আসলে কী কিছু হবে ১২ মার্চ?

মোর্শেদ নোমান
Published : 10 March 2012, 12:36 PM
Updated : 10 March 2012, 12:36 PM

গত ০৯ মার্চ বিকেলে গাজীপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে বোর্ড বাজারে আমাদের গাড়িটি থমকে দাঁড়ায়। বোর্ড বাজার থেকে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত পথ পেরোতে ৪ ঘন্টা সময় লেগেছে। না, কোন দূর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে পথ বন্ধ ছিলনা। এই যানজট তৈরি কারণ, পুলিশ চেকপোষ্ট। আবদুল্লাহপুরে চেকপোষ্টে প্রতিটি গাড়িকে তল্লাশী করে শহরে ঢুকতে দিচ্ছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর গাড়ির সারি ধীরে ধীরে বেড়ে কয়েক কিলোমিটার লম্বা হয়ে গিয়েছিল। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল সাধারণ মানুষদের। গত কয়েকদিন এই ধরনের ভোগান্তি অসংখ্য মানুষকেই পোহাতে হয়েছে।

বিরোধী জোটের ১২ মার্চ ঢাকা চলো কর্মসূচীকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বেশ তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিরোধীদলীয় নেতারা অভিযোগ করছেন, সরকার মহাসমাবেশকে বানচাল করার জন্য ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে। আতংক ছড়াতে গণগ্রেফতার করছে বলেও অভিযোগ এসেছে জোট নেতাদের কাছে।

অন্যদিকে সরকারী দল ও জোটের নেতারা অভিযোগ করছেন, ১২ মার্চ নাশকতার চেষ্টা হতে পারে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। সেকারণে মহাসমাবেশ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে আহবানও এসেছিল অনেক নেতার বক্তব্যে।

তবে গণগ্রেফতারসহ বিভিন্ন অভিযোগ বরাবরের মতো অস্বীকার করেছে পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নাশকতার তথ্য থাকলে সেটা ঠেকানো উদ্যোগ নেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই উদ্যোগে সাধারণ মানুষ যদি ভুক্তভোগী হন তাহলে সরকারের ইমেজের জন্য ভালো কীনা সেটাও ভেবে দেখা দরকার। এমনিতেই ১২ মার্চকে সমানে রেখে সরকার ও বিরোধীদলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে সাধারণ মানুষ অনেকটাই আতংকের মধ্যে রয়েছেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় এই আতংক আরো বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। আর দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন এই কর্মসূচী নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেন, তখন সাধারণ মানুষের কী হতে পারে সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

ঘরে-বাইরে, অফিস আদালতে, পাড়ায়-মহল্লায়সহ দেশের সব জায়গায় এখনকার মূল আলোচ্য বিষয় ১২ মার্চ। কী হবে, কী হবে এই প্রশ্ন সবার মধ্যে। চায়ের টেবিলে ঝড় উঠছে সম্ভাব্য নানা বিষয় নিয়ে। সরকার তো বলেই দিয়েছে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কোন বাধা দেবেনা। সরকারী দল ও জোট ১২ মার্চ পাল্টা কোন কর্মসূচী না দেওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে সাধারণ মানুষ। যদিও ৭ মার্চ বিশাল র‌্যালি করে শক্তি দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। ১৪ মার্চ ১৪ দলের মহাসমাবেশ রয়েছে। সেদিনও জমায়েত দিয়ে নিজেদের জনসমর্থন দেখাতে চাইবেন।

কিন্তু যেসব মানুষ কোন জনসভায় যান না, রাজনীতি করেন না তারা সরকার এবং বিরোধীদলের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করছেন নিবিড়ভাবে। আগামী নির্বাচনে তারা এর জবাব দেবেন নিশ্চিতভাবে। কিন্তু এখনকার আশংকার জবাব কোনভাবেই দিতে পারছেননা। বের হতে পারছেন না আশংকার কালো থাবা থেকে।

এই আশংকার হাত থেকে তাদের বের করতে পারেন আমাদের সম্মানীয় রাজনীতিবিদরা। তারাই পারেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাকে এগিয়ে নিতে। আর এর মধ্যে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইলে তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সবার জন্যই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারো কাঁধে বন্দুক রেখে কেউ যদি শিকার করার সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে শিকারী নিজের স্বার্থ হাসিল করে চলে যাবে। অন্যরা চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারবেননা।

ফল হিসেবে ক্ষতি যা হবার তাই হয়ে যাবে এই দেশটার, আর দেশের জনগণের। আমাদের সম্মানীয় রাজনীতিবিদরা নিশ্চয়ই সেটা চান না।