পর্তুগাল ফুটবল সম্রাটের জন্মভূমি মাদে’ইরা ও বাংলাদেশের কিছু সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য

মমতাজুল ফেরদৌস জোয়ার্দার
Published : 26 Dec 2017, 07:50 PM
Updated : 26 Dec 2017, 07:50 PM

মাদে'ইরাতে কাটমল্লিকা।

১৯৯৩ সাল থেকে আমি প্রবাসী। প্রথম পর্তুগাল গিয়েছিলাম ১৯৯৬ সালে, পর্তুগালের আবহাওয়া অনেকটা বাংলাদেশের মত। এখানে তুষারপাত হয় না কখনো। তবে গড় তাপমাত্রা বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটা কম। ১৯৯৬ সালে পর্তুগাল থেকে ফিরেছিলাম ট্রেনে। যখন ট্রেন জার্মানিতে ঢুকল পুরো দেশ তুষারে ঢাকা, স্মরণ কালের তুষারপাত হয়েছিল সেবার। তারপর এত পরিমাণ তুষারপাত আর হয়নি। পর্তুগালে আমি অন্তত বার/তের বার গেছি। কিন্তু এবারই প্রথম পর্তুগালের বিখ্যাত দ্বীপ মাদেইরা'তে গিয়েছিলাম। মাদে'ইরা পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় স্থান। এই দ্বীপে প্রচুর জার্মান, ইংলিশ ও ফ্রেন্স পর্যটক আসে। দ্বীপ দেশটার প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন শিল্প। দ্বীপটা পানিপথে পর্তুগালের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে। দ্বীপটা মরক্কোর কাছে কিন্তু পর্তুগাল এর মালিক। এরকম আরও কিছু স্পেনের দ্বীপ আছে যা মরক্কোর খুবই কাছে কিন্তু দ্বীপের মালিক স্পেন। নির্লজ্জ ইউরোপিয়ানরা বিশেষ করে ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স ও পর্তুগাল যেখানে সম্পদের সন্ধান পেয়েছে, কুকুরের মত গন্ধ শুকতে শুকতে হাজির হয়েছে। আর এখন এজাতীয় কাজ করছে আমেরিকা যেমন গুয়াম, হাওয়ায় দখল করে রেখেছে। অথচ এসব দ্বীপ থেকে এদের মূল ভূখণ্ড অনেক দূরে। ১৯৮১ সালে আর্জেন্টিনার ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ দখল করে ইংল্যান্ড নির্লজ্জতার সর্বোচ্চ বহি:প্রকাশ করেছিল এই আধুনিক বিশ্বে।

সমুদ্রে রামধনু।

আসল কথায় ফিরে আসি। মাদে'ইরা পর্তুগালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী এলাকা। এই দ্বীপটার আয়তন ৮০১ বর্গ কিলোমিটার, জন সংখ্যা ২৮৯০০০ জন ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী। বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকজন হয়ত দ্বীপটা সম্বন্ধে জানেন। কিন্তু এই দ্বীপের একজন মানুষকে বাংলাদেশের অনেকই বিশেষ করে ফুটবল ভক্তরা চেনেন, তিনি হলেন ক্রিচিয়ানো রোনালদো। উনার জন্ম এই দ্বীপে এবং তিনি খুবই জনপ্রিয় তাঁর জন্মভূমিতে। মাদে'ইরার বিমানবন্দরের নাম পাল্টে এখন Cristiano Ronaldo Airport রেখেছে এই ফুটবল খেলোয়াড়ের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ। এটা পর্তুগালের চতুর্থ ব্যস্ততম বিমানবন্দর। মাদে'ইরা বিমান বন্দরটা পৃথিবীর নবম এবং ইউরোপের তৃতীয় বিপদজনক বিমানবন্দর। সাধারণত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরে যখন প্রচণ্ড বাতাস (যাকে Cross Wind বলে) থাকে তখন বিমান অবতরণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে পাশের একটা দ্বীপে বিমান নামে এবং জাহাজে করে যাত্রীদের মাদে'ইরাতে নিয়ে আসে। আমরা ১লা আগস্ট মঙ্গলবার থেকে ৮ই আগস্ট মঙ্গলবার পর্যন্ত এই দ্বীপে ছিলাম। হঠাৎ ৩রা আগস্ট থেকে বড় বড় ঢেউ দেখা দিল সেইসাথে প্রচণ্ড বাতাস। এই বাতাস অবশ্য জন জীবনে কোন সমস্যা করেনি কিন্তু কোন বিমান অবতরণ করতে পারছিল না। ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ৫৬ টা বিমান বাতিল করে দিল খারাপ আবহাওয়ার কারণে। বিমানবন্দরে প্রচণ্ড যাত্রী-জটের সৃষ্টি হয়েছিল। গ্রীষ্মকালে সাধারণত এরকম পরিস্থিতি হয় না কিন্তু এবারই প্রথম এরকম অবস্থা দেখা দিল।

১লা আগস্ট হোটেল Vila Galé Santa Cruz এ পৌঁছানোর পর থেকে এই দ্বীপদেশের মধ্যে বাংলাদেশের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি। আবহাওয়ার অনেক মিল আছে আমাদের সাথে। আগস্ট/সেপ্টেম্বরে ওখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৫°সে. এবং এ দু'মাসে গড় তাপমাত্রা ২৬.৪°সে.। আর শীতে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬.৪°সে. ও ৮.২°সে. পর্যন্ত নেমেছে এবং এ দু'মাসে গড় তাপমাত্রা ১৫.০°সে. ও ১৩.৭°সে.। বাৎসরিক সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ২২.৬°সে. আর সর্বনিম্ন ১৬.৫°সে.।

উইরোপের দেশগুলোতে রাতে সাধারণত এতটা ঠাণ্ডা হয়ে যায় যে কম্বল বা লেপ ছাড়া সম্ভব না। কিন্তু এই দ্বীপে এর ব্যতিক্রম দেখলাম। রাতে সমুদ্র পাড়ে কিছুটা ঠাণ্ডা হয়ে গেলেও নিচে গেঞ্জি ছাড়া টিশার্টে কোন সমস্যা হয়নি। আমাদের দেশের অনেক গাছ ফুল এই দ্বীপে দেখলাম। আরও দেখলাম রামধনু সাতদিনের মধ্যে তিন দিন। ইলশে গুড়ি বৃষ্টি মনে হচ্ছিল কোথায় যেন একটা যোগসূত্র আছে বাংলাদেশের সাথে। কত কিছুর সাথে যে মিল। মিল আছে বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের লাইনে বাইরে দিয়ে তার টানা হয়েছে, যা জার্মানিতে বিরল। তবে আমাদের দেশের মত ডিশের লাইন টেনে তারের জট তৈরি করেনি এরা। সারাদেশে ডিশের এই তার খুবই দৃষ্টিকটু এবং বিপদজনকও বটে। আমাদের দূর-যোগাযোগ মন্ত্রণালয় চাইলে ডিশের এই লাইন কয়েক ঘণ্টায় শেষ করা সম্ভব। উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে ৬ইঞ্চি লম্বা একটা এন্টেনা দিয়েই কাজটা করা সম্ভব।
মাদে'ইরার রাস্তা ঘাট খুবই সরু কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চেয়ে। পাহাড়ি এলাকাতে চওড়া রাস্তা করা সম্ভব না বা দুষ্কর। তবে যানজট নেই। কারণ জনসংখ্যা খুবই কম, গাড়িও খুব কম। প্রতিবছর দশ লক্ষ পর্যটক এখানে আসে যা এই দ্বীপের জনসংখ্যার তিনগুণেরও বেশি। মাদে'ইরাতে রাস্তার দু'পাশে সাইকেলের জন্য কোন রাস্তা নেই। এখানে সাইকেল চালান দুষ্কর, উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা শুধু। এদের প্রধান শহর ফুনসাল এখানে কিছু সাইকেল দেখেছি যা খুবই নগণ্য। এই দ্বীপের রাজধানী হল ফুনসাল শহর। পর্তুগালের অংশ হলেও এরা স্বায়ত্তশাসিত। ১৯৭৪সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পর ১৯৭৬ সালের ১লা জুলাই থেকে দ্বীপ দেশটা প্রায় স্বাধীন। এরা নামমাত্র পর্তুগালের ইউনিয়ন ভুক্ত। এদের নিজস্ব সরকার ও একজন রাষ্ট্রপতি আছে। আমরা যেমন স্বায়ত্তশাসনের জন্য এক সময় আন্দোলন করেছি এরাও তেমন। রাজনৈতিক দিক দিয়েও অনেক মিল আমাদের সাথে।

এদের দেশের সূচিকর্ম বেশ প্রসিদ্ধ যা ইউনেস্কো স্বীকৃত। তবে আমাদের দেশের সূচিকর্ম অনেক বেশী বৈচিত্র্যপূর্ণ। আমাদের হোটেলের সামনে যে উপহার সামগ্রীর দোকান থেকে আমরা কেনাকাটা করেছিলাম দোকানের মালিক কিছু তোয়ালে দেখিয়ে বলল এগুলোতে তার হাতের কাজ করা। হাতের কাজ হিসাবে দাম দেখলাম খুবই কম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনার এটা করে পোষায়, যত সময় লাগে এটা তৈরি করতে আর যে দাম আপনি নিচ্ছেন জার্মানিতে কেউ এটা করবে না। সেখানে আমারা হিসাব করবো সর্বনিম্ন এক ঘণ্টার পারিশ্রমিক দশ ইউরো। আপনি বলছেন এটা তৈরি করতে সময় লাগে কমপক্ষে নয়/দশ ঘণ্টা তাও একাধারে করলে। সেক্ষেত্রে এটার দাম হওয়া উচিত একশ ইউরোর মত অথচ আপনি বিক্রি করছেন মাত্র দশ ইউরোতে। উনি আমাকে বললেন যখন অবসর থাকে তখন করি সব সময় তো ক্রেতার ভিড় থাকেনা। তাছাড়া এটা আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতি, এটা আমি করি উপার্জনের জন্য না। শখ ও নেশা থেকে এবং ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য। আমি ভদ্রমহিলাকে বললাম আমার আসলে কোন কিছুরই দরকার নেই তাও আমি এটা কিনব আপনার সম্মানে। অবশ্য আমার কোন কিছুর দরকার না থাকলেও আমার কন্যা ও বউয়ের সাথে ভদ্রমহিলার বেশ সখ্যতা যা লক্ষণীয়। হা তারা এর আগেও বেশ কয়েকবার সেখানে কেনাকটা করেছে। তখন আমি একটা বিশেষ বই পড়ায় ব্যস্ত ছিলাম।

মাদে'ইরাবাসি খুব ঘটা করে নববর্ষ পালন করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আতশবাজি প্রদর্শন করে ২০০৬ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে। মাদে'ইরাতে সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাটা দুষ্কর এখানে সমুদ্র-পাড়ে কোন বালি নেই। শুধু পাথর আর পাথর আর এই পাথরের উপর দিয়ে চলা অসম্ভব। পুরো দ্বীপে আমি একটা বস্তির মত ঘর দেখেছি কিন্তু কোন মানুষ সে ঘরে দেখিনি। এদের রাজধানী ফুনসালে একদিন গিয়েছিলাম। চমৎকার শহর সাজানো গোছান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কিন্তু ফুনসালের বন্দরের কাছে একটা রাস্তার ধারে দেখলাম দুষ্টু পুরুষেরা মূত্র ত্যাগ করেছে। বেশ গন্ধ আসছিল মনে হল ঢাকার গুলিস্তানের কিছু রাস্তার কথা। শুধু গুলিস্তান না সারা ঢাকাতেই এরকম দৃশ্য মিলবে। তবে ইউরোপে এরকম দৃশ্য প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষ করে জার্মানিতে এটা বিরল।

কেবল রেল থেকে নেওয়া নীচের দৃশ্য।

ফুনসালে চমৎকার কেবল রেল আছে। ১৮৮৬-১৯৪৩ সালে যেখানে মন্টে রেলপথ ছিল সেখানেই কেবল রেলটা চালু করেছে। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে কেবল কার সিস্টেম নির্মাণ শুরু করে এবং নভেম্বর ২০০০ সালে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। নীচের স্টেশনটি কেন্দ্রীয় ফুনসালের আলমিরেন্টি রেইস পার্কে অবস্থিত। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ৩৭১৮মিটার এবং উচ্চতা ৫৬০ মিটার। নিচ থেকে উপরে যেতে প্রায় ১৫ মিনিট.সময় লাগে। ক্যাবল ওয়েতে ৮ টি ক্যাটাগরিতে ৩৯ ক্যাবিন আছে এবং প্রতি ঘণ্টায় ৮০০ জন যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম।

নিরাপত্তার দিক দিয়ে খুবই ভাল মাদে'ইরা। সবাই যখন খুশি এদিক সেদিক ঘোরা ফেরা করছে কোন ভয় নেই। পর্তুগালের রাজধানী লিজবনে এত স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করা সম্ভব না। অনেক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। রাতে আমার কিছু ছবি তোলার ইচ্ছা ছিল তাই একদিন রাতে আমি একটার দিকে বেরুলাম। নীচে নেমে বার-কিপারকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা হোটেলের গেট কয়টায় বন্ধ করেন আমি একটু বাইরে যাব ছবি তুলতে। বার-কিপার আমাকে বললেন আমরা কখনও দরজা বন্ধ করিনা। আপনি যতক্ষণ খুশি বাইরে থাকতে পারেন, দরজা খোলা থাকবে যখন খুশি ঢুকতে পারবেন। আর আমাদের দেশে একটা চার তারা হোটেলে হাজারো নিরাপত্তা কর্মী তারপরও বিভিন্ন অঘটন ঘটছে প্রতিদিন। চারিদিকে সমুদ্র এ কারণে হয়তো এরা বাইরের আক্রমণের ভয় করেনা। তাছাড়া এদের নাগরিকরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর যে সব পর্যটকরা ছুটি কাটাতে আসে তারা কোন ঝামেলায় যায় না।
মাদে'রাতে কয়েকটা বেওয়ারিশ কুকুর দেখলাম আমাদের দেশের মত। পাশাপাশি জার্মানিতে একটা মালিক বিহীন কুকুর খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু তাই না কুকুরের স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র আছে। যাদের গৃহপালিত পশু আছে তারা সরকার থেকে কিছু ভাতাও পায় পশুর যত্নের জন্য।

মাদে'ইরার সর্বনিম্ন স্তর সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং সর্বোচ্চ স্তর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮৬২ মিটার উঁচুতে। পাহাড়ে শীতকালে কিছু তুষারপাত হয়। পর্বত আরোহীদের জন্য মাদে'ইরা বেশ জনপ্রিয়। বেশ কিছু কলা বাগান এখানে দেখেছি কিন্তু আমাদের দেশের সুস্বাদু ফল গুলো এখানে নেই। যা অনায়াসে এই আবহাওয়ায় ফলান সম্ভব।

এখানে পুরুষ মহিলারা খুব সংক্ষিপ্ত পোষাকে সমুদ্রে নেমে যাচ্ছে বা হোটেলের সুইমিং পুলে নেমে যাচ্ছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না। কোন রকম নির্যাতন, ধর্ষণ, অত্যাচার বা ফতোয়ার ঘটনা ঘটছে না। কারণ এখানকার মানুষগুলোর চোখে পর্দা আছে। এই কারণেই মহিলাদেরকে পর্দার আড়ালে থাকতে হচ্ছেনা। আমাদের দেশের গড় আয় বাড়লেও অনেক মানুষেরই এখনও প্রয়োজন মাফিক শাড়ি কেনার মত অর্থ নেই। সেখানে যদি কাউকে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচতে বোরখা পরতে হয় সে টাকা আসবে কোথা থেকে। তারপর দেখতে হবে যে দেশের তাপমাত্রা ৪৪/৪৫°সে. গরমে। সেখানে পর্দা করতে হলে মানুষ সিদ্ধ হয়ে যাবে। বোরখা পরে কোন মানুষকে ভ্রমণ করতে হলে আরও কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। কারণ বাংলাদেশের কোন রেল গাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কাজ করে বলে আমার জানা নেই। সমস্যা নারীরাই যাদের জন্য আমরা একথা লিখি তারাই হয়ত আমাদের তাদের বা ইসলামের শত্রু ভেবে বসবেন।

এক সংগঠনের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের কুমারী বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হয় মৌলভীদের কাছে মসজিদে আরবি পড়তে যেয়ে। মসজিদে যারা কোরান পড়তে যায় তারা তো যথেষ্ট পর্দা মেনেই চলে তাহলে তারপরও মৌলভীরা কেন এদের উপর পাশবিক অত্যাচার করেন বলতে পারেন? আর এই মৌলভীরা তো বিভিন্ন সময়ে উপদেশ দিয়ে থাকেন যে বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের যে পাপ তার নাকি মাপ নেই। তাহলে মৌলভীরা এ জাতীয় কাজ কেমনে করেন? যারা বঙ্গবন্ধুর 'কারাগারের রোজনামচা' বইটা পড়েছেন তারা জানেন যে মসজিদের মধ্যে ১২/১৩ বছরের এক ছাত্রীর উপর পাশবিক নির্যাতন করেছিল এক মৌলভী। মেয়েটির চিৎকারে লোকজন এসে দেখে ফেলে। এ তথ্যটা পাবেন বইয়ের ৪৩-৪৪ পৃষ্ঠায়।

মাদে'ইরা সমুদ্র সৈকত।

সৈকতে যুবক-যুবতীরা।

আমাদের মহিলাদের বুঝতে হবে পর্দা আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে যেমন ইউরোপের মেয়েরা নিয়েছে। পুরুষের চোখে একটা একটা পর্দা খুব জরুরি। আর কেউ পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করলে আত্মহত্যা কোন সমাধান না। আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন একবার আমার এক প্রতিবেশী এক মেয়ে, উনি আমার চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন, আমাকে ডিস্কো প্যান্ট পরার কারণে উত্ত্যক্ত করেছিলেন। মহিলাকে আমি খালা ডাকতাম। উনি বলেছিলেন, "শুটকো পাছায় কি ডিস্কো মানায়।" আমি কিছু মনে করিনি। মেয়েদেরকে বলব একটু কঠিন হতে হবে প্রতিবাদ এবং নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। এজন্য হয়ত কেউ কেউ বিপদের সম্মুখীন হবেন। কিন্তু সেই বিপদ সামনে নিয়েই এগুতে হবে। আমাদের স্বাধীনতাও কিন্তু অনেক জীবনের এবং সম্মানের বিনিময়ে এসেছে। ইউরোপেও কিন্তু মেয়েরা অল্প স্বল্প ইভ টিজিং এর স্বীকার হয়। যেমন ধরেন Oh! what a sexy figure ইত্যাদি। মেয়েরাও ছেলেদের ছাড়েনা, পাল্টা এরকম উক্তি করে থাকে। তবে আমাদের দেশে অনেক সময় ছেলেরা সীমা অতিক্রম করে। কিন্তু কোন অবস্থায়ই আত্মহত্যা নয় বরং আজরা জ্যাবিনের মত প্রতিবাদই কাম্য, যেমন উনি নব্বই এর দশকে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে করেছিলেন অন্যের জন্য।