কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল বিভক্তি ও আমরা

মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম
Published : 5 June 2012, 09:32 AM
Updated : 5 June 2012, 09:32 AM

যেহেতু রোবট দিন দিন স্বশাসিত হচ্ছে তাদেরকে নিয়ণত্রনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনের প্রয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিগত কিছুদিন ধরে বেশ সক্রিয়। সাইন্স ফিকশন জগতের কল্পনাময়ী কাহিনীর আবিষ্ট থেকে বাস্তবে এর প্রয়োগ ও ক্ষমতায়নের যথার্থতা আরোপনের জন্য উন্নত বিশ্ব নিজেদের মধ্যে অনেকদিন ধরে মাথা ঘামিয়ে যাচ্ছে।

উন্নত বিশ্বের প্রাত্যহিক জীবনে রোবটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এয়ারক্রাফট থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটার, ড্রাইভার বিহীন ট্রেন অনেকদিন ধরেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। সম্প্রতি গুগলের ড্রাইভার বিহীন কার যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যে লাইসেন্স পেয়েছে, হয়ত অল্পদিনের মধ্যেই এর বানিজ্যিক ব্যবহার শুরু হবে। ভলভোর মত নির্মাতা কোম্পানিগুলো মনযোগী হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের দিকে।

যুদ্ধক্ষেত্রে রোবটিক যন্ত্রের ব্যবহার অনেকদিন ধরেই চলছে, বিশেষজ্ঞরা মানব মৃত্যুর হার রোধে এর বেশি প্রয়োগের দিকে বেশ মনযোগী। ড্রোন নামক যন্ত্রটি এর প্রয়োগকারী দেশ কিংবা সাম্রাজ্যের প্রত্যাশা মিটাচ্ছে ঠিকই কিন্তু এর শিকার দেশ কিংবা সম্প্রদায় হারাচ্ছে তাদের প্রাণ, প্রয়োজনীয় সম্পদ।

রাস্তায় মানবচালিত গাড়ি আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চালিত গাড়ির সড়ক আইন কি এক হবে? ড্রোন এর ব্যবহার সামগ্রিক ভাবে মানব কল্যান নাকি মানব সমস্যা সৃষ্টি করছে বেশি? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিউক্লিয়ার বোমার ব্যবহার অমঙ্গল ডেকে আনলে ও পরবর্তীতে এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানব কল্যান ই বেশি করেছে বিশেষ করে এনার্জি সেক্টরে। এসব প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলছে শান্তিকামী মানুষদের। প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন মানবকল্যানের পথ অগ্রসর করেছে বটে; কিন্তু এর যথেচ্ছ ব্যবহার অনেক প্রশ্নের উদ্রেগ ও করে। যত তাড়াতাড়ি এসব প্রশ্নের মৌলিক সমাধান হবে ততই প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।

এসব কারণেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি আন্তর্জাতিক সনদ অথবা নীতিমালা অবশ্যম্ভাবী। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে যেভাবে মতৈক্য পৌছানো সম্ভব হচ্ছে একইভাবে ডিজিটাল ডিভাইড দূরীকরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ইস্যুটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির চা চক্রে সন্নিবিষ্ট করলে তৃতীয় বিশ্ব এর প্রয়োজনীয়তা কিছুটা অন্তত অনুধাবন করতে পারবে বৈ কি।

এবার আশা যাক আমাদের দেশে। সত্যি কথা বলতে কি আমরা এখনো নিজেদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সত্যিকারের ডিজিটাল সিস্টেমের সঠিক পরিকল্পনা ই নিশ্চিত করতে পারিনি সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারিক প্রয়োগ তো আর ও পরে। আমাদের দেশের ছাত্রদের আবিস্কৃত রোবট আন্তর্জাতিক ভাবে পুরস্কৃত হচ্ছে, নাসাতে প্রদর্শিত হয়েছে। কয়েকটি ওয়েবসাইট করা আর ই-লার্নিং সফটওয়ার কিংবা ভিডিও কনফারেন্স করাটাই যে ডিজিটাল ব্যবস্থা নয় সেটি অনুধাবন করা দরকার।

অনলাইন ট্যাক্স ম্যানেজম্যান্ট এর কথা প্রায় শুনি কিন্তু প্রয়োগ এখনো দেখিনি, ট্রাফিক সিস্টেমের মাথামুণ্ডু কিছু অন্তত আমার মত অনেকেই বুঝেনা, ই-গভর্ন্মেণ্ট তো কয়েকটি ওয়েবসাইটের স্ট্যাটিক পেইজ এ বন্দি।

তরুণদের মাথা খাটানোর পথ ও অবরুদ্ধ হয়ে আছে আন্তর্জাতিক পে-মেন্ট গেটওয়ের বাস্তবায়ন সুষ্ঠুভাবে না হওয়ার কারণে। আউটসোর্সিং কে উৎসাহিত করলে দেশের সামগ্রিক লাভ বেশি। গত দশকে আমাদের সত্যিকার ডিজিটাল করে তুলা টেলিকম্যুনিকেশন ফিল্ড ও লাইসেন্স বানিজ্যে ব্যস্ত।

সবকিছুর পর ও প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের অবিচ্ছেদ্যতা অগ্রসর ই হচ্ছে। নীতিনির্ধারণীরা আর ও সক্রিয় হলে ডিজিটাল ডিভাইডের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারব।।