স্বদেশী হায়েনাদের কাছে জিম্মি বাহরাইন প্রবাসীরা

এম নাসির
Published : 4 July 2017, 04:43 AM
Updated : 4 July 2017, 04:43 AM

আসুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত। বেশ কিছুদিন যাবত বাহরাইন প্রবাসীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার। এ দুর্ভোগ একদিনে তৈরি হয়নি। আর এ অসহনীয় দুর্ভোগ বাহরাইনিরা তৈরি করেনি, করেছে হায়েনার রূপধারী কিছু অসাধু বাংলাদেশি। যাদের কারণে আজ হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার জগতের দিশেহারা রাস্তা। এসব হায়েনাদের কারণে বিদেশের মাটিতে স্বদেশের পতাকাবাহী প্রবাসীরা আজ কলঙ্কিত হচ্ছে প্রতিদিন।

এক.

প্রথমেই বলে নেই এ দুর্ভোগের আসল কারণ। বাহরাইন আসতে বেশি টাকা খরচ লাগার কথা নয়। যেকোনো কোম্পানিতে একজন ওয়ার্কার বা লেবার আসতে মেক্সিমাম এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়ার কথা। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আজ সেখানে প্রতিটা প্রবাসীর বাহরাইন আসতে খরচ হচ্ছে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। কেন? তার বিবরণ- আমাদের দেশের হায়েনার প্রেতাত্মা, তাদের রয়েছে ছোট ছোট নেটওয়ার্ক। তারা কোম্পানি বা আরবি (কফিল) মালিকের কাছ থেকে ভিসাগুলো অল্প টাকায় কিনে নেয়। তারপর ভিসাগুলো এদেশেই দালাল মারফত তিন থেকে চার বার বিক্রয় বা হাতবদল করে।

যেখানে ভিসাগুলো কিনা হয়েছিল একলক্ষ টাকায়। সে ভিসা বাহরাইন থাকতে থাকতেই ভিসার দাম হয়ে গেল দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার থেকে তিন লাখে। এখন এই ভিসা বাংলাদেশে যে পাঠাবে সে শেষের জন। তখন এই দালাল বাংলাদেশে লোক খুঁজতে থাকেন।

কেউ দুর্বল আপনজন, না হলে পাড়া প্রতিবেশী গ্রামের লোকজন। প্রথম টার্গেট থাকে দুর্বল লোকদের কাছে ভিসা বিক্রির। কারণ দুর্বল হলে ঝামেলাপূর্ণ হবেনা, ভিসা বিক্রি সহজ হবে। এ পয়েন্টের লোক হয়ে গেলেই দালালের মুখে হাসি ফোঁটে আর ভিসার দাম পাঁচ লাখ হাকিয়ে এদেশে আসার সুমধুর কাহিনী শুনায়। যেমন, ভাইয়া ভিসা খুব ভালো তারাতারি আসেন, মালিক খুব ভালো, বেতন পড়বে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার মাসে।

এ কথা শুনে গ্রামের সরল সোজা মানুষগুলো দালালের খপ্পড়ে পরে যায়। তখন বাহরাইন আসার জন্যে কিভাবে টাকার এন্তেজাম করে সে কথা আপনাদের সকলের জানা আছে বিশ্বাস করি। আমার বিস্তারিত বলতে হবেনা মনে করি। তারপর দেশীয় দালালদের দিয়ে ভিসার যাবতীয় কাজ করিয়ে বাহরাইন নিয়ে আসেন।

যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশে আসা হয়ে প্রথম দিনেই তা থেকে হাজার মাইল দূরে সরে যেতে হয়। কারণ এসেই দেখে আগে যারা এ দেশে রয়েছেন, তাদের অবস্থা করুণ। দশজনের মধ্যে দু'জনের কাজ রয়েছে বাকি আটজনে বেকার। কেউ কষ্টের কারণে দেশ থেকে টাকা এনে খানা খরচ, রুমভাড়া দিয়ে চলেছে মাসের পর মাস। এভাবেই শুরু হয় একজন নতুন প্রবাসীর জীবন-যাপন।

দুই.

বাহরাইনে লোকের তুলনায় কাজের সংকট অনেক বেশি। আমি আগেই বলেছি বাহরাইন খুব ছোট দেশ। লাগবে কাজের লোক একজন সেখানে লোক আছে দশজন। বাকি নয়জন কি কাজ করবে? তারপরেও কিছু কাজ পাওয়া যায়। সে কাজ করার পর হয় আরেক বিপত্তি। বিশেষ করে বাংলাদেশী ঠিকাদারদের কাজ করলে। কাজ শেষে টাকা দেন না মাসের পর মাস। দেশে যেমন বাটপারি করে এসেছে, এদেশে এসেও সেই কুকুরের লেজুর সোজা হয়নি।

বিশেষ করে নতুন লোকদের সাথে এই আচরণ বেশির চেয়ে বেশি হচ্ছে। কারণ, ভাষাগত সমস্যা, সাহসিক দিক দিয়ে দুর্বল থাকে। এর ফয়দা পুরাটা উঠিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশি কিছু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান এদেশের সব জাগায় রয়েছে কম-বেশি। তখন বাধ্য কাজ ছেড়ে পেট বাঁচাতে পেপসির ডিব্বা থেকে শুরু করে এ্যালমুনিয়ামের টুকরা, লোহা জাতীয় যত্তসব অকেজো জিনিসপত্র জমা করতে থাকে। জমা করে বিক্রয় হয়। আর এ টাকায় অনেক প্রবাসীর কষ্টের জীবন চলছে।

এ থেকে বেরিয়ে আসার একটি মাত্র উপায়, কাজ শিখুন। কাজ নিয়ে দেখেশুনে ভালো কোম্পানিতে আসুন। দালাল ধরে বিদেশে এসে আপনার স্বপ্ন পূরণ না-ও হতে পারে। অনেক দেখেছি খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে। আর লেবার হয়ে বাহরাইন আসা থেকে বিরত থাকুন। কেননা লেবার হয়ে বাহরাইন আসার চেয়ে ঢাকা বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে ভিক্ষা করে খাওয়া অনেক ইজ্জতের। কি বুঝাইতে চাইছি তা নিশ্চয় বুঝে নিয়েছেন।

পরিশেষে বলতে চাই বিদেশে কাজ যদি করতেই চান। তাহলে বিকল্প দেশ খুঁজুন এখনি।

এম নাসির (বাহরাইন থেকে)