কলার মোচা বিক্রি করা টাকায় সংসার চলে তাহাজ মন্ডলের

মিজানুর কালিগঞ্জ
Published : 22 May 2012, 03:37 AM
Updated : 22 May 2012, 03:37 AM

মাঠে কোন জায়গা জমি নেই। ভারী কাজও করতে পারেন না। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন কলার মোচার ব্যবসা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঈশ্বরবা গ্রামের তাহাজ মন্ডল(৫৫) কলার মোচা বিক্রি করে সংসার চালান। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তিনি কালীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কলার মোচা বিক্রি করে আসছেন। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই কোন রকমে চলে যাচ্ছে ৬ সদস্যের সংসার।

তাহাজ মন্ডল জানান, শারিরীকভাবে দূর্বল হওয়ায় তিনি কোন ভারী কাজ করতে পারেন না। তাই রোজগারের জন্য তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন। তাহাজ উদ্দিনের ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেদের মধ্যে একজন ঘাতক ব্যাধি গ্যাংরিনে আক্রান্ত। বাকি ৩ ছেলে পরের জমিতে কামলা খাটে। ছেলেদের আয়ে সংসার চলে না তারপর অসুস্থ্য ছেলের ঔষধ খরচের টাকা জোগাড় করতে তাকে বেশ হিমশিম খেতে হয়। তাই এ বয়সেও তাকে কাজ করতে হয়। কলার মোচা বিক্রি করতে তাকে প্রতিদিন প্রায় ১০/১৫ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়। প্রতিদিন ৩০/৪০টি কলার মোচা দু'টি ঝুড়িতে সাজিয়ে বাঁকে করে শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে বিক্রি করেন। প্রতিটি কলার মোচা ৫/৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে যায়। তাহাজ মন্ডল জানান ৩০/৪০টি মোচা বিক্রি করতে তাকে অন্ততঃ একশ বাড়িতে ঘুরতে হয় । প্রত্যেক দিন সব মোচা বিক্রি হয়না তার। যেদিন অল্প সংখ্যক মোচা বিক্রি হয় সেদিন তিন বেলা খাবার জোটে না তার ।

তাহাজ মন্ডল জানান, কলার মোচা সংগ্রহ করতে তাকে বিভিন্ন গ্রামের কলাচাষীদের কাছে ধর্না দিতে হয়। চাষীরা কলার মোচা বাবদ কোন টাকা পয়সা নেয়না । মোচা কাটার সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত থেকে তিনি বিনা মুলে ওগুলো সংগ্রহ করেন। কিন্তু সব সময় কলার মোচা পাওয়া যায় না। এ জন্য বর্ষার মৌসুমে কলমী শাক, হেলেঞ্চা শাক ও শাপলা বিক্রি করেন বলে তিনি জানান। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে কলার মোচা বিক্রি করায় তাহাজ মন্ডল শহরের অনেকের কাছে মোচা চাচা হিসেবে পরিচিত। সদা হাস্যোজ্জ্বল তাহাজ মন্ডল জীবনের বাকি সময়টুকু সুস্থ্য শরীরে এভাবেই কাটাতে চান।