বাল্যবিয়ে বন্ধের এক নায়কের গল্প

এম.মনসুর আলী
Published : 15 Dec 2016, 10:40 AM
Updated : 15 Dec 2016, 10:40 AM


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবাকে বাল্যবিয়ে বন্ধের নায়ক বলা হয়। কারণ তাঁর চেষ্টা, প্রচেষ্টা, কর্মদক্ষতা ও সচেতনতায় দেশের সবচেয়ে বাল্যবিয়ে প্রবণ উপজেলা সরাইল আজ নিরানব্বই ভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা। বাল্যবিয়ে রোধকল্পে এলাকায় জনসমাবেশ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা, লিফলেট বিতরণসহ তাঁর গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসার দাবীদার।

তিনি শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্পূর্ণরূপে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে। তাঁর কাছে বাল্যবিয়ের খবর আসা মাত্রই তিনি এলাকার চেয়ারম্যন, মেম্বারদেরকে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন। এমনকি তিনি তাদেরকে নিয়ে বর-কনের বাড়িতে হাজির হয়ে অনেক বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। শতজনের খাবারের আয়োজনের দোহাই দিয়েও বাল্যবিয়ের ব্যাপারে কেউ কোন রকম ছাড় পাননি তাঁর কাছে। তিনি মনে করেন, প্রত্যেকটি শিশুর একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে। আর তার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। একটি কন্যা শিশুর জীবন বাল্যবিয়ের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে তা মেনে নেয়া যায়না।

একটি বাস্তব গল্প বলছি- রুমা (১৪) অরুয়াইল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনির ছাত্রী। কিছুদিন আগে তার বাবা বাহলুল মিয়া পার্শবর্তী গ্রামের এক ছেলের সাথে রুমার বিয়ের দিনক্ষণ ধার্য্য করেন। দেনমোহর, মেহমান সংখ্যা, যৌতুক ও স্বর্ণালঙ্কারের কথাবার্তা, তারিখ অর্থাৎ বিয়ের প্রায় সব আয়োজনই শেষ। বিয়ের বাজার করতে এসে স্থানীয় মেম্বার ও সচেতন লোকদের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবার বাল্যবিয়ে সম্পর্কে কঠিন, কঠোর ও শাস্তিমূলক নীতির কথা শুনে জেল-জরিমানার ভয়ে রুমার বাবা বাহলুল মিয়া তড়িঘড়ি করে বাজারেই রুমার বিয়ে বন্ধ করে দেন। কারণ এলাকার সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে কৃষক, জেলে কামার-কুমার সবাই ১বছর ১মাসে জেনে গেছেন, যেখানেই বাল্যবিয়ে সেখানেই এই নীতিবান কর্মকর্তার কঠোর হস্তক্ষেপ।

বাল্যবিয়ে সম্পর্কে তিনি কোন ধরনের অনুরোধ মানেন না। তাঁর চেষ্টা ও হস্তক্ষেপে সরাইল উপজেলা প্রায় ৯৯ ভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলার শ্রদ্ধেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের শুধু নাম শুনেই, ভয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ হোক, এমনটাই আমাদের চাওয়া ও প্রত্যাশা। তাহলেই আমরা একদিন বাল্যবিয়ে মুক্ত বাংলাদেশ পাবো।

তিনি তাঁর বহুমূখী কাজের ফলস্বরুপ এ বছর চট্টগ্রাম বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্হিতি নিশ্চিতকরণে'ই-মনিটরিং পাইলট'প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করায় গত ২৯ জুলাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের 'এক্সেস টু ইনফরমেশন' হতে সম্মাননা সনদ পেয়েছেন।