বাহরাইন বাংলাদেশি দূতাবাসের কাছে আবেদন

এম নাসির
Published : 28 Jan 2018, 08:47 PM
Updated : 28 Jan 2018, 08:47 PM

পৃথিবীর মধ্যে এমন একটি মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে যে তাঁর নিজের দেশকে ভালবাসে না! দেশের প্রতি ভালবাসা কোনো বাহাদুরি নয় বরং দেশের নাগরিক হিসেবে দেশের জন্যে সুনাম কুড়িয়ে আনার নামই হচ্ছে দেশকে ভালবাসা। পক্ষান্তরে কেউ যদি আমাকে বলে আমি দেশকে কী দিয়েছি? প্রতি উত্তরে বেশি কিছু বলতে পারবো না, তবে লেখাপড়া না জানা সত্যেও প্রবাসে দেশের মানুষের দুঃখ দূর্দশার কথা দেশের মানুষকে অভিহিত করাও আমার কাছে মনে হয় দেশকে ভালবাসার সামিল। দেশের মানুষের পক্ষে বিদেশে থাকা লাখো প্রবাসীর কিছু দূর্দশার কথা তুলে ধরছি!

বাহরাইনে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির একটি বড় বাজার বলেই সবাই অবগত। বাহরাইন থেকে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বাহরাইন প্রবাসীরাও বড় একটি অবদান রাখছেন! ভুলে গেলে চলবে না, বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা যদি না থাকতেন তাহলে পদ্মাসেতুর মতো মেগাপ্রজেক্ট করার স্বপ্ন দেখাও সম্ভব হতো না। বাহরাইনে বর্তমানে বাংলাদেশি শ্রমশক্তি এক নম্বর পজিশনে রয়েছে। ছোট দেশে লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি কাজকর্ম করে যাচ্ছেন।

আর এই প্রবাসীদের পক্ষে কথা বলার মানুষ আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। মাঝেমাঝে খবরে দেখতে পাই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রবাসীদের ভোট নিয়ে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠে। প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করবেন বলে অনেক প্রোপাগান্ডা করে মিডিয়াতে খরব বেরুই। এতে প্রবাসীরা খুশি না হয়ে বরং তিক্ততা প্রকাশ করে। কেননা, প্রবাসীরা ভোটার হতে চায়না। চায় তাঁদের দুঃখ-দূর্দশা নিয়ে দেশের নেতা-মন্ত্রীরা কিছু কথা বলুক। ভোট দিয়ে কী হয়? ভোট দিয়ে কী হয়েছে? প্রবাসীরা এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। কেননা, ভোট এখন প্রভাবশালী তৈরি করতে সহায়ক, কিন্তু নীতিবান নেতা-নেত্রী তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

অনেকদিন থেকেই প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্টের জীবন নিয়ে অনেক মাধ্যমে অভিযোগ করে আসছি। প্রতিকার পাওয়া দূরের কথা, দিন  দিন আরও ভয়াবহতা আসছে প্রবাসীদের সামনে। বর্তমানে ভয়াবহতম দিকটি হচ্ছে প্রবাসীদের অজান্তেই 'ভিসা ক্যান্সেল' সহ ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। একদিকে বড় পরিসরে প্রবাসীরা অবৈধ হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে অবাধে চলাফেরা সহ কাজের নিশ্চয়তা নেই। খবর বেড়িয়েছে গত একবছরে প্রায় চল্লিশ হাজার ভিসা বাতিল করেছে বাহরাইন সরকার।

প্রতিটা প্রবাসী বাংলাদেশ থেকে বৈধ ভাবেই বাহরাইন এসেছে। আসার সময় ভিসার সম্পূর্ণ ফি পরিশোধ করেই আসেন। দেখা যাচ্ছে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই ভিসা বাতিল করে দিচ্ছেন এদেশীয় কফিল বা স্পন্সর! বাংলাদেশের সবার জানা আছে যে, একজন লোক বিদেশে আসার সময় গ্রাম-গঞ্জে সহায়সম্বল জিম্মি করে পরিবারের একটু সুখ শান্তির আশায় পাড়ি জমান প্রবাসে। এসেই যদি দেখেন দু'মাসের মধ্যে ভিসা বাতিল হয়ে গেছে, তখন সে ব্যক্তির মন বিক্ষুব্ধ হবে।

দু'বছর মেয়াদি ভিসায় এসে বাহরাইনে এখন হাজারো বাংলাদেশিকে অবৈধ করা হয়েছে। প্রবাসীরা নিজেদের ইচ্ছাকৃত ভাবে অবৈধ হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করেনি, এটা করে দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনের কারণগুলো হচ্ছে এদেশীয় কফিল বা স্পন্সর। তারাই কিছু অসাধু বাংলাদেশিদের দিয়ে দেশ থেকে লোক আনা-নেওয়ার ব্যবসা খুলেছে। এরা ছোটখাটো লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন কাজের কথা বলে সরকারের কাছ থেকে ভিসার অনুমোদন করিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিশাল মূল্যে লোক আনার পর লাইসেন্সহীন হয়ে সটকে পরেন। লোক আনার পর প্রতিমাসের সরকারি ফি দেওয়ার কথা থাকলেও সেই ফ্রি আর সরকারের ঘরে জমা না দিয়ে তারা আর লাইসেন্স সচল রাখেনা। বাধ্য হয়েই এদেশের সরকার সেই লাইসেন্স বাতিল করে দেন।

এই লাইসেন্স বাতিলের সাথে সাথে লাইসেন্সের মধ্যে থাকা সবগুলো ভিসার মিয়াদ বাতিল হয়ে যায়। একদিকে  আসার পর কাজ কাজ না পাওয়া, অন্যদিকে বাতিল ভিসা – এভাবেই বাধ্যতামূলক প্রতিদিন শতশত প্রবাসীর উপর অবৈধ'র তকমাটা লেগে যাচ্ছে। প্রবাসে সঠিক কাগজপত্র ছাড়া একজন প্রবাসীর চলাফেরা করা কতটা বিপদ তা নিজ চোখে না দেখলে আন্দাজ করা কঠিন। এই সুযোগে একশ্রেণীর লোক এসব অবৈধ লোকদের কাজে নিয়ে প্রতিদিন প্রতারণা করে যাচ্ছে। কাজ করিয়ে ঠিকমতো টাকা দিচ্ছেনা, অসুখ-বিসুখে হসপিটালে যেতে পারছে না, স্বাধীনতা নিয়ে চলাফেরা তো দূরের কথা,  থাকার জায়গাও পাচ্ছেনা । এমন এক অসুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে 'অবৈধ' প্রবাসীরা, না পারছেন দেশে যেতে না পারছেন এদেশে থাকতে।

এই কঠিন অবস্থার সুরাহা করা প্রবাসীদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই সমস্যা কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিগণ সমাধান করে দিলে অগণিত প্রবাসীরা ফিরে পাবেন নতুন জীবন। প্রবাসীদেরকে কামলা বলুন আর কুলি-দিনমজুর বলুন, তাতে প্রবাসীরা মনে কষ্ট নিয়ে ব্যথা অনুভব করেনা। তবে ভিসা বাতিলের আতঙ্ক থেকে যদি প্রবাসীদেরকে রক্ষা না করা হয়, তাহলে অনেক প্রবাসীর আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠার আগেই নিভে যাবে।

এমতাবস্থায় বাহরাইন বাংলাদেশি দূতাবাস এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা মন্ত্রণালয়ের কাছে আকুল আবেদন করছি, আপনারা এদেশের এই ভয়াবহ চিত্র নিয়ে বাহরাইন সরকারের সাথে আলোচনা করে হাজার হাজার অবৈধ করে রাখা প্রবাসী বাংলাদেশিদের থাকা এবং কাজের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করুন। তা না হলে অচিরেই বাহরাইন থেকে খালি হাতে ফিরে আসবে হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি ।

এম নাসির
বাহরাইন থেকে