পাপ বাপকেও ছাড়েনা … এর নাম আমেরিকা!

কালবৈশাখী ঝড়
Published : 27 March 2014, 01:35 PM
Updated : 27 March 2014, 01:35 PM

পাপ বাপকেও ছাড়েনা … এর নাম আমেরিকা!
মাহাফুজ হক। গুলশানের এক নামি ইন্টারন্যাশানাল স্কুলের তরুন শিক্ষক।
৮০র দশকে অনেকের সাথে স্বপ্নের (ফ্রীসেক্সের দেশ!) দেশ আমেরিকাতে পাড়ি জমান

মার্কিন নাগরিকত্ব পেতে বেশী সময় লাগেনি। ফ্রীসেক্সের স্বপ্ন বিলিন হয়ে যায় যখন দেখে তার পছন্দের একজন তাকে পাত্তা কম দিয়ে অন্য একজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা! বোকা মাহাফুজ মনে করে এই আপদ (টড কেলি) কে সরিয়ে দিলেই তার পছন্দের ক্রিস্টিন মাটজফেল্ডের সাথে আবার ঘনিষ্ট হওয়া যাবে। একপর্যায়ে টডকে একা পেয়ে পিঠে মেরে বসেন, সেদিন ১৯৮৯ সালের ৯ই আগস্ট, নির্মম ভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় টড।

আমেরিকার পুলিশ ঘাশ খায় না। মাহাফুজকে খোঁজাখুজি সুরু করে। কিন্তু পায় নি।
বেগতিক দেখে অন্য স্টেটে পালিয়ে যায়। মাহাফুজ পরে একটি বাংলাদেশি গলাকাটা পাসপোর্টের সাহায্যে কানাডা হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। দাড়ি রেখে নামপরিচয় গোপন করে টেনিস কোচ হিসেবে ভালই কাটছিল মাহাফুজের জীবন। কিন্তু মার্কিন নজরদারির বাইরে যেতে পারেনি। ২০০৮ এ তাকে ধরার চেষ্টা অল্পের জন্য ব্যার্থ হয়। আবার ভুয়া পাসপোর্টে নামপাল্টে কোলকাতা। তার কিছুদিন পর দিল্লি।
মার্কিন গোয়েন্দারা ২৪ বছর পার হলেও হাল ছাড়েনা। মাহফুজের সকল আত্নিয়স্বজনের ফোন কল চেক করতে থাকে বছরের পর বছর। (মার্কিনদের হাতে পৃথিবীর সকল ফোনকলের রেকর্ড থাকে) সব কল এনালাইসিস করে নয়াদিল্লির একটি টেনিস ক্লাবের আশেপাসে তার সন্ধান পাওয়া নিশ্চিত হয়। আসিফ নামের জেনুইন বাংলাদেশী পাসপোর্ট সহ ভারতীয় পুলিশের সহায়তায় তাকে পাকড়াও করা হয়।

২৫ বছর আগের ওই অপরাধে বিচার করে গত ২৪-সে মার্চ ২০১৪ মাহফুজকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আমেরিকান আদালত। স্টেউবেন কাউন্টির জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় শোনার পর কৃতকর্মের জন্য ভীষণ অনুতপ্ত মাহফুজ কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিচারক উইলিয়াম ফি রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে পেশ করা এজাহারের তথ্যানুযায়ী,
বাংলাদেশী মাহফুজ ছিলেন ঢাকার এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক। পরে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। ১৯৮৯ সালের ৯ই আগস্ট ছুরিকাঘাতে ১৯ বছরের তরুণ টড কেলিকে হ্যামিল্টনে তার নিজ বাড়িতে হত্যা করেন মাহফুজ। কেলিকে হত্যার পর মাহফুজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে তার খোজ় পায় মার্কিন গোয়েন্দারা। নাম পালটে দাড়ী রেখে আসিফ হক নামের বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট। নয়াদিল্লিতে টেনিসের ট্রেনার হিসাবে চাকুরি করছিলেন। একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সময় মার্কিন অনুরোধে তাকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। কিন্তু এক্সট্রাডিশন আইন জটিলতায় তাকে আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। ২০১৩ র জুলাইতে তাকে বিশেষ ব্যাবস্থায় জোড়পুর্বক মার্কিন মার্শাল বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করে পাঠিয়ে দেয়া হয় মার্কিন জাষ্টিস ডিপার্টমেন্টের কাছে।

ক্রিস্টিন মাটজফেল্ডের কথিত প্রেমিক ছিলেন ২২ বছরের তরুণ মাহফুজ। কেলিকে হত্যার জন্য তার বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিল মাহফুজ। সেখানে থাকা সিগারেটের অবশিষ্টাংশই তার প্রমাণ, আংগুলের ছাপও পাওয়া গেছে। হত্যার দুই সপ্তাহ পর তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ গঠন করা হয়। তাকে হত্যার আগে কয়েকবার হুমকি দিয়েছিলেন মাহফুজ। ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের পুলিশ বলছে, কেলির পিঠে ছুরিকাঘাত করে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

এই হত্যাকান্ড দারুন চাঞ্চল্য শৃষ্টি হয়েছিল। ৯০ দশকে 'আনসলভড মিস্ট্রিজ' এবং অ্যামেরিকা'স মোস্ট ওয়ান্টেড নামে টেলিভিশনে প্রচারিত দুটি অনুষ্ঠানে এ ঘটনাটি বেশ সাড়া ফেলেছিল।

এত আলোড়ন শৃষ্টিকারি খবরটি এদেশী কোন পত্রিকায় চোখে পরলনা।

সুত্র-
এসোসিয়েটেড প্রেস, ও কিছু মার্কিন অনলাইন পত্রিকা থেকে অনুদিত।