শিক্ষক দিবসের মাসেও লাঞ্ছিত হচ্ছেন শিক্ষক সমাজ!!!

মিজানুর৭৭৭৭
Published : 12 Jan 2013, 06:41 PM
Updated : 12 Jan 2013, 06:41 PM

শিক্ষক দিবসের মাসেও লাঞ্ছিত হচ্ছেন শিক্ষক সমাজ!!!
বর্তমানে বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধীদলের আন্দোলন চলছে। প্রতিটি কর্মসূচীতে পুলিশ ও আন্দোলনকারিদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের বেধড়ক পিটিয়ে আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করছে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। ফলশ্র"তিতে পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি ব্যবহার করছে কাঁদনে গ্যাস, রাবার বুলেট, গ্যাস গ্রেনেড, সাউন্ড গ্রেনেড প্রভৃতি। তবুও আন্দোলন চলছে। সম্প্রতি আন্দোলন করছে আরেকটি শ্রেণী। তাদের আন্দোলন ভিন্ন ইস্যুতে। দাবীও যৌক্তিক। তারপরও পুলিশ তাদেরকে লাঠিপেটার পাশাপাশি গরম পানি ও ঝালের ফ্লেবার মিশ্রিত তরল পিপার ¯েপ্র ছুঁড়ে তাদের আন্দোলনকেও থামিয়ে দেওয়ার প্রানন্তকর চেষ্টা চালাচ্ছে। পিপার ¯েপ্র ব্যবহার করা হয় পাগলা কুকুর ও ভয়ংকর জীবজন্তুর হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য। যা নাকি অতি সম্প্রতি জামায়াত-শিবির দমনে আমদানী করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ¯েপ্র চোখের কর্ণিয়ার জন্য মারত্মক ক্ষতিকারক। একধিকবার এ ¯েপ্র চোখে লাগলে চোখ অন্ধও হয়ে যেতে পারে। পাগলা কুকুর ভেবে যাদের ওপর এ ¯েপ্র করা হচ্ছে তারা আর কেউ নয়-তারা মানুষ গড়ার কারীগর হিসেবে পরিচিত এদেশের মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারী শিক্ষক সমাজ।
আমরা জানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, জাপান, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, রাশিয়াসহ গোটা ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর দ্রুত উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে শিক্ষিত দক্ষ মানব সম্পদের ব্যবহার। ওইসব দেশের দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করার জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অর্থ প্রতি বছর বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু চরম দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ আছে বর্তমানে ২.২৭ শতাংশ। অথচ জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। এত কম বরাদ্দ রাখায় বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম বঞ্চনার শিকার দেশের শিক্ষার দায়িত্ব পালন করা ৯৮ ভাগ বেসরকারি শিক্ষক সমাজ। দ্রব্যমূল্যের এ উর্দ্ধগতির বাজারে দু'বেলা দু'মুঠো ভাত ও মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা যখন আর করতে না পারছে ঠিক সেই মুহুর্তে কিছু দাবী নিয়ে রাজপথে নেমেছেন তারা।
চলতি বছর ০৯ জানুয়ারী বুধবার বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয় করণ, প্রতিষ্ঠান সহ নন এম পি ও এম পি ও ভুক্তি করণ,১০০ টাকার পরিবর্তে সম্মান জনক বাড়ী ভাড়া প্রদান, ১৫০ টাকার পরিবর্তে সরকারী নিয়মে ভাতা প্রদান,২৫% এর পরিবর্তে পূর্নাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদানের দাবীতে মন্ত্রালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। শুরু হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের এ্যাকশন। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও গরম পানি,পিপার ¯েপ্র ও রাবার বুলেটের আঘাতে সেদিন গুরুতর আহত হন কমপক্ষে ২০-২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী। এটাই প্রথম নয়। গতবছর ৪ অক্টোবর স্বীকৃতি পাওয়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা, স্বীকৃতির সময়কাল থেকে চাকরির বয়স গণনা করা, এমপিওর ক্ষেত্রে এমপি-দের ডিও লেটার দেয়ার বিধান বিলুপ্ত করা, অনিয়ম, ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করা এবং স্বীকৃতি পাওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না দেয়া। এমন কয়েকটি দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে সেদিনও শিক্ষকদের ভাগ্যে জোটে পুলিশের লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল। একই বছরের ১৫ মে শাহবাগে জলকামানের তোড়ে রাস্তায় উল্টে পড়েন এক বৃদ্ধ শীর্ণ কিংবা ক্লান্ত প্রাইমারী শিক্ষক। মোটা লাঠি হাতে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় কয়েকজনকে। ঘাড় ধরে কংক্রিটের রাস্তায় টেনেহিঁচড়ে তোলা হয় পুলিশের গাড়িতে। অথচ তাঁরাই শেখান বর্ণমালা, ধারাপাত কিংবা মানুষ হওয়ার মন্ত্র। সেদিন পুলিশের মার খেয়ে গুরুতর আহত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যেতে হয়েছিল ৭১'র বীর মুক্তিযোদ্ধা এক অসহায় শিক্ষককে।
শিক্ষদের লাঠিপেটা করা , তাদের ওপর বিষাক্ত গ্যাস নিক্ষেপ করার ঘটনা বিশ্বের আর কোন দেশে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ইতিহাসে বাংলাদেশই হয়তো কলঙ্কজনক এ অধ্যায়ের সূচনা করলো। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তাঁরা পুলিশি নির্যাতন দেখছে, অনেকে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারপরও জীবন জীবিকার তাগিদে ভূখা-নাঙ্গা এই অসহায় শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবীতে এখনও আন্দোলন করছে। না জানি আরো কত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সইতে হয় মানুষ গড়ার এই কারীগরদের। সরকারের কাছে এই মিনতি শিক্ষক দিবসের এই মাসে তাদের কিছু দিতে না পারলেও প্লিজ তাদেরকে অপমান করবেন না।