হলুদ টি-শার্টের পক্ষে

বিভূতি ভূষণ মিত্র
Published : 4 Nov 2011, 11:13 AM
Updated : 4 Nov 2011, 11:13 AM

হলুদ টি-শার্ট পরিহিতদের চাঁদা চাওয়া ও গরীব শ্রেনীর জন্য কিছু করাকে আমরা সহ্য করতে পারছি না কেন? এর উত্তরে আমার মনে হয়েছে –

১. প্রথমত ইংলিশ মিডিয়ামে যারা পড়েন, তারা ধনিক শ্রেনীর। তাদের মুখে গরীব বাঁচানোর কথা ভূতের মুখে রাম নাম বলে মনে হয়। এটা হয় মূলত অনভ্যস্ততার কারণে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেনী এই বিষয়টাকে মেনে নিতে পারেন না। এটা তাদের মানে ধনিক শ্রেনীর অন্য আট-দশটা ফ্যাশনেবল কাজের মতই মনে হয়। যেমন ধরেন লেনিন সমাজের সবচেয়ে ধনিক শ্রেনীর স্কুল থেকে পাঠ গ্রহণ করেছেন তাকে কিন্তু ফেলে দিতে পারি না !!!

২. এরা সমাজের সবচাইতে সুবিধাভোগী, মধ্যবিত্তের চাইতেও। গরীব বাঁচানোর মত একটা কাজও যদি বড়লোকেরা দখল করে, তাহলে তারা মানে মধ্যবিত্তরা যাবে কোথায় মানে এত বঞ্চনার মাঝেও সম্মান লাভের বিষয়টাকেও মধ্যবিত্তরা হারাবে !

৩. বিভিন্ন জায়গায় আমি এদের নিয়ে যে সমালোচনা দেখলাম তার একটা হল এনজিও। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল বড়লোকেরা এনজিও এর মালিক হন। আর মধ্যবিত্ত হয় এই এনজিও এর কর্মচারী-কর্মকর্তা। কিন্তু বড়লোকের ছেলে-মেয়েরা এই কাজ করবেন এটা মন থেকে তারা মেনে নিতে পারছেন না বা অভ্যস্ততা নেই বলে চোখে লাগছে।

তারা বলছে এটা ব্যবসা মানে এনজিও ব্যবসা। যারা সমালোচনা করছেন তারাও কিন্তু এর বাইরে মানে ব্যবসার বাইরে নন। এই প্রশ্ন সামনে টেনে আনলে মধ্যবিত্ত আবার বলে বসেন, খেয়ে তো বাঁচতে হবে। মানে এক্ষেত্রে এনজিও করা জায়েজ আর বড়লোকদের করা নাজায়েজ।

৪. আরেকটা সমালোচনা দেখলাম বাম ঘরানা থেকে। এরও বিশেষ কারণ বাম ঘরানায় বড়লোকের ছেলে-মেয়েদের কম দেখা যায় বা দেখা যায় না বললেই চলে। এরা সমাজের উপকার করবে এটা কেউ ধারণাও করতে পারে না। বা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই শ্রেনীর অবদান নেই বললেই চলে।

তাই মধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত বলে বা প্রলেতারিয়েত নয় বলে বিপ্লবে থাকতে পারবে না এমন যেমন বলা যায় না তেমনি বড়লোকের ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রেও কি তাই কিনা?

বাংলাদেশের অনেক চর এলাকা এক সময় বাম দলের দখলে ছিল। এখন সেখানে বামদের কাজ নেই। দখলে নিয়েছে এনজিও। এমনকি বাম দলও এখন এনজিও এর ভাড়া খাটে। অনেকে প্রশ্নও তুলেন জনগণের পক্ষে যদি এনজিও থাকে তাহলে তাদের বাম আন্দোলনে এনজিও অংশগ্রহণে সমস্যা কোথায়? ঠিক তারাই এখন এনজিও হতে পারে এসব, এসব এনজিও এর কাজ বলে চিল্লা -চিল্লি করছেন।

আবার ধরেন শিশু শ্রম। আমরা হাঁটতে-বসতে এখানে -সেখানে বাদাম ওয়ালা, ছোলা বিক্রেতা শিশুর কাছ থেকে কিছু কিনে খাচ্ছি। ঠিক তারাই আবার শিশু শ্রম এসব নিয়ে গলা ফাটাচ্ছি। সমস্যাটা তো অন্য কোথাও এই শিশুদের কাছ থেকে খাবার না কিনলে সে না খেয়ে থাকবে বা এই শিশুটি কাজ না করলে সে খেতে পারবে না কারণ যারা শিশু শ্রম নিয়ে গলা ফাটান তারা তাদের জন্য টাকা নিয়ে বসে থাকেন না।

সবশেষে একটা মজার উদাহরণ দিতে চাচ্ছি। একবার কোনও একটা ঈদের ম্যাগাজিনে একটা মেয়ের ছাগল কুল নিয়ে থাকার ছবিকে প্রচ্ছদ করা হয়েছিল। আমি আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কে সুন্দর। ছাগলটা না মেয়েটা। বন্ধুটা বলল ছাগলটা। আমি তাকে বলেছিলাম আসলে তুমি মেয়েটাই সুন্দর বলতে চেয়েছিলে। এটা আড়াল করতে বললা ছাগলটা।