মিজানুর৭৭৭৭
Published : 27 Jan 2013, 05:28 PM
Updated : 27 Jan 2013, 05:28 PM

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কুল চাষীরা এবার বাম্পার ফলন পেয়েছে। এক বিঘা জমি থেকে কুল বিক্রি করে আয় করেছে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। এতে চাষীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে লাভজনক সুস্বাদু ফল কুল চাষের বিপ্লব ঘটাতে পারে চাষীরা। এখানকার কুল এখন চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে।

উপযুক্ত কর্মক্ষেত্রে, কার্যকর পরিকল্পনা, প্রকৃতিকে জয় করবার এক অদম্য আকাঙ্খা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে মানুষ স্বল্প সময়ের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। এরই উদাহরণ হয়েছে কালীগঞ্জের কুল চাষীরা। কালীগঞ্জ উপজেলার সানবান্দা গ্রামের কুল চাষী মামুন হোসেন জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে বাউ কুল চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছেন এক থেকে দেড় লাখ টাকার কুল। বিঘা প্রতি খরচবাদে নিট মুনাফা পান প্রায় ১লাখ টাকা।

মামুন হোসেন জানান, লাভজনক হওয়ায় অন্য চাষ ছেড়ে ৪ বছর ধরে কুল চাষ করে আসছেন তিনি। কুল চাষে তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। তার দেখাদেখি উপজেলার অন্যান্য চাষীরাও কুল চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সানবান্দা গ্রামে তিনিই প্রথম কুল চাষ শুরু করেন। এখন এ গ্রামে প্রায় ৫'শ বিঘা জমিতে কুল চাষ হচ্ছে বলে তিনি জানান।

মামুন হোসেনের পাশাপাশি উপজেলার কুল চাষী ইসমাইল, মাহমুদ, এনামূল শরীফ, করিম মোটা অঙ্কেও মুনাফা পেয়েছেন কুল চাষ থেকে। অনেকেই হয়েছেন লাখ লাখ টাকার মালিক। এখনো গাছে রয়েছে ভরপুর কুল। চাষীদের এই কুল তোলা মাত্রই কুল ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে কুল কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছে। বিভিন্ন জাতের কুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে বাউ কুলের। এসব কুল পাইকারী ৪০/৫০ পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মামুন জানান, সাতক্ষীরা জেলার গদাইপুর থেকে চারা এনে নিজে লাগানোর পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন চাষীদের কাছে এ চারা বিক্রি করেন । কুলের বাগান তৈরির জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভালো। এছাড়া বাড়ির আনাচে-কানাচে, পুকুর পাড়ে অথবা আঙ্গিনায় পড়ে থাকে অনুর্বর ধরণের মাটিতে গর্ত করে কুলের চাষ করা যায়। চারা রোপণের মাস খানেক আগে ১মি. ঢ ১মি. ঢ ১মি. মাপের গর্ত তৈরি করে নিতে হয়। চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে সার মিশিয়ে রাখতে হয়। কুলের বাগান তৈরির জন্য তিনি বর্গাকার রোপণ প্রণালী অনুসরণ করা হয়। এক গাছ থেকে অন্য গাছের রোপণ দূরত্ব সাধারণত ৬-৭ মি. রাখা হয়। তিনি আরো জানান, মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় ও শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে কুলের চারা রোপণ করা হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে কুল চাষের জন্য প্রায় ১৫হাজার টাকা খরচ হয় বলে মামুন জানান।


কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কুল চাষ হয়েছে। ফলনের পরিমাণ হয়েছে প্রায় ১৫০মেট্রিক টন। তবে এখনো চাষীরা গাছ থেকে কুল ভাঙ্গছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, এ উপজেলায় এবার কুল চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন জাতের মধ্যে বাউ কুলের ফলন তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে। কুল চাষ করে অনেক কৃষক ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে। এখানকার কুল সারাদেশে বিক্রি হচ্ছে। কুল চাষীদের তিনি সব ধরনের সহযোগিতাও করছেন বলে জানান।