মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী না, ব্লগার মানেই নাস্তিক না!

স্বশিক্ষিত ভদ্রলোক
Published : 17 Nov 2015, 06:50 PM
Updated : 17 Nov 2015, 06:50 PM

আচ্ছা, আপনি যদি শোনেন কোন মাতাল গাড়িচালক আপনার পরিচিত এক ব্যাক্তিকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে, আপনি কি আপনার নিজের গাড়িটি ভেঙ্গে ফেলবেন? কিংবা আপানার ড্রাইভার কে তাঁর বাপ-মা তুলে গালিগালাজ করবেন? তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন? কিংবা গাড়ি চড়াই বন্ধ করে দিবেন? আমার মনে হয় কোনটাই করবেন না!

সম্প্রতি প্যারিসে এবং বৈরুতে জঘন্যতম সন্ত্রাসী হামলা হয়ে গেলো। সিরিয়ায় হচ্ছে, লেবাননে হয়েছে, লিবিয়ায় হয়েছে, ফিলিস্তিনে যুগ যুগ ধরে চলছে। এর আগে ইরাকে হয়েছে, আফগানিস্তানে হয়েছে, চেচনিয়ায় হয়েছে, বসনিয়ায় হয়েছে, ভিয়েতনামে হয়েছে। এই সবগুলো হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং বিচার দাবি করি, সাথে সাথে যত প্রাণ এই সমস্ত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে ঝরে গেছে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি।

অনেকেই বলছেন প্যারিস হামলা নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে গছে, একদল ফ্রান্সের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে, অন্য দল অতীতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এবং সম্প্রতি বৈরুতে হামলার সময় 'কেন সহানুভূতি দেখানো হলোনা' মর্মে প্রশ্ন দাঁড় করাচ্ছে। আমি তৃতিয় একটি দল দেখতে পাচ্ছি! লেবাননের প্রতি তাঁদের ভূমিকা 'এরকম তো হয়েই থাকে' ধরনের। কিন্তু ফ্রান্সের প্রতি তাঁরা যতটুকু না সহানুভূতি দেখাচ্ছে, তারচেয়ে বেশি মুসলিম সম্প্রদায়'কে নিয়ে নোংরা কথার ফুলঝরি ছোটাচ্ছে।

মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধী'কে কোন মুসলিম মেরেছিলো? ইন্দিরা গান্ধি'কে কোন মুসলিম মেরেছিলো? কোন আত্মঘাতী মুসলিম বম্বারের হামলায় রাজীব গান্ধী সহ ১৫জন মারা গিয়েছিলো? জন ফিৎযেরাল্ড কেনেডি'কে কোন মুসলিম মেরেছিল? অ্যান্ডারস্‌ বেহ্রিং ব্রেইভিক নামক যে উম্মাদ'টা ২০১১ সালে নরওয়েতে একটি সামার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে নিরীহ ৭৭টি প্রাণ কেড়ে নিলো, সে কি মুসলিম ছিলো? একই বছর লন্ডনে যে স্মরণকালের ভয়াবহ দাঙ্গা হলো, তা কি মুসলিম সম্প্রদায় ঘটিয়েছিল? এরকম ভূরি ভূরি উদাহরণ দেয়া যাবে, যার কোনটাই একজন মুসলিম কিংবা মুসলিম সম্প্রদায় দ্বারা সংঘটিত হয়নি! একজন কিংবা একদল সন্ত্রাসী কোন ধর্মের তা মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হলো সে বা তাঁরা সন্ত্রাসী, এবং এটাই তাঁদের পরিচয়। একদল বিপথগামী লোক ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে নিরিহ-নিরস্ত্র মানুষ মেরে তা জ্বিহাদ নামে চালিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে সন্ত্রাস দমনের বাহানায় বিশ্বমোড়লেরা জবরদস্তি অন্যের ঘরে ঢুকে যুগ যুগ ধরে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের চামচা একজনের উঠোনে আশ্রয় নিয়ে এখন পুরো বাড়ীই দখল করার পাঁয়তারায় আছে, আঙ্কেল স্যাম এর সহযোগিতায় প্রতিদিন ঐ ভূ'খণ্ডের আসল মালিকদের মেরে সাফ করছে।

এরা সবাই সন্ত্রাসী!

আপনি ফ্রান্সের পতাকা শুধু নিজের প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যাবহার করবেন কেন, ফ্রান্সের পতাকা দিয়ে জামা কাপর বানিয়ে পড়া শুরু করুন, আমার কোন আপত্তি নেই! আপনার ঘরের দেয়ালে সিডনি অপেরা হাউজ এবং আইফেল টাওয়ারের ছবি টাঙিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে আগরবাতি জ্বালান, আমার কোন আপত্তি নেই! লেবানন'কে আপনি খরচের খাতায় তুলে দেন, তাতেও সমস্যা নেই! কিন্তু ফ্রান্সে হামলা হলো বলে আপনি এই দেশের মুসলমানদের তথা গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে তাচ্ছিল্য করে কথা বলবেন, ঢালাওভাবে সবাইকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দিবেন, উদর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাবেন, তা একজন মুসলিম হিসেবে আমি মেনে নিতে পারিনা। অন্যের পাছায় আঙ্গুল দেয়া'কেই কি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বলে? ধর্মের বিরুদ্ধে দু'কলম লিখলেই কি ব্লগার হয়ে যায়? ব্লগিং তো আমিও করি, কই আমার লেখায় তো উস্কানির বিষ মেশানো থাকেনা! আমার অনেক সহ-ব্লগার আছেন, যারা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ উপস্থানা দেন, অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে শালীন ভাষায় প্রতীবাদ জানান। আসলে, যারা ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে তাঁরা মূলত ফেইম-ক্রেইযি (খ্যাতির ভুখা), ধর্ম যেহেতু একটি স্পর্শকাতর বিষয়, তাই এর বিরুদ্ধে লিখলে খুব সহজেই লাইমলাইটে আসা যায়, যা শুধু তাঁদের লেখার দৈন্যতারই পরিচয় বহন করে। তোমার লেখায় যখন কেও ঘাস-পানি দেয়না, তখন তুমি আরেকজনের ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করো! লেখার মতো অনেক বিষয় আছে, ধর্ম নিয়েও লেখা যায়, কিন্তু সেটা হওয়া উচিৎ নিজ ধর্মের সঠিক বিষয়গুলির উপস্থাপন এবং ভুল প্রচলনের নিবারণ। নিজে যে ধর্মই মানো কিংবা ধর্মই না মানো, নিজের ঘরে ন্যাংটো হয়ে নাচো, তাতে কারো কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু যখন অন্যের লুঙ্গি ধরে টানাটানি করো তখন তো গাত্রদাহ হবেই! তোমাদের মতো দু'চারটে পাতি লেখকদের কারনে আজ ব্লগারদের অপর নাম নাস্তিক হয়ে গেছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর বদ্ধমূল ধারনা যে, ব্লগে মনে হয় শুধুই ধর্মের অবমাননা হয়, এটা যে নিজের বলতে না'পারা কথাগুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার এক অনন্য মাধ্যম, তা তাঁদের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। তোমাদের মত মানসিক বিকারগ্রস্থদের কারনে আপামর জনসাধারণের কাছে এই প্ল্যাটফর্মটি একটি চরম নেতিবাচক পরিচয় নিয়ে চলছে। আমি যদিও এখানে শুধু ব্লগের কথা উল্যেখ করেছি; ধর্ম নিয়ে বিষদগারকারি'রা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো'তেও সমান তালে তাঁদের বিষ উদগিরণ করে চলেছে।

সবাইকে একটা কথা বলতে চাই; মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী না, ব্লগার মানেই নাস্তিক না!

Facebook: https://www.facebook.com/mortuza.abdullah.9