যে কারণে আলোচিত ৫ জানুয়ারি

মোরশেদ তালুকদার
Published : 5 Jan 2018, 06:29 PM
Updated : 5 Jan 2018, 06:29 PM

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করায় ওই সময়ের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করেছিল। তবে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের ১২৭ জনসহ ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া অন্যদের মধ্যে ২০ জন জাতীয় পার্টির, তিনজন জাসদের, দুজন ওয়ার্কার্স পার্টির এবং একজন জেপির ছিলেন।

দিনটিকে 'গণতন্ত্রের বিজয় দিবস' ঘোষণা দিয়ে গত তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে উদযাপন করে। এবারও করছে। বিপরীতে বিএনপি 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি পালন করে আসছে এবারসহ গত চার বছর ধরে।

২০১৫ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিতে চেয়েও পুলিশি বাধায় যেতে পারেননি। তিনি অবরুদ্ধ হন নিজ বাসায়। অবরুদ্ধ অবস্থায় ঘোষণা দেন অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি। পরবর্তীতে প্রায় এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলে অবরোধ ও হরতাল পালন করে দলটি। অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি চলাকালে দেশজুড়ে সংঘটিত হয় নানা নাশকতার ঘটনা। প্রাণ হারান অনেকে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতি। তবে একের পর এক মামলায় গ্রেপ্তার হন দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। ফলে ধীরে ধীরে তৃণমূলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে দলটি।

মূলত, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে রচিত হতে থাকে ৫ জানুয়ারির ইতিহাস। ওইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ১৮ দলীয় (বর্তমানে ২০ দল) সভায় ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগকে দু'দিনের সময় বেঁধে দিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সংলাপের উদ্যোগ না নিলে তিনদিনের হরতাল।

এ বক্তব্যের পর পর আওয়ামী সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে বলা হয়, হরতাল নয়, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন।

২৫ অক্টোবরের পর দেশের জনগণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও আশা করেছিলেন, উভয় দল পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধান করবেন। কিন্তু পরদিন ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যা ছয়টায় দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত ফোনালাপ সেই সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেয়। টানা ৩৭ মিনিটের ওই ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী হরতাল প্রত্যাহার করে আলোচনার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেছিলেন, হরতাল শেষ হলে যেকোনো সময় আমন্ত্রণ জানান, আমরা যেতে প্রস্তুত। পরবর্তীতে দুই নেত্রীর সংলাপ যেমন হয়নি, তেমনি বন্ধ হয়নি বিএনপির হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিও।

এরপর ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন। একইদিন এ নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ১৮ দলীয় জোট অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

এমন পরিস্থিতিতে সব দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করা যায় কি না তা নিয়ে ওই সময় দুই দলের সাথে কথা বলেন জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। জাতিসংঘের এ প্রতিনিধিকে ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাথে তারানকোর কী কথা হয়েছে তা অজানা থেকে গেছে। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান তারানকো।