উর্দ্ধগতির এই বাজারে কী করছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো?

মিথুন রায়
Published : 30 June 2012, 07:22 AM
Updated : 30 June 2012, 07:22 AM

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের যে অবস্থা, তা আসলেই অনেক সহনীয় পর্যায়ে। আমাদের এই বাংলাদেশে সিংহভাগ লোকই যেখানে গরীব, সেই দেশে কী করছে এই সিংহভাগ লোক? আমাদের সমাজে যেসব মানুষ দিন আনে দিন খায় কী অবস্থা তাদের? তারা কী পাচ্ছে প্রতিবেলার খাবার ঠিক করে খেতে? এই সব মানুষের দেখার কে আছে? এই সব প্রশ্নের উত্তর কী দিতে পারবে কেউ? তার কিছুটা চেষ্টা করেছি। যে মানুষটি সারাদিন কষ্ট করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ৩-৪ শত টাকা উপার্জন করে, তার সিংহ ভাগই খরচ করতে হচ্ছে একটু খাবার জন্য। ভবিষ্যৎ এর কিছুই চিন্তা করে না তারা। ভবিষ্যৎ এর কথা নাই বাদই দিলাম এক বেলা পেট পুরে খেলে যে আরেক বেলা খেতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তারপরও তাদের বস্তির ভাড়া, পরনের কাপড়-চোপড়। এত সব কিছু তাদের জোগাড় করতে হয়, এই প্রতিদিনের উপার্জন থেকে।

আমি নিজে গিয়ে দেখেছি বিভিন্ন বস্তিতে, ওখানে যে মানুষ যেভাবে থাকে তা আসলে অনেক কষ্টের, ছোট্ট একটা ঘর, এর মধ্যে মা, বাবা, ভাই, বোন, হয়তবা আরও অনেকে। এরপর আবার রান্না করার জন্য জায়গা, আছে পয়ঃ নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা। এইসব দেখে আমার নিজের চোখেও জল এসে যায়। যে এরা কিভাবে থাকে, আমি একটু মাথাটা দিলাম ওদের ঘরের মধ্যে আরে বাপরে যে গরম, তারপর আবার ঘরের বাইরে রান্না করার চুলা। ছোট্ট একটা শিশু হয়তবা বয়স হবে ৬ থেকে ৭ বছর ওই ঘরের সামনে বসে খাচ্ছে পান্তা ভাত, আমি প্রশ্ন করলাম এগুলো খাচ্ছ কেন? গরম ভাত নেই? আমাকে বলল, "ভাইয়া বাপজান কালকে কোন রোজগার করতে পারেনি, তাই আজ আম্মায় রান্না করতে পারেনি"। তাই পান্তা খাচ্ছি ভাই। এরকম তো অনেক দিনই হয়। এই কথা শুনে আমি ওই শিশুটির বাবার সাথে কথা বললাম, সে বলল, কাল আমি কোন কাজ পাইনি, অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কোথায় কেউ আমাকে কাজ দেয়নি। আমি আর ওখানে থাকতে পারলাম না, আমার চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়তে লাগল। শুধু ভাবলাম আমার যদি একটু সাম্যর্থ থাকতো তাহলে অবশ্যই সাহায্য করতাম।

এর মধ্যে যদি ঐ মানুষটির প্রিয় সন্তানের (সৃষ্টিকর্তা না করুন) অসুখ হয় তাহলে কী করবে সে? তার তো "নুন আনতে পান্তা ফুরায়" নিশ্চয়ই অন্য কোন পথ দেখবে।

কে ভাবে তাদের কথা? কী খেতে পারছে নাকি পারছে না। এসব দেখার কেউ নেই তাদের। সেই কবে গ্রাম থেকে শহরে এসেছিল একটু ঠাঁই খোজার। হয়তবা হয়েছে কোথায় একটু থাকার, তারপর……

এসব মানুষের মধ্যে কেউ বা রিক্সা চালাচ্ছে, কেউবা বাসের হেলপার, আবার কেউবা বাসার বুয়া,কিংবা কোন অফিসের পিয়ন। এর যে কোন একটিই হয়তবা করছে তারা। আর এসব মানুষের মধ্যে যারা এর কোনটাই করতে পাচ্ছে না হয়তবা কেউ দিচ্ছে না তাকে কোন কাজ? তারপর সে কী করবে? আর এই সব শ্রেনীর মানুষ গুলোই আজ আমাদের সমাজে ছিনতাইকারী, পকেটমার, অথবা চোর। আসলে এদের কী দোষ? দোষ তো আমাদের সমাজের সেই সব মানুষের যারা নিজের স্বার্থের জন্য ঐ সব খেটে খাওয়া মানুষের দিকে মুখ ঘুরে তাকাচ্ছে না।

বর্তমান সময়ে একটু লক্ষ্য করলেই আমরা বুঝতে পারব যে, আমাদের দেশটা কোথায় যাচ্ছে। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই খুন, ছিনতাই সহ নানান ধরনের অপকর্মের কথা। টিভি চ্যানেল অন করলেই একই খবর। আজ এই নেতা খুন তো কাল ঐ নেতা খুন। কাল ওর বাড়িতে ডাকাতি তো আরেক দিন এর বাড়িতে ডাকাতি। আমরা কেউ কারও ভাল কিছু দেখতে পারি না। কারও ভাল আমাদের কারও সহ্য হয় না। এই মানসিকতা একটু পরিবর্তন করলেই আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।

এই সবের মূলে রয়েছে ঐ সব মানুষ। এই সব মানুষ যদি একটু তাকায় গরিবের দিকে, যদি হাতটা বাড়িয়ে দেয়, আশা করি আমাদের দেশটা অনেক দূরে এগিয়ে যাবে। দেশে খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যাও কমে আসবে। বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা।

***
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে: http://www.khobor24.com, ২ ডিসেম্বর ২০১১