মহাসড়কের মহাসমস্যার মহাসমাধান হতে পারে জনসচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের কর্মতৎপরতায়

শফিক মিতুল
Published : 26 Nov 2016, 01:46 PM
Updated : 26 Nov 2016, 01:46 PM

ব্যস্ত সড়ক

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। সাভার বাসস্ট্যান্ড। সারাদিন ব্যস্ত থাকে এই সড়কটি। ঢাকার সাথে গাবতলী হয়ে দেশের উত্তরাঞ্চল  ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের প্রধানতম প্রবেশপথ এটি। প্রতি মুহূর্তেই দূরপাল্লার বাস-ট্রাক-প্রাইভেটকার এবং অন্যান্য যান চলে এখান দিয়ে। পাশাপাশি রয়েছে ঢাকার নগরের আশপাশের থানা ও জেলা থেকে আসা স্থানীয় (লোকাল) বিভিন্ন যান। এই পথেই রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, জাতীয় স্মৃতিসৌধের মত স্থাপনা। সুতরাং স্বাভাকিভাবেই সাধারণ মানুষ, দর্শনার্থী ছাড়াও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বিদেশী অতিথিরা প্রায়শই চলাচল করেন এই পথ ধরে। কিন্তু গাবতলী হয়ে হেমায়েতপু-সাভার-নবীনগর এই রুটের বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়।

তেমনি এক অসঙ্গতি হচ্ছে বিপজ্জনক রোড ডিভাইডার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের সুবিধার জন্য রোড ডিভাইডার দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটি নীচু হওয়ায় গাড়ি চলাচলের সময় প্রায়ই এই ডিভাইডার এর ওপর উঠে যায়। সাধারণত রাতের বেলায় এই ঘটনা বেশি ঘটে। এতে গাড়ির ক্ষতি হওয়াসহ মাঝেমধ্যে এর যাত্রীদের বিপদও আসন্ন হয়ে ওঠে।

গাড়ি ডিভাইডারে উঠতে উঠতে এভাবেই ক্ষয় হয়েছে ডিভাইডারের ইট-বালু-সিমেন্টের দেয়াল!

প্রায় সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ঢাকাগামী কাঙ্ক্ষিত গাড়িটিতে উঠার জন্যে  ডিভাইডারের ওপর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। যে কোন সময় কোন গাড়ি এই ডিভাইডারের ওপর উঠে গেলে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। গত সপ্তাহেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেইটে এভাবে ডিভাইডারের ওপর গুলিস্তান-ধামরাই: ডি লিংক -এর একটি বাস উঠে গেল দুর্ঘটনায় এক ভ্যান চালক নিহত হয়; আহত হয় আরো চারজন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকাগামী বাসগুলোর চেকিং কাউন্টার থাকলে শিক্ষার্থী কিংবা পথচারীদের এরকম দুর্ঘটনা অনেকটা এড়ানো যাবে। পাশাপাশি ডিভাইডারগুলো আরো কিছুটা উঁচু করলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে।

অসচেতন পথচারীদের নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। একদম পাশেই কিংবা একটু দূরেই রয়েছে ফুট ওভার ব্রিজ। কিন্তু তাতে কারো কোন বিকার নেই। সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। মাঝে মধ্যে ঘটে মারাত্মক দুর্ঘটনা। কিন্তু সেটা যখন ঘটে তখন; পরক্ষণেই সবাই সব ভুলে আবার পূর্বের অভ্যাসে ফিরে।

সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে রোড ডিভাইডারের মাঝে যে লোহার রেরিকেড দেওয়া আছে তাতে দুটি স্থানে বড় দুটি ভাঙ্গা অংশ আছে। এই ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পথচারীরা রাস্তা পার হন ঝুঁকি নিয়ে। নারী-শিশু-বৃদ্ধ কেউ বাদ যান না এই দল থেকে।  ট্রাফিক পুলিশ কিংবা কর্তৃপক্ষের সামনে দিয়ে এই ঘটনা চলতে থাকলেও এই দুটি স্থান সংস্কারের উদ্যোগ সম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যায়নি।

                                     সাইকেল কাঁধে নিয়েও চলে রাস্তা পারাপারের এই অভিযান!

                                       ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই যাত্রীরা নিয়ম ভেঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে।

যাত্রীরা একটু সচেতন হলে এবং কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়মের ব্যাপারে আরো কঠোর হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভবপর হবে।

মহাসড়কের অসঙ্গতি এখানেই শেষ নয়। সাভারের সিএন্ডবি এলাকার রাস্তা ময়লার স্তুপে দখল হয়ে আছে। রাস্তার পাশের এ 'ময়লার ভাগার' রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ময়লা জমে মজে স্তুপ হয়ে গেছে। দখল করে ফেলেছে ফুটপাত সহ মহা সড়কের অনেকখানি স্থান। আশপাশের এলাকার লোকেরা এখানে ময়লা ফেলে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভার পৌরসভার ময়লা ফেলার গড়ি থেকেও মাঝে মধ্যে এখানে ময়লা ফেলা হয়।

সড়ক মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের মহাসড়কে ময়লা না ফেলার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা জারি করলেও তা এই এলাকায় খুব একটা মানতে দেখা যায় না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপি ডা. এনামুর রহমানের সৌজন্যে ময়লা টপকে আবর্জনার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা গাছে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ১৫ আগস্টের ব্যানার টানালেও এসব ময়লা সরানোর কোন উদ্যোগ নেননি সম্মানিত সংসদ সদস্য সাহেব।

ফুটপাতের দোকান আর ভাড়ায় চালিত গাড়িতে দখল মহাসড়ক:

সাভার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দু'পাশে ফুটপাত ছেড়ে মূল রাস্তায় প্রথমে চটপটি, পিঠা, ফল বিক্রেতা প্রভৃতি দোকানের লম্বা সাড়ি। এর পরের কলামে সাড়ি করে দাঁড়ানো ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার এবং মাইক্রো। এই দুই কলাম মোটামুটি স্থায়ী একটি ব্যাপার। এরপরের কলামে থাকে সাময়িকভাবে থামানো কোন গাড়ি। এতে করে মূল রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাই অব্যবহৃত হয়ে থাকে থেমে থাকা গাড়ির দখলে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সব দেখে শুনেও অদৃশ্য কারণে নীরব থাকেন। মাঝে মধ্যে দু'একটি গাড়ি থেকে নেন হাদিয়া। এই থেমে থাকা গাড়ির ও অবৈধ দোকান সরাতে পারলে জনবহুল এই এলাকা দিয়ে গাড়ি চলাচল আরো স্বাভাবিক হবে।

ফুট ওভার ব্রিজ যখন খুচরা দোকানীদের দখলে তখন সহজেই অনুমান করা যায় এক প্রকার যুদ্ধ করে ওভার ব্রিজে ওঠে লোকজন। অধিক লোক ওভার ব্রিজে উঠছে ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। ওভার ব্রিজের নীচের পুরো অংশ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন কাপড়ের দোকান, বেল্ট, চশমা, ফলের দোকান। এসব দোকানের গ্রাহকদের ভিড়ে ওভার ব্রিজের পথচারীদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ওভার ব্রিজে ওঠার সময় ধাপে ধাপে বসে থাকে হাত-পা না থাকা ভিক্ষে চাওয়া লোকজন। এরা ওভার ব্রিজে ওঠার পথের অনেকখানি জায়গা দখল করে বসে থাকে।

ওভারব্রিজের উপরেও রয়েছে অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্ম। পাপোশ, আয়না-চিরুণি, ওজন মাপার যন্ত্র প্রভৃতি নিয়ে বসে থাকে এসব অস্থায়ী দোকানের লোকেরা।  প্রচণ্ড ভিড়ের এই এলকায় ওভার ব্রিজের ওপর এ ধরনের অস্থায়ী দোকান পথযাত্রীদের ভোগান্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

আধা কিলোমিটারের মতো এই সাভার বাসস্ট্যান্ডটি সাভার পৌরসভার অভ্যন্তরীণ এলাকা। শুধু মাত্র এই এলাকাটুকুতে জনদুর্ভোগ বাড়ানো এমন আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আজকের উপস্থাপিত সমস্যাগুলো খোলা বিষয়। সবার নজরে আসে এগুলো। সাধারণ জনসাধারণের যেমন নজরে আসে, তেমনি অবশ্যই কর্তৃপক্ষেরও নজরে পরার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় দিন যায়, মাস যায়, এসব সমস্যার আর কোন সমাধান হয় না। এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষেরও যেমন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা রয়েছে, তেমনি জন সাধারণেরও রয়েছে সচেতনতা ও কর্তব্যবোধের অভাব।