মরুর বুকে লাল-সবুজের বিজয় উদযাপন

এম নাসির
Published : 18 Dec 2017, 02:01 AM
Updated : 18 Dec 2017, 02:01 AM

বাহরাইনের জাতীয় দিবস ও বাংলাদেশের বিজয় দিবস একই দিনে হওয়াতে বাহরাইনের রাজধানী সহ পুরো বাহরাইনই যেন আনন্দের জোয়ার বইছিলো ১৬ ডিসেম্বরে। যেমন বাহরাইনিরা তাদের জাতীয় দিবস নিয়ে উচ্ছ্বসিত, তেমনি বাংলাদেশি কমিউনিটি আমাদের বিজয় দিবস নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলো। এ উপলক্ষে দু'দেশের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। তারমধ্যে ছিলো আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিজয় র‍্যালী।

বাহরাইনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে এদেশের সরকার তিনদিন রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করেছে। বাহরাইনের রাজধানী সহ সারা দেশের রাজপথে করা হয়েছে বিশেষ আলোকসজ্জা। রাজপথের দু-কিনারায় বাহরাইনের পতাকার ফাঁকে ফাঁকে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। যা আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের মনে আনন্দের মাত্রাটা যুক্ত করে দিয়েছে আকাশছোঁয়ায়। প্রতিটা পাড়া-মহল্লায়, দোকান-পাটে দু দেশের পতাকার সমাহার দেখে মনে হয়নি আমরা প্রবাসে আছি!

বিজয় দিবস নিয়ে আমাদের বাংলাদেশি প্রবাসী কমিউনিটিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। বাহরাইনের রাজধানী মানামার অদূরে "আ'য়ালী" নামক স্থানে বাংলাদেশের নিজেস্ব স্কুল এন্ড কলেজের ভূমিতে দু'দিন ব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলা উপলক্ষে বাহরাইনে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মনে বিজয় দিবস নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস দেখেছি।

বিশেষ এই বিজয় মেলাতে বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধ গান, নৃত্য, লোকোসংগীত সহ বিভিন্ন প্রকার বাংলাদেশি প্রোডাক্টের স্টল সেঁজেছিল লাল-সবুজের রঙে। এই মেলার বিশেষ দিকটি ছিল, বাহরাইনে বাংলাদেশি স্কুল এন্ড কলেজ নির্মানের জন্যে তহবিল সংগ্রহ করার লক্ষে, মেলায় আগত লোকদের জন্যে একটি টিকেটের ব্যবস্থা করা হয়। যে টিকিট দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হয়েছে, সে টিকেট আবার লটারি হিসাবে নাম্বার দেয়া হয়েছ। গতকাল (১৬ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মাঝে গাড়ি সহ বিভিন্নপ্রকার উপহার দেয়া হয়েছে।

হাজারো প্রবাসীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। ত্রিশ লক্ষ শহীদের দিয়ে যাওয়া "আমার সোনার বাংলা" জাতীয় সংগীতের আওয়াজ বাতাসে ভেসে যাচ্ছিল বাহরাইনের আকাশে। বারবার মনে হচ্ছিল আমি যেন বাংলাদেশের কোনো এক জাগায় দাঁড়িয়ে বিজয়ের অনুষ্ঠান দেখছি। চারিদিকে বাংলাদেশের পতাকা, বাংলা ভাষা, বাংলা খাবারের সমাহার, এ যেন প্রবাসে ছোট এক বাংলাদেশ!

সবচেয়ে আর্কষণীয় দিকটি ছিল যৌথ উদ্যোগের বিজয় র‍্যালী। শহরের বড় বড় রাজপথে দিয়ে দুই দেশের পতাকাবাহী গাড়ির বহরগুলোতে হাজারো মানুষের আংশগ্রহণ। এই বিজয় র‍্যালীতে বেজে উঠছিল দুই দেশের জাতীয় সংগীত। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষ জয়ধ্বনি দিয়ে র‍্যালীকে দিয়েছেন বিজয়ের সম্মান। তখন মনে হয়েছিল এটাই বিজয়, এটাই আমাদের সম্মান।

দেশের প্রতি সম্মান আমাদের প্রবাসীদের মাঝে অটুট আছে এবং থাকবে। আমাদের দেশের নেতাদের মাঝে আছে কী?

এম নাসির

(মানামা, বাহরাইন)