো তাদের দেশ। এখন তারা যে দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে, তারা সেই দেশটিকেই ভালবাসবে, তাদের ভালবাসা দেখাবে, দেখাবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ!

উপরের এই কথা প্রযোজ্য তাদের জন্য যারা আজ থেকে নিজেদের নাগরিকত্ব বদলে ফেললো, বা বদলে ফেলার, বদল করার সুযোগ পেলো। হ্যাঁ, তাদের নাগরিকত্ব বদলে গেল। এবং নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমেই তা বদলে গেল।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী'র উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আজ ০৬ জুন শনিবার বিকালে নিজ নিজ দেশের ল্যান্ড বাউন্ডারি বিলের দলিল একে অপরকে হস্তান্তর করেছেন। এই হস্তান্তরের মাধ্যমে দুই দেশের প্রায় ৫০ হাজারের অধিক মানুষ আবার নিজেদের নাগরিকত্ব বদল করতে পারবেন। তারা নিজেদের ইচ্ছেমত তা করতে পারবেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, এতদিন ছিটমহলের বাসিন্দারা যে এলাকায় ছিলেন সেই এলাকাতেই অধিকাংশজন থাকবেন। অর্থাৎ, তাদের দেশ বা রাষ্ট্র বদলে গেলেও তারা নিজের ভুমি ছাড়বেন না। এবং এটাই সংগত।

আমার লেখার সূত্র হলো, বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে ভারতের একসময়ের 'সার্বভৌম' এলাকায় বসবাস করতেন প্রায় ৩৭ হাজার জন। আর উল্টোদিকে ভারতের সীমানার ভেতরে বাংলাদেশের একসময়ের 'সার্বভৌম' এলাকায় বসবাস করতেন বা করছেন ১৪ হাজার জন। তারা এতদিন 'সার্বভৌম' এলাকায় 'তাদের দেশের' নাগরিক ছিলেন, যদিও নাগরিকত্বের বঞ্চনাই তাদের ভোগ করতে হয়েছিল।এতদিন তারা তাদের 'নিজ দেশ'কে ভালবাসতেন, অন্তত বাহ্যিকভাবে তারা সেই ভালবাসা দেখাতেন।

এই চুক্তি এবং প্র্রোটোকল স্বাক্ষরের মধ্যেই তারা এখন আরেকটি দেশকে ভালবাসবে! এই ভালবাসা যেন ঠুনকো! যেন কাপড় বদলের মতো!

এই বিল বা চুক্তি বা প্রোটোকল দেখিয়ে দিলো, কৃত্রিমভাবে তৈরি করা রাষ্ট্রীয় সীমানা যখন বদলে যায় তখন যেন ভালবাসাও বদলায়, কাপড় চোপড় বদলানোর মতো।

যাই হোক না কেন ছিটমহলবাসীরা সুখে থাকুন তাদের নিজ নিজ নতুন দেশ নিয়ে এই কামনাই রইল। কিন্তু এই রদবদল অন্তত আমাদের এই চক্ষু খুলে দিক যে, দেশকে ভালবাসা আসলেই নিজের ভুমিকে, নিজের চারিপাশকে, নিজের গ্রাম-শহরকে ভালবাসা, নিজের ভুমিতে, নিজের চারিপাশে, নিজের গ্রাম-শহরে সুখে থাকা, সকল নাগরিক অধিকার নিয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করা। অনেক সময় রাষ্ট্রের মতো বিরাট বিশাল কিছু নিয়ে সাধারণ জনতা ভাবেন না, তারা ভাবনার অবকাশ পান না।

তারা আরেকটি দেশকে ভালবাসুক, তারা সুখে থাকুক!

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লিখলাম না!

তথ্যসূত্র: