আমাদের প্রিয় উৎপল দা’র আশু সুস্থতা প্রার্থনা করছি

শফিক মিতুল
Published : 1 May 2017, 01:28 AM
Updated : 1 May 2017, 01:28 AM

উৎপল চক্রবর্ত্তী দা (৪৫)। পেশায় প্রকৌশলী এই লোকটার সাথে বেশি দিনের পরিচয় না। ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্লাটফর্মেই তার সাথে প্রথম পরিচয়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিদ্যালাভ করা উৎপল দা এই প্লাটফর্মে নাগরিক সাংবাদিকতা করছেন দু' বছরের বেশি সময় ধরে। তার সাথে পরিচয় হওয়ার পরে দুয়েকবার দেখাও হয়েছে। সর্বশেষ ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্লগের বর্ষপূর্তি ও নগর নাব্য'র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলাপ হয় তার সাথে। এই স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে একটি বার্তা অন্তত দাঁড় করাতে পারি তার সম্পর্কে- উৎপল দা একজন সদা হাস্যোজ্জল জ্ঞানী মানুষ

.

.

হাসির বিষয়টা তো তার ছবি দেখলেই বুঝা যায়; কৃত্রিম না, একদম স্বাভাবিক হাসিটাই থাকে ছবিতেও। আর জ্ঞানী হওয়ার বিষয়টা আমার অবজারভেশন, বোধকরি অন্যরাও এই মতের সাথে দ্বিমত করবেন না। কারণ এ পর্যন্ত আমি ব্লগে তার যে ক'টি লেখা পড়েছি তার সবগুলোই ছিলো ব্যাপক তথ্যবহুল আর বাচনভঙ্গি গোছালো। তার লেখা পড়লে মনে হয়, পুরো একটি ইতিহাস চোখের সামনে সরাসরি দেখা যাচ্ছে। প্রকৌশল বিষয়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি তো আছেই, ব্লগের নাগরিক সাংবাদিকরা তার লেখার কৌশলেরও স্বীকৃতি দিবেন আশা করি।

দুয়েকটি লেখার কথা না বললেই না। ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর ব্লগে তিনি লেখেন- "কুমিল্লার 'মাতৃ ভাণ্ডার' রসমালাই, একটি বিশ্বরেকর্ড এবং জিআই নিবন্ধন" নাগরিক সাংবাদিক উৎপল দা'র এই লেখাটি পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যমের কন্টেটে পরিণত হয়েছিলো।

.

২০১৭ সালের একদম প্রারম্ভে ৫ জানুয়ারি দাদা লেখেন- "নাগরিক সাংবাদিকতা ও নাগরিকের দায়" শিরোনামের লেখাটি। সাবলিল ভাষায় নাগরিক সাংবাদিকতা বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়া এই লেখাটি ব্লগ পরিবারের সবার নিরঙ্কুশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলো, যা নাগরিক সাংবাদিকদের মন্তব্য দেখেই বুঝা গিয়েছে।

এত এত স্তুতি যার গাইছি, সেই লোকটা এখন শুয়ে আছে ঢাকার লালমাটিয়ায় সিটি হাসপাতালে। দগ্ধ হওয়ার অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে গতকাল বিকেল থেকে নিশ্চয়ই দুর্বিষহ সময় পার করছেন তিনি।

দগ্ধ হওয়া বলতে যা বুঝায় সেরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার কখনো হয়নি। তবে হালকা আগুনের ছ্যাকা লাগার অভিজ্ঞতা আর যারা দগ্ধ হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে শুনেছি দহনের তীব্র যন্ত্রণার কথা।

খবরটি পাই গতকাল সন্ধ্যার পরে- আইরিন সুলতানা আপু প্রথম জানায়। এর পরপরই আমি জয়নাল আবেদিন, জুলফিকার জুবায়ের, ফারদিন ফেরদৌস, সুমন দা, তানজির ভাইকে জানাই। পরে 'ঢাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৪' এই শিরোনামের করা সংবাদে কিছুটা বিস্তারিত জানতে পারি ঘটনা সম্পর্কে।

ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে বহুতল একটি ভবনের শীততাপ যন্ত্র বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে রোববার সন্ধ্যায় ঐ চারজনকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে লালমাটিয়া সিটি হাসপাতালে নেয়া হয় দাদাকে। এখন সেখানেই আছেন তিনি।

.

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, এলিফ্যান্ট রোডের ইষ্টার্ন মল্লিকার পেছনে 'বসতি' নামের একটি ১২তলা ভবনের নিচতলায় এসির (শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র) কম্প্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়ার এই ঘটনা ঘটে।

'নিচতলাটি সম্প্রতি একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানি ভাড়া নিয়েছে। সেখানে ভবনের কক্ষগুলো রংয়ের কাজ চলছিল। কাজ চলার সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে,' প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলেন বাচ্চু মিয়া।

এই সাত সকালে লেখার শুরুতেই সবাইকে দুঃসংবাদটি দিতে চাইনি। তাই দাদার সম্পর্কে সবার জানা থাকা কিছু বর্ণনা দিয়ে তারপর ঘটনার উল্লেখ করলাম।

সর্বশেষ একটি মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, উৎপল দা'র ৩০/৩৫ শতাংশ বার্ন হয়েছে, কিন্তু গলায় ইনজুরি বেশি তাই এখন কেবল অপেক্ষা যেন শ্বাসনালী অক্ষত থাকে। কোমড় থেকে মাথা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে। একমাত্র ক্রিটিকাল পয়েন্ট তার গলার ভিতর। আগামিকাল আইসিইউ'র ডাক্তার এসে কনফার্ম করবেন। তিনি লালমাটিয়া সিটি হাসপাতালে আছেন এখন।

ঈশ্বরের কাছে আমার প্রিয় উৎপল দা'র আশু আরোগ্য কামনা করছি, আপনাদের কাছেও দোয়া চাইছি। দাদা আপনি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠবেন, আমাদের আবার মজার মজার লেখা উপহার দিবেন। আপনার অনুপস্থিতি আমরা তীব্রভাবে অনুভব করছি।