ফারাজানা ও আমার নারীবাদী বান্ধবীরা

বিভূতি ভূষণ মিত্র
Published : 18 Nov 2011, 06:13 AM
Updated : 18 Nov 2011, 06:13 AM

আমরা যারা এ দেশে বসে নারীবাদ, মুক্ত যৌনতা, মেয়েদের ঘরের বাইরে আসা মানে হয়ে দাড়ায় ছেলে-মেয়ের এক সঙ্গে সিগারেট-গাজা খাওয়া এসব নিয়ে কথা বলে, আমরা তারা কথা বলি ইউরোপের দিকে তাকিয়ে। এটা না হয় নারীবাদ, না হয় মার্কসীয় প্রগতিশীলতা না হয় ইউরোপীয় প্রগতিশীলতা। সত্যিকার অর্থে এশিয়ার ফেমিনিজম বলে বা এশিয়ার নারীবাদ বলে একটা ব্যাপার আছে। ইউরোপের নারীবাদীরা আসলে এই এশিয়ার নারীবাদীদের কিভাবে দেখেন- এটা এনজিও এর জায়গা থেকে নয় একেবারেই একাডেমিক অর্থেই ইউরোপ মনে করে যে এশিয়ায় অহরহ পারিবারিক নির্যাতন, যে এশিয়ায় পণপ্রথার যাতাকল, যে এশিয়ায় অধিকাংশ নারীর জীবন মানে চার দেয়ালের বন্দীত্ব সে এশিয়ায় আসলে কোন নারীবাদ? এটা কি আদৌ নারীবাদ? কেননা আমাদের সমাজের নারীর বিশেষ অবস্থানেরই যেখানে উত্তরণ ঘটেনি, সেখানে ইউরোপীয় নারীবাদের অনুকরণ হাস্যকর আর কৌতুকরও বটে।

কেননা থার্ড ওয়ার্ল্ড ফেমিনিজম বা এশিয়ার নারীবাদের মোটাদাগের বৈশিষ্ট্যগুলো হল- নারী নির্যাতন-অবদমন, এর ওপর পুরুষতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার প্রভাব, আর রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার লৈঙ্গীয় দাপট। মূলত এখানকার নারীবাদের জায়গাটা ইউরোপের ৭০ ও ৮০ দশকের নারীমুক্তি ও ক্ষমতায়নের মধ্যেই ঠেকে আছে। যার জন্যে নারীবাদী নানা ক্ষমতা কাঠামো প্রসংগ একেবারেই অবান্তর। বা ইউরোপের জটিল পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধে নারীবাদের প্রতিবাদের ধরণের ধারে কাছেও এটি নেই। এর ফলে এখানে নারীবাদী কাজ বলতে কিছু এনজিও এর কাজ, সুধী সমাজের কাজ আর দরিদ্র মেয়েদের ক্ষেত্রে মার্কসবাদের প্রতি ঝোকের মত বিষয়টিই বোঝায়।

কথাটা এসেই গেল এই কারণে যে ফারজানা একেবারেই আমার আশেপাশের বান্ধবীর মতই। ও ইডেনে পড়েছে। ভাল রেজাল্ট। একটা স্কুলে কাজ আর বরের প্রাইমারি স্কুলের চাকরি। সে যে কাজটা করেছে সেটা এতটা আলোচনার মূল কারণই হল সে ফ্যাশনেবল নারীবাদীদের মত কিছু একটা করেনি। একেবারেই বিদ্যমান সন্ত্রাসীটিকে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে। মানে সেই ৭০-৮০ দশকের নারীর আচরণটিই করেছে, যা আমাদের সমাজের জন্য দরকারি। শুধু দরকারি নয়, প্রচণ্ডভাবেই দরকারি।

আমার মনে হয় আমার সেই সব বান্ধবীদেরও এটা বোঝার সময় এসেছে যে এটা ইউরোপ নয়, ইউরোপের মত এগিয়ে যাওয়া কোনও সমাজ নয় যে পুরুষ কাঠামোটির প্রতি এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে আমাদের লেসবিয়ান সোসাইটি গঠন করতে হবে, বা ফ্রি সেক্স ইত্যকার কাজ করে বেড়াতে হবে সমাজকে কাচকলা দেখানোর জন্য। আমাদের এই ইউরোপের ৭০-৮০ দশকের মত পিছিয়ে থাকা এই সমাজটিকে এগিয়ে নিতে হলে ফারজানাদের মত কাজ করতে হবে। কেননা আমাদের বিদ্যমান সন্ত্রাসী ধরণটি একে -৪৭ রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে নেই, সে একটা বড় জোড় ধারাল চাকু নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ওকে ইচ্ছা করলেই মূলোতপাটন সম্ভব। ার আমরা যদি এরকম পিছিয়ে পড়া একটা সমাজে ইউরোপের বর্তমান কোনও নারীবাদীর মত কথা বলতে যাই, তাতে হিতে বিপরীত হবে বলে কোনও সন্দেহ নাই।