একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সিলেটে কতিপয় নাগরিক সাংবাদিক

মাইদুল মিঠুন
Published : 8 April 2017, 09:01 PM
Updated : 8 April 2017, 09:01 PM

শনিবার। ২৫ শে মার্চ ২০১৭, সকাল নয়টা। সিলেট শহরের আম্বরখানায় ভোররাত থেকেই বৃষ্টি নামছে কখনো মুষলধারে, কখনো রিমঝিমিয়ে। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া। আমরা বের হলাম বাসা থেকে, আমরা বলতে সুমন দা, সৌমিত্র দা আর আমি। ৫ মিনিটেই ইষ্টিকুটুম রেস্টুরেন্ট। এখানে নাস্তায় সেরে অপেক্ষা করছেন আইরিন আপু ও রোদেলা আপু। সবাই একসাথে বের হলাম। উদ্দেশ্য সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়।

সময় সকাল ১০টা।  রাস্তায় লোক চলাচল অন্যদিনের তুলনায় কম। রাত থেকেই বৃষ্টি, একেবারে ঘুমানোর জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া তৈরি করে রেখেছে। তার উপর শনিবারের দিন, অফিস আদালত সব বন্ধ। আহ, কি প্রশান্তি! প্রায় ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম। বৃষ্টির মাত্রা খানিকটা বাড়লো বলে মনে হলো। গাড়িতেই বসে রইলাম আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই যোগ দিলেন কবি নাজনীন খলিল আপু।

কিছুক্ষণ খুনসুঁটি,  কবি সৌমিত্র দেবের রম্য কবিতা, রোদেলা আপুর রিমঝিম হাসি, আইরিন আপুর মিষ্টি মুখ, নাজনীন আপুর সিলেটি ভাষার রম্য, সুমন দা'র সিলেট নগরী সম্পর্কে টুকরো টুকরো তথ্য। আর আমার মন খারাপের গাম্ভীর্যের মাঝে আড্ডায় যোগ দেবার আপ্রাণ চেষ্টা। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর সুমন দা বললেন পাশেই ঐতিহাসিক আলী আজগরের ঘড়ি ও ক্বীন ব্রিজ। অল্প সময়েই ঘুরে আসা যায়। যেই কথা সেই কাজ, চলে এলাম ঐতিহাসিক ক্বীন ব্রিজ ও আলী আজগরের সেই বিখ্যাত ঘড়ির সামনে। পাশেই সারদা হল। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠলো সেই পুরনো স্মৃতিকথা। ইতিহাসকে চোখের সামনে দেখে মনের মধ্যে আলতো নাড়াচাড়া দিয়ে ফিরে এলাম আগের জায়গায়। খুনসুঁটি কিন্তু থেমে রইলো না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর অফিস থেকে ভেতরে বসার অনুরোধ জানানো হলো। সাড়া দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে বসলাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে।

ঘড়ির কাটা এগারোটা ছাড়িয়ে গেছে ততক্ষণে। চা-বিস্কুট পর্বের সাথে দেশের চলমান নানা ইস্যু নিয়ে চললো তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা- সমালোচনা।

১টা কি দেড়টার দিকে এলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফর রহমান। দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবীর উপর মুজিব কোট পরিহিত একজন অমায়িক হাসিমাখা মানুষ কক্ষে প্রবেশ করে অমায়িক হাসিকে যথাসম্ভব ছড়িয়ে দিতে দিতে দুঃখ প্রকাশ করলেন আমাদের এতক্ষণ বসিয়ে রাখার জন্য। সাথে দেরী হবার কারণ জানালেন, দু'দুটো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং সেরে এসেছেন। বেশ প্রবীণ হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে তারুণ্য স্পষ্ট। মনে পড়লো কাজী নজরুল ইসলামের দুরন্ত পথিক প্রবন্ধের সেই উক্তি '…আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন'।

আবার চা-বিস্কুট নেয়ার অনুরোধে আমরা ইতিমধ্যেই খেয়েছি জানালে বললেন, 'খেয়েছেন কিন্তু আমার সামনে তো খান নাই। এখন আমার সাথে একটা করে চুমুক দেন'। চায়ের পর এলো পান। নিজে পান সাজিয়ে মুখে পুরে দিতে দিতে আমাদেরকেও নিতে বললেন। যারা পান খান তারা নিলেন। সুমন দা কানে ফিসফিসিয়ে বললেন অতিথিদের পান খাওয়ানো সিলেটের আদিম সংস্কৃতি। মনে মনে সাধুবাদ জানালাম, এই চমৎকার সংস্কৃতি লালনের অভূতপূর্ব নজির দেখে। ফাঁকে ফাঁকে হালকা কথাবার্তা চলতে থাকলো। চা খেতে খেতেই পরিচয় পর্বটাও সেরে ফেললাম আমরা। একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন আইরিন আপু। শেষ থেকে দুই নম্বরে এলো আমার পালা। আইরিন আপু পরিচয় দিলেন ছাত্র ও কনিষ্ঠ ব্লগার হিসেবে।

পরিচয় পর্ব শেষে  কথা প্রসঙ্গেই জানালেন, আপনার হয়ত জানেন না আমি এক সাথে তিনটা দায়িত্ব পালন করি -সিলেট জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট। জানালেন, পারিবারিক জীবন নিয়ে তিনি সুখি। দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ছোট ছেলে বিদেশে থাকে। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন, মেয়ে ও মেয়ের জামাই দুজনেই ব্যাংকার। এবং তারা সিলেট শহরেই বসবাস করছেন। আশ্চর্য হলাম জেনে যে, তিনি এত ক্ষমতা ও প্রভাবশালী ব্যাক্তি হওয়া সত্ত্বেও ভাড়া বাসায় থাকেন।  মিষ্টি হেসে বললেন, 'আপনারা শুনে খুশি হবেন, আমার ব্যক্তিগত কোনো বাসা নেই। আমি ভাড়া বাসায় থাকি '। সবার দিকে তাকিয়ে মজা করলেন, 'কেউ ইচ্ছা করলে আমাকে একটা ফ্ল্যাট দিতে পারেন'। আমরা সকলে মজা পেয়ে এক সাথে হেসে উঠলাম।

চেয়ারম্যান বলে চলেছেন, 'যদিও ভাড়া বাসায় থাকি কিন্তু রাত্রে আমরা ভাল ঘুম হয়'। জানালেন পোশাক কেনার সময় তার হয়ে ওঠে না। ছেলেই এসব বিষয় দেখাশোনা করে। এনিয়ে তাকে বাড়তি চিন্তা করতে হয় না। মোটকথা, জীবন নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট, কোনরকম অভিযোগ নেই।

মজার গল্পগুজব চলতেই থাকলো, নিজে চুপচাপ শুনে যেতে লাগলেও বেশ উপলব্ধি করলাম, প্রাণ খুলে কথা বলছেন তিনি। যেন অনেক দিন পর প্রিয় বন্ধুর সাথে মেতে উঠেছেন অনেক দিনের জমিয়ে রাখা গল্পের পসরা নিয়ে। সময় গড়াতে লাগলো। কিন্তু এ মজার আড্ডা যেন শেষ হবার নয়। সুমন দাদা কথার মাঝে মাঝেই চাচা সম্বোধন করছিলেন। চেয়ারম্যান সাহেব নিজেই বলে উঠলেন, সুমন আমার বাল্যবন্ধুর ছেলে। একই এলাকায় বাড়ি আমাদের। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তাঁকে, আমার ভাতিজা লাগে। সমস্বরে বলে উঠলাম, আমরাও চাচা ডাকবো আপনাকে। বেশ হেসে বললেন, ডাকবাই তো, তোমরা তো আমার ভাতিজা-ভাতিজিই লাগো।

খেয়াল করিয়ে দিলেন আইরিন আপু, হেসে জানালেন আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য। তিনিও সাড়া দিলেন। শুরুতেই ব্লগ সাইটটি ল্যাপটপে দেখানো হয় চেয়ারম্যানকে। ব্লগের প্রথম পাতা, ফিচার পোস্ট অপরাপর পোস্ট স্ক্রল করে দেখানো ছাড়াও দক্ষিণ ঢাকা মেয়র ও নারায়ণগঞ্জ মেয়রদের সাথে নাগরিক সাংবাদিকদের সাক্ষাৎ পর্বের ছবিও দেখানো হয় তাকে।  এরপর সম্মানের সাথে তার হাতে তুলে দেয়া হলো 'নগর নাব্য – মেয়র সমীপেষু'  সংকলনটি। বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টিয়ে দেখতে দেখতে বললেন, 'আমার অভ্যাস আছে যে বইটা পড়তে শুরু করি সেটা শেষ না করে উঠি না। আজ রাতেই বইটা নিয়ে বসবো'।

ওনার কাছে কিছু প্রশ্ন করার অনুমতি চাইলেন আইরিন আপু। হেসে বললেন, 'জটিল প্রশ্ন করবেন না কিন্তু, সহজ প্রশ্ন করবেন'।

ঢাকা  থেকে জয়ন্তিকায় সিলেট আসতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে। অবস্থা দেখে ঢাকার 'সিটিং সার্ভিসের চিটিং সেবা' বলে মনে হয়। এদিকে ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোরের নাগরিক সাংবাদিক রাসেল সুমন সিলেট থেকে ময়মনসিংহগামী একটি মেইল ট্রেনের দাবি তুলেছেন। কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা? রাসেল সুমনের পক্ষে দাবি উত্থাপন করলেন রোদেলা আপু।

সিলেট জেলা পরিষদ চেয়্যারম্যান জানালেন, রেল সার্ভিস আমিও খুব পছন্দ করি। ঢাকায় যাইতে রেল সার্ভিসে গেলে অনেক ভাল লাগে। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম ছাত্র ছিলেন তখন ট্রেনে অনেক বেশি সময় লাগতো সিলেট থেকে ঢাকা যেতে, মধ্যিখানে ভালো ছিলো। এখন অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে নিয়েছি। রেলের ভাড়াও কম। বুড়া মানুষদের জন্য রেল সুবিধাজনক। বাস-কোচ একবার থামায়। এটা বয়স্কদের জন্য অসুবিধাজনক। ট্রেনের ব্যাপার তো আসলে রেল মন্ত্রনালয়ের অধীনে। আমাদের রেলমন্ত্রী যদি একটু একটিভ হন, তবে রেল সার্ভিস আরো ভালো হবে।

কথা প্রসঙ্গেই বললেন প্রয়াত রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা। জানালেন, উনি মাত্র কিছুদিনের জন্য রেলমন্ত্রী ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই একটা রেল সার্ভিস করেছিলেন – কালনী। কিন্তু দুর্ভাগ্য উনি ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন। উনি কোনো টাকা-পয়সা মারেন নাই। টাকা-পয়সার কোনো সমস্যা নাই। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যে কয়দিন ছিলেন, রেল সার্ভিসটা ভাল ছিল।

সিলেট ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগের গুরুত্ব স্বীকার করে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্ত করলেন সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলো এখানেই করতেন জানিয়ে জোর গলায় চেয়ারম্যান বললেন, এটা পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনের আওতায় যাবেই।এটা সিলেট সিটির মধ্যে পুরাতন বিল্ডিং। হল তো সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এখন আমরা নজরুল অডিটরিয়ামে করি। কোনো কোনো মিটিং আমার এখানে হয়। শিল্পকলা একাডেমি আছে। তবে সারদা হল পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনের আওতায় হবেই।

একটু আফসোস করে বললেন, আমাদের অসুবিধা হলো আমাদের সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নেই। আরিফ সাহেব আসতে পারেন নাই এখনো। উনার আপিল রিভিউ হয়েছে। রিভিউতে যদি উনি আসতে পারেন, এখন আইনের ব্যাপার। ঢাকায় লালবাগের কেল্লা পুরাকীর্তি আইনে সংরক্ষিত আছে। আমরা চেষ্টা করবো, আর মেয়র সাহেব  চলে আসলে তাহলে শক্তিশালী ব্যবস্থা নেয়া যাবে। যদিও বিভিন্ন দল করি, তবে তার সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে  সুসম্পর্ক। উনি জেল থেকে বের হয়েই এই অফিসে এসে প্রথম আমার সাথে দেখা করে সালাম জানান। উনি যদি আসেন… আর আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার দলের অন্যান্য নেতা যারা আছেন,  বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আমার সেক্রেটারি সাহেবের সাথে আলাপ করবো এবং জেলা পরিষদের মিটিং এও একটা প্রস্তাব আকারে পাশ করবো।

সারাদেশে কেবল অপারেটরদের বিটিআরসির খুঁটি ব্যবহারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিশেষ করে সিলেটের 'এসসিএস' পরিচালিত স্থানীয় চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আবার এ সম্পর্কেও লিখতে গেলেও জামাত ঘেঁষা এই সিন্ডিকেট থেকে হুমকি আসে জানিয়ে ক্যাবল অপারেটরদের জন্য নীতিমালা প্রনয়ণের প্রস্তাব তুললেন সুমন দা।

মাথা নাড়িয়ে চেয়ারম্যান জানালেন, এই যে হুমকির কথা বললেন, জামাত তো সবসময়ই হুমকি দেয়। সিলেটের জঙ্গি তৎপরতায় জামাতের সম্পৃক্ততা আছে। জামাত সব সময়ই বিরোধীতা করে। করবেও। গণহত্যা দিবস পার্লামেন্টে পাশ হয়েছে। নেত্রী সমস্ত দেশে আমাদের রাষ্ট্রদূতদের বলেছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনে।

তিনি অবলীলায় স্বীকার করলেন, কেবল অপারেটর বা 'এসসিএস' সম্পর্কে তাঁর কোন অভিজ্ঞতা নেই। বিষয়টি ভালোভাবে জেনে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। হালকা হেসে বললেন, টিভি একটা আছে, দেখারও সময় নাই। নতুন একটা সমস্যার কথা আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। এ সমস্যার সমাধান হলে ক্রেডিট আপনাদের বরাবর চলে যাবে। আমরাও হেসে উঠলাম সবাই।

চেয়ারম্যান বললেন, 'আমার অফিসের সামনেও ছিল। আমি সম্প্রতি কিছু হকার রাস্তা থেকে তুলে দিয়েছি। এরপর ওরা আবেদন নিয়ে আসলো, কান্দাকাটি করলো। আমি এক মাসের সময় দিয়েছি। এক মাস থাকো। আসলে ওরা গরীব।  আমাদের রেজিস্টারি মাঠ ঐতিহাসিক মাঠ। রেজিস্টারি মাঠকে মানুষ ভুলে গেছে, যেখানে সোহরাওয়ার্দী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আমি শুনেছি। মওলানা ভাসানী। বঙ্গবন্ধু তো বারংবারই। এখন রেজিস্টারি মাঠ ছোট হয়ে গেছে। সিএমবির বিল্ডিং তিনভাগের এক ভাগ নিয়ে গেছে।  রেজিস্টারি অফিস এক সাইড নিয়ে গেছে। এখন দেয়াল অনেক উঁচু হয়ে গেছে। আর এটা হকারদের দখলে ছিল। নাম বলা ঠিক না, একজন মেয়র সাহেবের বদান্যতায় … কেন যে দিয়েছিলেন! আমরা তো ওদের কাছে টাকা নেই না। আমি ওদের জিগেষ করেছি, তোমরা কাকে টাকা দাও? ওরা বলেছে, কাউকে না। আমি বলেছি, আমি বিশ্বাস করি না। তোমরা টাকা দাও। তোমাদের একমাস সময় দিলাম। পুরা মার্চ। আসলে দায়িত্ব সিটি করপোরেশন। হকারদের জন্য আলাদা মার্কেট ছিল। মার্কেটটা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুয়েকজন বাদে অন্যান্য কাউন্সিলরা এটা ভাঙতে দেয় নাই। রিট করেছেন। এটা নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে। লালদীঘির পাড়ের জায়গাটায় যদি নতুন ভবন হয়, তখন অনেক হকাররা কম ভাড়ায় ভাল দোকান করতে পারবে। স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্নভাবে আটকাচ্ছে, তবে আমার মনে হয় বেশিদিন আটকাতে পারবে না। আরিফ যদি মেয়র পদে চলে আসে তাহলে হকারস মার্কেট হয়ে যাবে। আরিফ সিটির অনেক কাজ করেছে, যদিও সে বিএনপি করে, কিন্তু যে ভাল কাজ করে তার কথা বলতে হবে। আরিফ যদি ফিরে না আসে, তাহলে দেরি হবে। ফুটপাত ক্লিয়ারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তবে আমি দাবিটা তুলবো বিভিন্ন জায়গায়।

ঘড়ির কাটা স্মরণ করিয়ে দিলো দুপুরের খাওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। আইরিন আপু সেদিকে খেয়াল রেখে চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনার জন্য সবশেষ প্রশ্ন করবে ব্লগের সর্ব কনিষ্ঠ লেখক মাইদুল মিঠুন। সারাটা সময় চুপচাপ কাটিয়ে দিলাম। শেষ সময়ে কথা বলতে গিয়ে কেমন একটু অপ্রস্তুত বোধ করলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে লাগলাম, বিশ্বের উন্নত শহরগুলো সিটি গভরন্যান্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নগরীয় সমস্যার সঠিক সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বে বড় বড় শহরগুলোতে সিটি গভরন্যান্স ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশন ব্যবস্থার বর্তমান কাঠামোতে মশক নিধন, আর্বজনা স্থানান্তর এবং স্ট্রিট লাইট  জ্বালানো ছাড়া সেবা দেয়ার আর কোনো ক্ষমতা নেই বললেই চলে। সিটি গভরন্যান্স হলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা জোরদার হবে। সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে  'সিটি গভরন্যান্স' ব্যবস্থা নিয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই। একই সাথে সিলেট সিটি কর্পোরেশন সিটি গভর্ন্যান্সের আওতায় আনার ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?

আইরিন আপু যোগ করলেন, ইতিপূর্বে ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নাগরিক সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোশনের মেয়র এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোশনের মেয়রও সিটি গভরনেন্স এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছিলেন।

বেশ নড়েচড়ে বসে চেয়ারম্যান বললেন, দেখেন, সিলেট তো ছোট শহর। যা কিছু হয় সব মাথা থেকে শুরু হয়। আপনারা জানেন ঢাকা সিটি করপোরেশন এখন দুই ভাগ হয়ে গেছে। দুটি সিটি করপোরেশন – উত্তর এবং দক্ষিণ।  আমাদের সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক। উনারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে সিটি গভরনেন্স করার জন্য। ইনডেপেডেন্ট সিটি প্রোগ্রাম। কারণ সিটির অনেক কাজ উনাদের আওতায় নেই। রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে, উনাদের পারমিশন নেয় না। যেখানে ঢাকা শহরের এই অবস্থা সেখানে আমরা তো ছোট শহর,  আমাদের জন্য আরো কষ্টকর। প্রকৃতপক্ষেই, শহরগুলোতে সিটি গভর্ন্যান্স দরকার।  যদি ঢাকায় সিটি গভরন্যান্স হয়, তাহলে সব সিটিতেই হবে। মূল জায়গা তো ঢাকা। ওরা অগ্রসর হলে, আমরা সাথে আছি।

আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক সকল কথাবার্তাই শেষ হয়ে এলো। বের হয়ে আসার সময় যেন আমরা ওনার অনেক দিনের চেনা মানুষ এমন ভাবে বলতে লাগলেন, আবার সিলেটে আসবেন সবাই মিলে। আর অন্য কাজে আসলেও এদিকে একবার দেখা দিয়ে যাবেন। ভালো লাগবে আমার।

সিলেটে আসবো এবং আসলে জানাবো এটুকু মুখে প্রকাশ করে, অমায়িক এই লোকটার কথা আরও কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শোনার ইচ্ছে মনের মধ্যে দমিয়ে রেখে বের হয়ে এলাম সবাই। রুম থেকে বের হয়ে গাড়ি পর্যন্ত আসতে আসতে  এমন উদারমনা লোকের দেখা পাওয়া এবং সামনাসামনি কথা বলাটা ভাগ্যজ্ঞান করে মনে মনে তাঁর আজীবন সুস্থ্যতা কামনা করতে করতে গাড়িতে উঠলাম।

***
সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে নাগরিক সাংবাদিকদের সাক্ষাৎপর্ব নিয়ে প্রতিবেদন: