সামাজিক শাসনই রোধ করতে পারে সামাজিক অবক্ষয়

মিজানুর রহমান৭৫
Published : 17 April 2012, 10:48 AM
Updated : 17 April 2012, 10:48 AM

আমাদের সমাজ আজ অবক্ষয়ের কবলে নিমজ্জিত। বিশেষ করে যুব সমাজকে অবক্ষয়ের কালোছায়া হাতছানি দিয়ে আবদ্ধ করে রেখেছে। মাদক,সন্ত্রাস,চারিত্রিক অধঃপতন,নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত গর্হিত কাজ সহ এমন কোন অপকর্ম নাই যা আমাদের আমাদের যুব সমাজে দেখা যায় না। ক্রমান্বয়ে এই অপকর্মগুলো কিশোরদেরকেও আকৃষ্ট করছে এবং দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। ফলশ্রুতিতে গোটা সমাজ আজ অবক্ষয়ে ভরে গেছে। রাস্তা ঘাটে চলাচল করা নিরাপদ নয়। দিবালোকে জনসম্মুখে খুন, ছিনতাই, অপহরণ, ধষর্ন, মারপিট এর মত জঘন্য কর্মকান্ড নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। চোখের সামনে এ জাতীয় ঘটনা ঘটলেও কেউ প্রতিবাদ করছেনা। নিজের সন্তান, আত্নীয় স্বজনের সন্তান,পাড়াপড়সীর সন্তান যে কারই এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার সাহস কেউ করছে না। কারন প্রতিবাদ করলে তার জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে চলে আসে। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে সকলে কুপোকাত। গ্রামে,গঞ্জে,শহরে সব জায়গায় একই চিত্র বিদ্যমান।

আমার আলোচ্য বিষয়ের আলোকে বলতে গেলে এটিই হল সামাজিক অবক্ষয়। তা হলে সামাজিক শাসন কী? সামাজিক শাসন হল সামাজিক ভাবে বয়োজ্যেষ্ঠ কর্তৃক কনিষ্ঠদের কর্মকাণ্ডের উপর নিবিড় ভাবে নজর রাখা এবং কোন অন্যায় করতে না দেওয়া এবং করলে সাথে সাথে তা প্রতিহত করা। কোন মা বাবা সার্বক্ষণিক তার সন্তানের উপর নজরদারি করতে পারে না এবং করা সম্ভবও না। কারন বয়স বাড়ার সাথে সাথে কারো সন্তান কারো কাছে সার্বক্ষণিক বসে থাকে না। নানান কারনে তারা পথে ঘাটে,হাটে বাজারে,মাঠে প্রান্তরে বিচরণ করে। তখনই তারা মা বাবার চোখের আড়ালে ছলে যায়। মা বাবা ইচ্ছা করলেও তার সন্তানকে পাহারা দিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু সে তার মা বাবার চোখের আড়ালে যেখানেই যাক না কেন তার মা বাবা বা বড় ভাই সমতুল্য কোন না কোন লোক বা তার কোন বয়োজ্যেষ্ঠ আত্নীয় সেখানে আবশ্যই থাকবে। তার মা বাবার অবর্তমানে যদি ঐ বয়োজ্যেষ্ঠ তার প্রতি তার মা বাবার মত খেয়াল রাখেন বা শাসনে রাখেন তা হলে সে অন্যায় কোন কাজ করতে সাহস পাবে না। সে যেখানেই যাক না কেন বয়োজ্যেষ্ঠদের নজর এড়িয়ে কোন অপরাধ করার সুযোগ পাবে না।

একটা সময় এমন ছিল যখন কারো সন্তানকে কোন অপরাধের জন্য প্রতিবেশী কোন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তি শাসন করলে ঐ সন্তানের অভিবাবক সে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তির কাছে গিয়ে তার সন্তানকে শাসন করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। এতে পুরো সমাজে একটা স্বস্থি ছিল। প্রত্যেকের সন্তানদের প্রত্যেকে নিজের সন্তানের মত করে করে নজরদারি করত। কনিষ্ঠরাও বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করত ও মান্য করত। এর ফলে যুব ও কিশোর সমাজ বিপথ গামী হওয়ার সুযোগ ছিলনা।

আজকের সমাজে আমরা কি দেখছি! যুবক ও কিশোরদের দাপটে মা বাবা সহ বয়োজ্যেষ্ঠরা ভীতসন্ত্রস্ত এবং অনেকটা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। তারা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে। তাদের কে শাসন তো দূরের কথা কোন কিছু বলতে গেলে, অন্যায় কাজের বাধা দিতে গেলে তারা বয়োজ্যেষ্ঠদের এমনকি মা বাবাকেও আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না। যারা এই কাজ গুলো করে তারা কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তি বর্গ গ্রুপিং,লবিং সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নানান ভাবে আমাদের যুবক ও কিশোরদের ব্যাবহার করছে এবং সাময়িক লোভ লালসা এমনকি অস্ত্রশস্ত্র হাতে তুলে দিয়ে তাদেরকে বেপরোয়া করে তুলছে। রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় তারা বিভিন্ন অপকমের্র মাধ্যমে সমাজটাকে কলুষিত করে ফেলেছে এবং সমাজকে অবক্ষয়ের অতল গহীনে নিয়ে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে-একটু ভাবুন তো! এই সামাজিক অবক্ষয় থেকে বেরিয়ে আসতে এবং সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সামাজিক শাসনের পুন:প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই। আমরা প্রত্যেকে যদি বিষয়টি নিয়ে ভাবি, যুব ও কিশোর সমাজকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের বিষয়ে যদি সত্যিকারে অন্তরীক হই তা হলে সামাজিক শাসনের মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে। "বিশ্রাম কাজের অঙ্গ একই সাথে গাথা,নয়নের অঙ্গ যেমন নয়নের পাতা" এই প্রবাদের মত 'সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ ও সামাজিক শাসন একই সুতায় গাঁথা।