হল খালির খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের অবসান চাই

শফিক মিতুল
Published : 2 July 2015, 07:37 PM
Updated : 2 July 2015, 07:37 PM

গত দুই ঈদের মত এবারের ঈদেও ফের হল ভ্যাকেন্ট করার 'খামখেয়ালি' সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঈদ উপলক্ষে আগামি ১৪ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত আবাসিক হল বন্ধের ঘোষণা এসেছে।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীই প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। কারণ ঠুনকো যেকোন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের ওপর এভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কোন মানে হয় না। তাছাড়া হল ভ্যাকেন্ট না করার বাস্তব অনেকগুলো কারণও রয়েছ। যেমন- ঈদের বন্ধের পরই আইন ও বিচার বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, ইংরেজি, সরকার ও রাজনীতি বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টিরও বেশি বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল ও অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষা থাকায় বিভাগগুলোর বেশ কিছু শিক্ষার্থী সময় বাঁচাতে হলেই ঈদ করার সিদ্ধান্ত নিলেও এখন হল বন্ধ থাকায় বাসায় যেতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া নেপাল, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন। তাছাড়া ইসলাাম ধর্মের ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়াটা একধরনের অন্যায়ও বটে।

এ নিয়ে উপ-উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলছেন, ছাত্ররা ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তাই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তারা কি ছাত্রদের কথা জানার নূন্যতম কোনো চেষ্টা করেছিলো?

"উপ-উপাচার্য বলছেন- ছাত্ররা এ ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ করে নি"।……কিন্তু শিক্ষার্থীরা গত ঈদে হল ভ্যাকেন্টের সময় উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম, আমরা কোন ধরনের ভ্যাকেন্ট চাই না। ভবিষ্যতে যেন কোন অযুহাতে ভ্যাকেন্ট করা না হয়। তখন তারা বলেছিলো যে, এরকম করা হলে ভবিষ্যতে ছাত্রদের সঙ্গে (অন্তত পক্ষে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে) কথা বলবে। কিন্তু এখন সুর পাল্টে বলা হচ্ছে- ছাত্ররা তাদের সাথে যোগাযোগ করে নি..!!!

ছুটির ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ বলা হয় যে, কর্মচারীদের কথা বিবেচনা করে এটা করা হয়েছে। কিন্তু অন্য সকল চাকরির ক্ষেত্রে যেটা করা হয়, এক ঈদে যারা ছুটি কাটায় অন্য ইদে তারা কর্মস্থলে থাকে। অথবা কেউ না কেউ কর্মস্থলে থাকেই। কিন্তু কর্মস্থল খালি করে দেওয়া খুব কমই হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন জায়গায় তো এটা ভাবাই ঠিক নয়। এখানে সব সময় ছাত্র থাকবে তার প্রয়োজনে। বাধ্য করে ঠুকনো অযুহাতে তাদের চলে যেতে বাধ্য করা ঠিক না। তাহেল বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় থাকে না, স্বৈরাচারালয় হয়ে যায় !

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন বরাদ্দ নিয়ে তৈরি সংকট দূর করতে পারে না, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের নিরাপত্তা দিতে পারে না (দুর্বৃত্তরা বাস পুড়িয়ে দেয়), পারে শুধু হল ভ্যাকেন্ট করতে!!!!

'কতিপয় জমিদার' শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে, বিশ্ববিদ্যালয় যাদের জন্য, সেই শিক্ষার্থীদের অসুবিধার সৃষ্টি করার অধিকার কারো নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলছি, আপনারা খামখেয়ালী সিদ্ধান্ত নেওয়া বন্ধ করুন।

অনেকে মনে করেন হল ভ্যাকেন্ট হলে 'আমাদেরতো' কোন সমস্যা নেই, আমরা তো বাড়িই চলে যাবো। তাহলে এর বিরোধিতা করবো কেন ? কথা হলো- হল ভ্যাকেন্ট না হলেও হয়তো আমরা বেশিরভাগই বাড়ি চলে যেতাম। কিন্তু তাই বলে প্রশাসনের এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না। অধিকাংশের জন্য না হোক, স্বল্পসংখ্যকের সুবিধার কথাও আমাদের বিবেচনা করা উচিত। তাই সবারই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই, একই সঙ্গে খামখেয়ালি সিদ্ধান্তেরও অবসান চাই।