হরতালে বেতনভূক্ত-প্রশিক্ষিত সেই শিবির ক্যাডাররা কোথায় ছিল??

মিজানুর৭৭৭৭
Published : 8 Jan 2013, 06:22 AM
Updated : 8 Jan 2013, 06:22 AM

বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা টেলিভিশনের সামনে। ঘন ঘন চ্যানেল পরিবর্তন করায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিরক্তবোধের পাশাপাশি আশ্চর্যও হলো। এক পর্যায়ে আমার সহ ধর্মীনি কপালে হাত দিয়ে বললো কই জ্বর হয়েছে বলেতো মনে হচ্ছে না। কি হয়েছে তোমার? মারাত্মক কোন সমস্যা নাকি? একের পর এক প্রশ্ন। আমি না শোনার ভান করে কম্পিউটার অন করলাম। ইন্টারনেটে একের পর এক বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা দেখতে লাগলাম। হঠাৎ এক মহিলার কান্নার শব্দ শুনে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার সেজ বোন রিনি। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে ওকে ধরে বলি কিরে কি হয়েছে? শাওনকি(ভাগ্নে) এখনও বাড়ি ফেরেনি? আমার কথা শুনে ওর কান্না থেমে গেল। বোন আর আমার স্ত্রী দু'জনে একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। আমি কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লাম। হঠাৎ স্ত্রীর কন্ঠে জোরালো আওয়াজ ন্যাকামু করার যায়গা পাওনা। সেই বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একবার টিভি, একবার কম্পিউটার নিয়ে বসছো। এতোবার জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে কোন উত্তর নেই। ঘটনাটা বুঝতে পারলাম। আসলে বিয়ের পরে এই প্রথম বিকাল থেকে একনাগাড়ে রাত ৮টা পর্যন্ত বাসায়। তাই এই অনাকাঙ্খিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাঠকেরও হয়তো জানতে ইচ্ছে করছে কেনইবা এতো সময় ধরে টিভি ও কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। তার আগে গত ০৫ জানুয়ারীর বাংলা নিউজের একটি সংবাদ পড়া দরকার বলে মনে করছি। সংবাদটির অংশ বিশেষ এমন-
হরতালে বেতনভুক্ত-প্রশিক্ষিত ক্যাডার নামাবে শিবির!

রোববার ১৮ দলের হরতালে জোটের ব্যানার কাজে লাগিয়ে সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত- শিবির ক্যাডাররা। বিএনপির ঘারে ভর দিয়ে নিজেদের দাবি আদায়ের সুযোগ তৈরির ষড়যন্ত্র করছে দলটি। সূত্র জানিয়েছে, এবারের হরতালে সহিংস কর্মকাণ্ডে দলের প্রশিক্ষিত বাহিনীকে মাঠে নামানোর সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে শিবির।
—————————————————————————————————————————————————
শিবিরের এক নেতা জানান, যদিও জামায়াতসহ ১৮ দলকে নিয়ে বিএনপি হরতাল ডেকেছে, তবু জামায়াত তাদের নিজস্ব অঘোষিত ইস্যুতেই এই কর্মসূচি পালন করবে। হরতাল পালন করবে তারা একদমই নিজেদের মতো করে।
তিনি জানান, এবারের হরতালে সহিংসতার জন্য শিবিরের বিশেষ ক্যাডার বাহিনীকে নামানো হবে। এই বাহিনীর 'আলাদা প্রশিক্ষণ' রয়েছে। এ ক্যাডাররা শুধু সহিংসতার জন্যই বেতন পায়।
তিনি বলেন, এই বাহিনীকে কোনো অনুষ্ঠান বা নিরীহ কর্মসূচিতে মাঠে নামানো হয় না। তাদের মূল কাজ পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাংচুর।

হরতালের সুযোগ কতোটা ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে শলা-পরামর্শ চলছে বলে এই নেতা জানান।

ভিন্ন সূত্র জানায়, জামায়াতের আন্দোলনের মূল ইস্যু তাদের নেতাদের মুক্তি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটকদের পূনর্বিচারের আবেদন খারিজ হওয়ায় কঠোর ও সহিংস আন্দোলনে নামার সুযোগ খুঁজছিলো দলটি। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে, ভাংচুর করে, আগুন জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আসছে গত তিন দিন ধরেই। তবে পুলিশের সতর্কতায় ও একক কর্মসূচিতে তেমন সুবিধা করতে পারছিল না জামায়াত-শিবির।
আর এ কারণেই হরতাল কর্মসূচিকে বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় তারা।

শিবিরের অপর নেতা এক জানান, রোববারের হরতালে জামায়াত যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রলম্বিত করতে আরো ইস্যু তৈরির চেষ্টা করবে। এদিন সহিংস কর্মকান্ড যাই হবে, তার দোষ স্বাভাবিকভাবেই বিএনপিসহ ১৮ দলের ওপর বর্তাবে। তাই কিছুটা চাপমুক্ত থাকবে জামায়াত।

সূত্রমতে, দলের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতারা জেলে। জামায়াতের নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতা এখন উল্লেখযোগ্য কেউ নেই। সর্বশেষ আবদুল্লাহ মো. তাহের আটক হয়েছেন, হামিদুর রহমান আযাদও পলাতক। এ অবস্থায় শিবির মনে করছে সহিংস পথ ছাড়া অন্য কোনো পথ তাদের সামনে নেই।

শিবিরের ওই নেতা বলেন, "প্রতিশোধের এই সুযোগ ষোলোআনা কাজে লাগানো হবে।"

একজন শিবির নেতা হরতালে তারা কি কি অপকর্ম করবে তা সাংবাদিকদের আগাম জানিয়ে দিচ্ছে। একজন নিয়মিত সংবাদ পাঠক হিসেবে বিষয়টা খুব একটা গ্রহণ করতে পারলাম না। তারপরও উড়িয়ে দিতে পারলাম না কারণ নিউজটি বাংলা নিউজের বলে। পাঠক এতক্ষণে হয়তো বুঝে গিয়েছেন কেন আমি এতো সময় টেলিভিশন ও কম্পিউটার সামনে ছিলাম। হিংস্র শিবিরের সহিংসতা দেখতে উৎসুক হয়ে টিভি ও কম্পিউটারে ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু দুঃখ পেলাম হরতালে শিবিরের সরব উপস্থিতি না দেখে। সংবাদ কর্মীদের কাছে সহিংস আচরণ করার ঘোষনা দিয়েও নীরব থাকার বিষয়টি নিয়ে বেশ কৌতুহলবোধ করলাম। হরতালের দিনে পিকেটাররা যা করে গত হরতালেও তার ব্যতিক্রম দেখতে পেলাম না। অথচ নিউজটিতে লেখা হয়েছে শিবিরের এক নেতা বলেছেন প্রশিক্ষিত বেতন ভূক্ত শিবির ক্যাডার হরতালে নামানো হবে পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাংচুর করার জন্য। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখলাম না। নিউজটি নিয়ে কথা বলেছিলাম আমার পাশের বাড়ির বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া এক শিবির কর্মীর সাথে। তার মতে শিবির সম্পর্কে এ ধরনের নিউজ করার পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে-

১. অপপ্রচার ও নির্যাতনের পরেও তরুন প্রজন্ম শিবিরের দিকে যে ভাবে ঝুঁকে পড়ছে তা রোধে নতুন প্রজন্মকে এ ভ্রান্ত মেসেজ প্রদানই নিউজের লক্ষ্য হতে পারে।

২. একটি মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ নিউজটি করা হয়ে থাকবে। যে মহলটি হরতালের দিনে এ ধরনের কাজ করে যাতে সহজে দায় শিবিরের উপর চাপাতে পারে তার পথ পরিস্কার করে রাখার জন্য এ নিউজ।

৩. বিতর্কিত অপারেশন স্ট্রিং এর ন্যায় এ নিউজ দ্বারা শিবিরের ছেলেদের কুপ্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে তাদের দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা।
যদি এ শিবির কর্মীর ধারনা ঠিক হয় তাহলে ধরে নেয়া যায় বাংলা নিউজের সংবাদটি সম্পপূর্ণ মনগড়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত? সারা বিশ্বে বাংলা নিউজ২৪.কম এর আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ধরনের একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় সোর্সের তথ্যকে যাচাই-বাছাই না করেই তার বক্তব্য শুনে ঘরে বসেই এমন একটি নিউজ করলেন এবং তা ছাপা হলো। আমি বাংলা নিউজের একজন নিয়মিত পাঠক হিসেবে বেশ মর্মাহত হলাম। প্রিয় বাংলা নিউজের প্রতি নিবেদন রইল বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের।

আমাদের এ কথা মনে রাখতে হবে-সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন। সমাজের মানুষেরা সাংবাদিকদের আলাদা মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে। তাদের কোমল অনুভূতিতে আঘাত করা ঠিক হবে না। মিথ্যার পরাজয় অবসাম্ভী। মিথ্যাচার করে হিটলারের সহচর গোয়েবল্সও হিটলারকে বিজয়ী করতে পারেনি। আজও তা সম্ভব হবেনা। তাই আমাদের উচিৎ হবে অপরকে খুশি করার লক্ষ্যে কোন সংগঠনের সদস্যদের জঘন্য কাজে উৎসাহিত না করে তাদেরকে ভালো পথে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া।