প্রগতিশীল সাংবাদিক এবং ব্লগাররাই বিপ্লবের অন্যতম শক্তি

মু: গোলাম মোর্শেদ উজ্জ্বল
Published : 19 Feb 2013, 07:34 AM
Updated : 19 Feb 2013, 07:34 AM

দেশ যখন অপরাজনীতির করালগ্রাসে আক্রান্ত , সামাজিক নৈতিক অবক্ষয় যখন চূরান্ত শিখরে, নিঃপেষিত,সাধারণ মানুষ মুক্তির খোজে দিশেহারা, ধোকাবাজি রাজনীতির উপর আস্থাহীনতা, ঠিক তখনি জাতীকে মুক্তির পথ দেখাতে এক ঝাঁক নীতিবান ও গনমানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার প্রগতিশীল সাংবাদিক ও ব্লগার কলম হাতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম অব্যহত রেখে চলছে।

বাংলাদেশের বিবেকবান নাগরিকদের মধ্যে এখন একটা উপলব্ধি দারুন ভাবে নাড়া দিচ্ছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে তৃতীয় একটা শুভ শক্তির আবির্ভাব। বাংলাদেশের তৃতীয় শক্তি হিসেবে যে রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান রাজনৈতিক দল দুটির অপকর্মের জন্য চাপ সৃষ্টি করতো,সমালোচনা করতো,রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্যার ব্যাপারে ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে প্রতিবাদমূখর হয়ে রাজপথ ব্যস্ত রাখতো এদের অধিকাংশই আজ পক্ষপাতদুষ্ট রোগে আক্রান্ত। এরা এখন রাজনৈতিক কৌশল নামক এক ছলাকলা বুঝ দিয়ে আওয়ামীলীগ ও বি .এন.পির ক্ষমতার তাবেদারি রাজনীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এবং সুবিধার ছিটেফোঁটা নিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

দেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবি ও সুনাগরিক আজ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দেশের রাজনীতি আজ এমনভাবে হাঙ্গর কুমির দ্বারা গ্রাসিত যে সুস্থ মানুষিকতা নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা অনেক কঠিন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনীতিতে এখন দুটি জিনিস অপরিহার্য্য হয়ে পড়েছে :
প্রথমত রাজনীতি থেকে অপরাজনীতির ভাইরাস আক্রান্ত রাজনীতিবিদদের ছেঁটে ফেলতে হবে। আর এই দায়িত্ব সাধারন মানুষের হাতে এবং এজন্য দরকার সাধারন মানষকে রাজনৈতিক ও অধিকার সচেতন করে তোলা।

দ্বিতিয়ত রাজনীতির গুনগত মান উন্নয়ন করতে হবে। আর এজন্য দরকার রাজনীতিবিদদের গঠনমুলক আলোচনা সমালোচনার , উন্নত বিশ্বের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ,পর্যালোচনা এবং প্রয়োগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন চর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা। আর এই ব্যাপারগুলো আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একেবারেই পরিলক্ষিত হচ্ছেনা , যা বোঝা যায় তাদের রাজনৈতিক পরিপন্থি বক্তব্য এবং মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা অদ্ভুদ ও বেকুব মার্কা মন্তব্য দেখে। আর নতুন করে যারা রাজনীতি যুক্ত হচ্ছে তাদেরকে গঠনমুলক রাজনৈতিক চর্চা ও গুনগত মানসম্পর্ণ নেতৃত্ব তৈরীর বিশেষ কোন পদক্ষেপ ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা মূল দলগুলোর মধ্যে নেই। নতুনদের ময়না পাখির মতো শেখানো হয় নিজের দলের নেতাদের গুনকীত্তন করা এবং প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের উপর হিংসাত্বক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া। এর মধ্যেই তাদের রাজনীতি সীমাবদ্ধ। আর এভাবে চলতে থাকলে বাঙ্গালী এক সময় মাথা মোটা লাঠিয়াল জাতীতে পরিণত হওয়ার যতেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে।

মেধা ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা ছিলো তা বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একেবারেই পরিলক্ষিত হয়না। দেশের এমন পরিস্থিতিতে একটি সুস্থ রাজনীতির ধারা এবং উন্নত মানুষীকতা সম্পর্ণ জাতি ও সমাজ গঠনের তাগিদ অনুভব করে নবরুপে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে দেশের প্রগতিশীল সাংবাদিক ও ব্লগারবৃন্দ। শুধু তাই নয় , নীতিবর্জিত রাজনীতিবিদ ,খুসখোর আমলা ,রক্তচোষা মুনাফা ভোগী ব্যবসায়িদের যে কোন ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধেও এখন অন্যদের চেয়ে বেশী তৎপর ও সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে সাংবাদিক ও ব্লগারবৃন্দ।

এর একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীর আজকের অবস্থান , যার অধিকাংশ কৃতিত্বই সাংবাদিক ও ব্লগারদের। বর্তমান ক্ষমতাশীন আওয়ামী সরকার এই স্পর্শকাতর বিষয়টি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গ্রহন করে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করলেও প্রগতিশীল সাংবাদিক ও ব্লগাররা বিভিন্ন বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও পরিবেশন এবং গবেষনা ও বিশ্লেষনধর্মী লেখনীর মাধ্যমে সংবাদপত্র,ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও ব্লগের ময়দান প্রতিনিয়ত সরগরম রেখে জনসাধারনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে এবং সরকারকে দাবী বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃ্ষ্টি করে চলেছে। যা রনাঙ্গনে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তরোবারি চালানোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে।

আজ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে শাহবাগ স্কয়ার থেকে যে শ্লোগান পৌছে যাচ্ছে সাড়া দেশে ,এই শ্লোগান শুধু যুদ্ধাপরাধীর ও ঘাতক দালালদের ফাঁসী দাবী হিসেবেই দেখছিনা,এই শ্লোগান দেশ প্রেমিকের খোলশ লাগানো জাতীর নব্য রাজাকার ও আলবদর ঘাটিতে প্রথম আঘাত হিসেবেও দেখছি। এই অভিযানকে যারা তিলে তিলে সংগঠিত করে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে তারা কোন প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা বিনিময়ে কাজ করেনি কিংবা কোন সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলে যুক্ত হয়ে কাজ করেনি। এরা দেশের নতুন প্রজন্ম,এরা দেশের মাটি এবং মানুষকে ভালোবাসে,এরা দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে হৃদয়ে লালন করে সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে দাড়াতে প্রস্তুত, আর তাইতো তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরের গৃহিনী থেকে শুরু করে স্কুলগামী শিশুটি পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজপথে নেমে এসে একাত্বতা ঘোষনা করেছে এবং কোন রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠান এই আন্দোলন থেকে ফয়দা লুটতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থানে থেকে সরকার দলীয় মন্ত্রীদের লক্ষ্য করে বোতল ছুরে বুঝিয়ে দিয়েছে জনসাধারনের হাটটিমাটিম টিম ছড়া শেখানোর দিন শেষ হয়ে এসেছে। তাছাড়া এদেরকে আরো বুঝিয়ে দিয়েছে কোন সহিংসতা ছাড়া কিভাবে দাবী আদায় করতে হয় এবং কিভাবে সাধারণ মানুষের মন জয় করতে হয়,ভালোবাসা পেতে হয়, গনমানুষের চাওয়াকে কিভাবে মূল্যায়ন করতে হয়।

সাগর রুনী হত্যার বিচারের দাবীতে সাংবাদিক সমাজ দল মত নির্বিশেষে একাত্বতার সহিদ যে আন্দোলন করছে তাও জাতীর এক মঙ্গল বার্তা বহন করছে।

শুধু যুদ্ধাপরাধ ইস্যুই নয় দেশের চলমান পদ্মা সেতু দুর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেংকারি,হলমার্ক কেলেংকারি,সাগর রুনী হত্যাকান্ড, বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড ইত্যাদি সংবেদনশীল বিষয়গুলোতেও থেমে থাকেনি সাংবাদিক ও ব্লগারা, ঘটনার নেপথ্যে পৌছে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্লেষনের মাধ্যমে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে ভন্ড রাজনীতির মুখস খুলে দিয়েছে। আর এই অভিযান অব্যহত রাখতে গিয়ে বিগত চার বছরে ১৩ জন সাংবাদিকে প্রান দিতে হয়েছে এবং ৫০০ শতাধিক সাংবাদিকসহ অসংখ্য ব্লগারকে শারীরিক নির্যাতন ও নানামুখী হয়রানীর স্বীকার হতে হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় অনিয়মের প্রতিবাদের পাশাপাশী সামাজিক অবক্ষয় রোধে সাংবাদিক ও ব্লগারদের নানামূখী পদক্ষেপ দেশ প্রেমিক হৃদয়ে আশার সঞ্চার করেছে। ধর্ষন,ইফটিজিং,এসিড সন্ত্রাস,মাদক এর মত ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা রোধে লেখালেখির পাশাপাশী মানব বন্ধন,ব্যানার,ফেষ্টুন সহ নানামূখী ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের ম্যাধ্যমে সচেতনতার সৃষ্টি করে সামাজিক বিপ্লবের পথ ত্বরান্নিত করছে। সেই সাথে দেশের শীতার্থ ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ আক্রান্ত মানুষের পাশে বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশী নুন্যতম সামর্থ নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলছে।

গনমানুষের অধিকার আদায় ও পরিসুদ্ধ দেশ গড়ার যে স্বপ্ন হৃদয়ে ধারন করে সাংবাদিক ও ব্লগাররা জাতীকে আজ উজ্জিবিত করছে তা একদিন অবশ্যই সফলতায় পর্যভূষিত হবে।
ফরাসী বিপ্লবের কথাই ধরুন, এই বিপ্লবের বীজ রোপিত হয়েছিলো লেখনীর মাধ্যমেই, তৎকালীন বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক ও সমাজ চিন্তাবিদ রুশো,ভোলতেয়ার,সাত্রে তাদের লেখায় তৎকালীন সামাজিক বৈশম্য, গীর্জার শাসকদের দৌরাত্ব ও প্রতাব,গনমানুষের নায্য অধিকার, করের টাকায় রাজাদের বিলাসী জীবন যাপন,অনিয়ম,দুর্ণীতি ইত্যাদি বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে উঠে আসে। যা খেটে খাওয়া, অধিকার বঞ্চিত ফরাসীদের মধ্যে অধিকার সচেতন ও সমাজ সচেতনতার সৃ্ষ্টি করে এবং এই সচেতনতাই ধীরে ধীরে ফরাসীদের মধ্যে অগ্নীস্ফুলিঙ্গের রুপ ধারন করে যা পরবর্তিতে দাবানলের মত সমস্ত ফ্রান্সকে দাহন করে। যার ফলাফল স্বরুপ অসংখ্য প্রানের আত্নহুতি বিনিময়ে ফ্রান্সের আজকের এই প্রজাতন্ত্র এবং অসাধারণ এক মানবাধিকার রাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বেঁচে থাকার নূন্যতম অধিকার সুনিশ্চিৎ হয়েছে।

যেসব সাংবাদিক ও ব্লগার দেশকে ভালোবেসে সুশাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন হাতে নিয়ে প্রতিদিন মেধা ও শ্রম ঢেলে দিচ্ছেন তাদেরকে বিপ্লবী সালাম ও পূর্ণ সমর্থন। আর যারা এখনো সুবিধাভোগী রাজনীতির পক্ষপাতিত্ব করে সুবিধাভোগীদের অবস্থান সুদৃড় করার নেশায় মত্ত আছেন তাদের প্রতি আহবান আসুন আজকের এই গনজোয়ারের মিছিলে সামিল হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনকে বেগবান করি এবং গনমানুষের অধিকার সুনিশ্চৎ দেশ গড়ি।