আমরা কি সচেতন!!

মিজানুর রহমান৭৫
Published : 7 April 2012, 07:31 AM
Updated : 7 April 2012, 07:31 AM

ভানুসিং এর একটি কৌতক ছিল এরকম- 'একদা রেল ভ্রমনের সময় প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে যেখানে যাত্রীরা সিটে বসাতো দুরের কথা ঠিক মতো দাঁড়নোর জায়গাও পাচ্ছিলনা-শিশু,মহিলা,অসুস্থ রোগী যেখানে খুব কষ্ট করে গিজিগিজি করে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে একজন ভদ্র লোক ট্রেনে ২ টি সিট দখল করে শুয়ে শুয়ে পা নাড়াচ্ছেন।তাকে উঠে বসে একটি সিট খলি করে অন্য একজন অসুস্থ রোগীকে বসতে দেবার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করার পরও ঐ ব্যক্তি কারো কথায় কোন কণর্পাত করলো না। সে যথারীতি শুয়েই ছিল।এ নিয়ে ব্যাপক হৈ হট্টগোল বেধে গেলে রেলের কতর্ব্যরত টিটি ঘটনাস্থলে আসে এবং ঐ ব্যাক্তিকে উঠে বসে একটি সিট অন্যদের ছেড়ে দিতে বলে।তখন ঐ ব্যাক্তির টনক নড়ে এবং সাথে সাথে পকেট থেকে ২ টি টিকেট বের করে টিটিকে দেখিয়ে বলে এই জন্যই তো ২ টা টিকেট কেটেছি।'

আজকে রাজধানী সহ সারা দেশে বিদ্যুৎ,গ্যাস,পানি সমস্যা প্রকট আকার ধারন করছে। এ নিয়ে আন্দোলন-মিছিল হচ্ছে।কিন্তু সমাধান কি হচ্ছে?উত্তর কিছুই না।কারন আন্দোলন সংগ্রাম করার সাথে সাথে কি বিদ্যুৎ,গ্যাস,পানির উৎপাদন বেড়ে যাবে?রাতারাতি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে? এমন দিবা স্বপ্ন দেখার কোন অবকাশ নেই। কারন কোন সরকারই এগুলোর যথাযথ সমাধান করতে পারেনাই। আদৌ পারবে কিনা নিশ্চিত বলা যাচ্ছেনা। তা হলে আমরা কি করবো! হ্যাঁ যা করার আমাদেরকেই করতে হবে। আমরা ২ টিকেট কাটনেওয়ালা ব্যাক্তির মতো আত্বকেন্দ্রীক না হয়ে একটু উদার এবং সচেতন হলে কিছুটা হলেও সুফল বয়ে আনতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা অহেতুক বিদ্যুৎ,গ্যাস ও পানি অপচয় করেন। যেমন অনেক সময় দেখাযায় পরিবারের সকলে এক রুমে টিভি দেখছেন আর অন্য সব রুম গুলোতে বাতি জ্বলছে। আবার কখনো দেখা যায় সারা দিন সারা রাত বাথ রুমের বাতি জ্বলছে। অপ্রয়োজনে এসি চলছে। এ ভাবে প্রতিনিয়ত অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে।

গ্যাসের ক্ষেত্রে ও একই বিষয় লক্ষ্য করা যায়। ম্যাচের একটি কাঠি বাঁচাতে গিয়ে সারাদিন চুলা জ্বালিয়ে রাখা হয়,চুলার উপর জামা কাপড় শুকানো হয়। অনেকে আছেন টেপ ছেড়ে দিয়ে দাঁত ব্রাশ করছেন,শাওয়ার ছেড়ে গায়ে সাবান মাখছেন। এ রকম নানান ভাবে আমাদের সচেতনতা এবং আন্তরিকতার অভাবে প্রতিদিন বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ,গ্যাস ও পানির অপচয় করছি।এখন প্রশ্ন উঠতে পারে আমি যে পরিমান ব্যাবহার করছি সে পরিমানে বিল পরিশোধ করছি-এখানে কার কি করার আছে? কিন্তু আমাদের এ কথা ভাবা উচিৎ আমরা যে পরিমান ব্যাবহার করছি তা জাতীয় গ্রীড থেকেই খরচ হচ্ছে। আমি যদি সচেতন হয়ে অপ্রযোজনীয় ২ টি বাতি কম জ্বালাই তা হলে এই ২ টি বাতির আলো দিয়ে ২ জন পরীক্ষার্থী তার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে। আমি যদি প্রযোজন সারার পর গ্যাসের চুলাটি বন্ধ রাখি তা হলে এই গ্যাস দিয়ে অন্য পরিবরি তাদের রান্নার কাজ সারতে পারবে। আমি যদি প্রতি দিন ২ বালতি পানি কম অপচয় করি তা হলে এ গুলো দিয়ে একটি পরিবার এক দিন চলতে পারবে। এ গুলো এমন এক সীমিত পণ্য যা আপনি চাইলে বা টাকা দিয়ে অসীম হারে ব্যাবহারের সুযোগ পাবেন না। কেউ এক জন যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এগুলোর অপচয় করে এর জন্য অন্যদের কষ্ট স্বীকার করতে হয়। সরকার যেহেতু আমাদের চাহিদা মত যোগান দিতে ব্যথর্ হচ্ছে তা হলে এখন আমাদেরকে অত্যধিক সংযমী হওয়ার মাধ্যমে এগুলোর ব্যবহার করতে হবে। এতে যে টুকু সাশ্রয় হবে তা দিয়ে অন্যরা তাদের নুন্যতম প্রযোজনটুকু মেটাতে পারবে। আর যদি আমরা মনে করি আমি বিল পরিশোধ করবো আমার ইচ্ছা মত আমি ব্যাবহার করবো তা হলে আর বলার কিছু নেই। টাকার গরম দেখিয়ে ২ টি টিকেট কেটে যে ভাবে যাত্রীদেরকে কষ্ট দিয়ে ছিল আমরা না হয় টাকার গরমে ইচ্ছে মত বিদ্যুৎ,গ্যাস,পানির অপচয় করে অন্যদেরকে কষ্ট দেই! এটা কি হওয়া কাম্য।।