গাঁও গেরামের নাছিমা আর বিশ্ব মডেল আমাদের ক্ষুদ্রঋণ

মহি উদ্দীন মহি
Published : 4 May 2015, 06:07 AM
Updated : 4 May 2015, 06:07 AM

সারা বিশ্বে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পূর্নবাসনের চেষ্টায় যখন বিশ্ব সম্প্রদায় সোচ্চার তখন বাংলাদেশে ঋনের কিস্তির টাকা শোধ করতে না পারায় হতদরিদ্র বিধবা নাছিমার ঘর বেচে দিল তথাকথিত বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা আশা। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের গ্রামের হতদরিদ্র অশিক্ষত মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পথে ঘাটে গড়ে উঠেছে তথাকথিত উন্নয়ন সংস্থা। বিশেষত দক্ষিন এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেছে সুদী মহাজনী ব্যবসার আদলে উন্নয়ন ব্যবসা। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে এবং গ্রামে শিক্ষার হার নিন্ম হওয়ার কারনে এই উন্নয়ন ব্যবসাও গ্রামে জমজমাট। গ্রামের সহজ সরল সাধারন মানুষকে মুখে উন্নয়নের বুলি আড়িয়ে কার্যত মহাজনী ঋন গ্রহনে এক প্রকার বাধ্য করা হয়। এবার জগন্য উন্নয়নের শিকার হলেন মাদারীপুরের নাছিমা।

নাছিমার খবরটা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সাহস করে ছাপিয়েছে। এরকম হাজারো নাছিমার চিৎকার আমরা শুনতে পাই না। বাংলাদেশে আশির দশকে গ্রামীন ব্যাংকের মাধ্যমে উন্নয়ন ব্যবসার অগ্রযাত্রা। আর এই যাত্রার সুবাদে বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক উন্নয়ন ব্যবসায়ী রয়েছেন। যাদেরকে নিয়ন্ত্রন করা সরকারের পক্ষেও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ধরনের উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা প্রথমে উন্নয়ন মূলক কিছু কর্মকান্ডের নমুনা হিসেবে স্যানেটারী ল্যাটিন,পানির কল, ব্যয়োগ্যাস প্লান্ট দিয়ে শুরু করে। তার পরে শুরু হয় নিজেদের উন্নয়ন। বর্তমানে এমন কোন ইউনিয়ন নেই যেখানে উন্নয়ন ব্যবসায়ীদের একটি কার্যালয় নেই। উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা গ্রামের মানুষকে ১০০০ টাকা ঋন দিয়ে ১৫/২০% হারে সুদ হিসেব করে কিস্তির টাকা নির্ধারন করে। ঋন দেওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকে কিস্তি হিসেবে ঋনের সুদ ও আসল টাকা নিয়ে যায়। সবশেষে হিসেব করলে বছরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ঋনের আসল টাকা থাকে ২০০টাকা এবং সুদের পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৪৫%। এভাবে চলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যবসা। আর উন্নয়ন ব্যবসা যেমন নবেল পুরষ্কার পায়,তেমনি উন্নয়ন ব্যবসায়ীরাও পায়।

আজ বাংলাদেশের মাদারীপুরে নাছিমা ঘর ভেঙ্গে বিক্রয় করে উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা নাছিমা ও তার দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়ে লিমাকে খোলা আকাশের নিছে রাত্রি যাপন করতে বাধ্য করেছিল।ঠিক এরকম হাজার হাজার নাছিমা উন্নয়ন ব্যবসায়ীদের দ্বারা লাঞ্চিত হয়ে হয়তো গ্রাম ছাড়া এমনকি বাপ দাদার ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন। অনেকে আত্নহত্যার করার কথা বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে এধরনের উন্নয়ন ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রন করার জন্য মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানর ও রয়েছে। জানিনা তাদের কানে হাজারো গাঁও গেরামের নাছিমা মত মাদারীপুরের নাছিমার ঘর ভাঙ্গার কথা পৌঁছবে কিনা? তবে আমরা চাই এই দেশে আর যেন ঋনের কিস্তির টাকার জন্য কোন বিধবা নাছিমার ঘর বিক্রি করতে না হয়, যেন কোন নছিমা বাপ দাদার ভিটেমাটি ছাড়া না হয়,যেন কোন নাছিমা ঋনের কিস্তির টাকার জন্য আত্নহত্যা না করে। সেই সাথে এও চাই সরকার তথা প্রশাসন এবং নবেল বিজয়ী নামের উন্নয়ন ব্যবসায়ীদেরকে সমাজ পরিবর্তনের নামে নিজের উন্নয়নকারী উন্নয়ন ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় এনে নাছিমাদের ঘর বিক্রির দায়ে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।