লাউ চাষে মহসীনের ভাগ্য বদল

মিজানুর কালিগঞ্জ
Published : 21 July 2012, 02:39 PM
Updated : 21 July 2012, 02:39 PM

রোজগারের আশায় জমি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো মহসীনের। কিন্ত বাধ সাধলো ছোট ভাই । পরে তার পরামর্শে শুরু করলেন লাউ চাষ। ঢাকা থেকে ছোট ভাই হুমায়ূনের পাঠানো চায়না ডায়ানা জাতের লাউের বীজ বপন করেন ১একর জমিতে। দুই মাস পরে লাউ ধরতে শুরু করে। জমিতে মাচার উপর সবুজ লাউয়ের ডগা নিচে লাউয়ের জালিতে তৃপ্ত হয় মহাসীন। ১ সপ্তাহের মধ্যে লাউয়ের জালি বিক্রয়ের উপযোগি হলো। প্রথম দিনে তিনি ৬'শটি লাউ কাটলেন। প্রতিটি লাউ ২০টাকা দরে মোট ১২হাজার টাকা পেলেন। লাউয়ের টাকা হাতে পেয়ে মহাসীনের মুখে হাসি ফুটলো। এক মৌসুমে প্রায় ৪লক্ষ টাকা মুনাফা পাওয়ায় ছোট ভাইয়ের ওপর থাকা চাপা ক্ষোভও প্রশমিত হলো। বিদেশ যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে চাষে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করলেন মহাসীন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বানুড়িয়া গ্রামের মহাসীন আলী এভাবেই জানালেন তার সফলতার কথা। চাষী মহাসীন জানান তিনি ১ একর(৩বিঘা) জমিতে লাউ চাষ করেছেন। এক একর জমিতে লাউয়ের ফলন আসা পর্যন্ত মোট ৯০হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি জানান। সময় মতো সার ঔধুধ ও সেচ দিতে পারলে এক টানা ৩মাস লাউ ধরে। ১ একর জমি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬'শটি করে লাউ বিক্রি করেন তিনি । মহাসীন জানান লাউ বিক্রি করে এক মৌসুমে তিনি ৫লক্ষ ৪০ হাজার টাকা আয় করেছেন। খরচ বাদে তার নিট মুনাফা প্রায় ৪লক্ষ টাকা হয়েছে। চাষী মহাসীন জানান, সাধারণত জানুয়ারী মাসে লাউয়ের বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের ২ মাসের মধ্যে লাউয়ের ফুল আসতে শুরু করে। লাউ ধরা শুরু থেকে ৩মাস পর্যন্ত একই রকম লাউ পাওয়া যায়।

লাউ চাষে মহাসীনের পরিবারে স্বচ্ছলতা আসায় এলাকার অনেকেই লাউ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। মহাসীনও এলাকার বেকার যুবকদের লাউ চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এলাকার ১০/১২ যুবক লাউ চাষ শুরু করেছেন। একই এলাকার লিটন, খলিল, আমীর হোসেন তাদের মুখেও হাসি ফুটিয়েছে এই লাউ চাষ। মহাসীন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন করেন বলে তারা জানান। লাউ চাষে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সময় মতো সার ঔষুধ প্রয়োগ করতে হয়। বর্ষার মৌসুমে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন পোকা মারার কিটনাষক প্রয়োগ করতে হয়। লাউয়ের মাচার নিচে পরিষ্কার পরিচ্চন্ন রাখতে হয়। দু'এক দিন অন্তর সেচ দিতে হয়। তাহলে লাউয়ের ফলন ভালো হয় বলে জানান লাউ চাষী মহাসীন। মহাসীন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, প্রকৃত চাষী হওয়া সত্বেও উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে তিনি তেমন সহযোগিতা পান না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাকে ৮০টাকার বিনিময়ে বর্ষার সময় উন্নত মানের চকলেট জাতীয় বিষ ও ড্রাম দেওয়ার প্রতি¯্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্ত ২০দিন পার হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তা হাতে পান নি । তাই বর্ষার এ মৌসুমে পোকার আক্রমন থেকে লাউ গাছ রক্ষা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি। তিনি আরো অভিযোগ করেন যে, আমি প্রকৃত চাষী হওয়া সত্বেও অজানা কারণে সরকারীভাবে বিতরণকৃত সার ঔষুধের যেকোন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। মহাসীন জানান উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সময়মতো পরামর্শ পেলে লাউ চাষসহ অন্যান্য সবজি চাষে আরো সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মিজানুর রহমান,
কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ
২১.০৭.১২
০১৯৪৫২৩৩৯৫৭

***
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে: http://bd24live.com