মানিকের গল্প…

শফিক মিতুল
Published : 24 Dec 2016, 12:07 PM
Updated : 24 Dec 2016, 12:07 PM

বাবুটার নাম মানিক। বাড়ি টেকনাফে। বাবা গত হয়েছেন আরো বছর কয়েক আগে। সে এখন ক্লাস ফোরে পড়ে। চার ভাই-বোনের মধ্যে বড় ছেলে সে! টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে জাহাজে কথা হয় তার সঙ্গে। নিজেদের অল্পকিছু জমি আছে, যেখান থেকে অল্পসল্প কৃষিজ পণ্যের চাহিদা মেটে। পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য বাদবাকি সমস্ত অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব মানিকের ওপরই। ছোট দুই ভাই ক্লাস টু'তে পড়ে। আর ছোট বোনটি বোন এখনো মায়ের কাছেই থাকে।

প্রতিদিন সকালে সাড়ে নয়টায় টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যায় সে। জাহাজে উঠা এবং নামার সময় যাত্রীদের লাগেজ বা ব্যাগ বহন করাই মূলত তার কাজ। সেন্টমার্টিন গিয়ে যাত্রীদের নামার সময়, পুনরায় সেন্টমার্টিন থেকে বিকেল তিনটার সময় জাহাজ ছাড়ার ক্ষণে সবশেষে টেকনাফে সন্ধ্যা নাগাদ যাত্রীদের ফেরত আসার সময় সে এই কাজ করার সুযোগ পায়। এতে করে দৈনিক গড়ে প্রায় পাঁচশ টাকা আয় হয় বলে জানায় মানিক।

কথার মাঝে জিজ্ঞেস করলাম, সকালে খেয়েছে কিনা? বলল, মা সকালে ঘুমিয়ে ছিলো তাই না খেয়েই চলে এসেছে। পকেটে টাকা নেই। যাত্রী ওঠার সময় কারো ব্যাগ নিতে পারেনি তাই টাকাও পায়নি। টেকনাফ গিয়ে কোন একজনের ব্যাগ নামিয়ে টাকা পেলে তাই দিয়ে কিছু খেয়ে নেবে।

এসব শুনে আমি কিছু কিনে দিতে চাইলাম। সে কোন মতেই কিছু নিবে না। পরে অনেকটা জোর করেই কিছু খাবার কিনে দিলাম। তার হাতে খাবার দিয়ে মানিকের চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। কি সজ্জল চাহনি! কি সংকোচ! পরে তার অপ্রস্তুত ভাব কাটাতে করিডোরে নিয়ে সানগ্লাস পরিয়ে ঝটপট কয়েকটা সেলফি তুলে ফেললাম। ব্যাস! মানিক তো বেশ খুশি। এর মাঝেই জাহাজ ভিরার সময় হয়ে এলো। মানিক লজ্জা মাখা মুখে বলল, ভাইয়া, আমি এখন যাই? দেখি কারো ব্যাগ পাই কিনা- বলে সামনে পা বাড়ালো মানিক। আমরাও নিজেদের কাজে মনযোগ দিলাম।