বাপকা বেটি, সিপাইকা ঘোড়া

পারভেজ শামীম
Published : 8 June 2012, 05:35 AM
Updated : 8 June 2012, 05:35 AM

পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে, শান্তি চায় না; সুখ চায় না; ভালভাবে আত্মমর্যাদায় গর্বিত হয়ে বাঁচতে চায় না। প্রত্যেকেই চায় সুখ, শান্তি আর সম্মৃদ্ধি। জন্ম হোক যথা, কর্ম হউক ভাল। কথাটা 'গবরে পদ্ম ফুল' এর অধিকারী ব্যক্তির সম্মান বৈশিষ্ট সমুন্নত রাখতে বলা হয়ে থাকে। আসলে বাস্তবে তা কতটা বজায় থাকে ব্যক্তি জীবনে। অনেকাংশেই তা ভেস্তে যায়। এটাই বাস্তব আর এটাই চিরন্তন সত্য যা শুধু প্রবাদ নয় প্রত্যেকের বাস্তব জীবনের সাথে পর্যালোচনা করলেই ফুটে উঠে যে, ''জাতের মেয়ে কাল ভালো আর নদীর পানি ঘোলা ভালো।''

একটি শাপলা ফুল যে কোন নর্দমায় জন্মাক না কেন, তাঁর বৈশিষ্ট গুণ সর্বদা সমুন্নত থাকে। জাতীয় ফুলের মর্যাদায় তাঁর কোন ঘাটতি থাকে না। কেউ কখনও ভুলেও ভাবে না যে, এটা নর্দমায় জন্মেছে বলে এটাকে জাতীয় ফুল বলা যাবে না। অবশ্য ফুলটি নীচু জায়গায় আসন পেয়েছে বলে তার কোন সমস্যা নেই। কারণ সে ভালভাবেই জানে যে, যে পরিবেশেই সে থাকুক না কেন, তার মর্যাদা সর্বদা সর্বক্ষেত্রে বজায় থাকবে। মর্যাদা-সম্মান বাহুবলে আর সার্টিফিকেট ধরে রাখা যায় না।

অপর দিকে একটি কচুরি পাতার উপর কয়েকটি চিত্র শিল্পীর অজান্তেই তুলির আঁচড়ের প্রলেপ পরে যায় , আর এতে সে পানির বিন্দু কোণা আকড়ে ধরে রাখার বিশেষ বৈশিষ্ট অর্জনের গর্বে বর্জকন্ঠে বিশ্ব দরবারে খ্যতিমান সেজে আত্মগর্বে, অহংকারে দিশেহারা। গ্রীষ্মের পর বর্ষা আসবেই, আসল পরিচয় ফুটে উঠবেই সময়ের ব্যবধানে। ঠিক তাই গ্রীষ্মের পর বর্ষা এসে হাজির। আর তার আসল রুপ অনায়াসে প্রকাশ পেয়ে গেল সমাজে-সম্রাজ্ঞে। তখন তার আর কিছু করার উপায় রইলো না। সে একটু লজ্জাও পেল না। আসলে সে লজ্জা পাবে কি করে? তার তো লজ্জা পাবার জ্ঞানবোধ তার গড়ে ওঠা পরিবেশ থেকে শেখে নাই। এভাবেই সত্যের জয় চিরদিন অটুট থাকে কিছু সময়ের ব্যবধানে। যে, যে পরিবেশে জন্মায়, তার আচার-আচরণ, ব্যবহার আর ক্রিয়াকলাপের মাঝেই তার প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে। শান-শওকত আর রাজকীয় পোষাকের মাঝেও প্রকৃত পরিচয় আড়াল রাখা যায় না।

অনেক দিন আগের কথা। একদিন এক রাজার হঠাৎ এমন এক মরণ ব্যাধি দেখা দিল যে, তার মাথার যন্ত্রণায় মরণপ্রায়। কোন মতেই রাজার মাথার যন্ত্রণার উপশম হচ্ছে না। উজির, নাজির রাজ্যের সমস্ত হেকিম, কবিরাজ ডেকেও কোন ফল পায় না। রাজা তার মাথার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়েছে। অসহনীয় যন্ত্রণায় রাজা রাগে ক্ষোবে স্থির করলো সে নিজেই তার যন্ত্রণার উপশমের উপায় বের করতে রাজ্যে বেরিয়ে পড়বে। রাজা মাথার যন্ত্রণা নিয়ে রাজ্যের মাঝে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। একেতো মাথা ব্যথা, তার পর সারা রাজ্যে ঘুরতে ঘুরতে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে রাজা হতাশ হয়ে একটি বট বৃক্ষের পাশে বসে কাতরাচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রণায় হতাশ হয়ে এরক পর্যায় রাজা মৃত্যু কামনা করতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ রাস্তার পাশ থেকে বয়ে আসা প্রবাহমান বাতাসের মৃদু গন্ধে তার শরীর মন কেন যেন সতেজতার ছোয়া পেল। তার মাথা ব্যথা কম অনুভব করলো। রাজা'তো অবাক! বাতাসে কি এমন জাদু আসে যে, সামান্য মৃদু বাতাসের গন্ধে তার মাথা ব্যথা সেরে যাচ্ছে। রাজা লক্ষ্য করলো রাস্তার পাশে একটি লোক দাড়িয়ে আছে। ক্ষণিক পরেই জীর্ণ পোষাক পড়া কাঁধে ঝুলানো কাঠের বাক্স নিয়ে হেটে চললো। লোকটি কিছুদূর যেতেই তার মাথা ব্যথা পূর্বের ন্যয় বৃদ্ধি পেতে লাগলো। রাজা বুঝতে পারলো লোকটির মাঝে কি এমন রহস্য আসে যে, লোকটির কাছ থেকে আগত প্রবাহমান বাতাসের ঘ্রাণে তার সমস্ত মাথা ব্যথা সেরে যেতে লাগলো আর সে দূরে যেতেই তা পূর্বের ন্যয় বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো। রাজা নিশ্চিত হলো লোকটির মাঝে নিশ্চয় কোন রহস্য আছে। তাই রাজা তার মাথার প্রবল ব্যথা নিয়েই কাতর স্বরে লোকটিকে ডাকতে থাকলো। লোকটি পিছন ফিরে চেয়ে একটু দাঁড়ালো, দাঁড়াতেই আবার বাতাসের ঘ্রাণ রাজার নাকে আসলো আর সে জাদুর মতো সতেজতা পেল। কিন্তু লোকটি আবার হাটতেই শুরু করলো আর রাজার অসহণীয় মাথা ব্যথা শুরু হলো। আবার ডাকাতে শুরু করলো রাজা। কিন্তু বৃদ্ধ লোক হাঁটতেই থাকলো। এক পর্যায় রাজা ডাকতে ডাকতে হামাগুরি খেয়ে মাটিতে লুটে পরে হাত উঁচু করে লোকটিতে ইশারায় অনুরোধ জানালো তার কাছে আসতে। লোকটি বুঝতে পারলো তার অসহায়ত্তের কথা। সে ফিরে আসতেই রাজা ওঠে বসলো। আর কাছে এসে দাড়াতেই রাজার সম্পূর্ণ মাথা ব্যথা ভালো হয়ে গেল। রাজা তার পরিচয় লোকটিকে জানালো আর সে লোকটি চমকে উঠলো। রাজা তাকে নিয়ে তার প্রাসাদে হাজির হলো। রাজা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ্য। তার আর কোন রকম মাথা যন্ত্রণা নেই । রাজার মহলের সবাই তো অবাক! এ কি করে সম্ভব যে, কোন দাওয়াই নেই, শুধু একজন মানুষকে পাশে রাখলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। এতো আজব কান্ড! রাজা লোকটিতে সারাক্ষণ তার পাশে পাশে রাখে। লোকটি একটু দূরে সরে গেলেই রাজার মাথা ব্যথা বেড়ে যায় আর পূর্বের অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করে। তাই সে লোকটিকে পিছপা হতে দেয় না। রাজা এক মহা সমস্যায় পড়লো। সে টয়লেটে গেলেও তাকে পাশে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। হিসু করতে গেলেও পাশে দাড় করিয়ে রাখতে হয়। টয়লেটে কাপরের আড়ালে লোকটিকে দাড় করিয়ে রাখা হয়। কিন্তু রাতে যে রানীকে নিয়ে ঘুমাতে যাবে রাজা সেখানে কি করবে? এ এক মহা মসিবত! কি করা যায়? কি করা যায়? কোন উপায়ন্তর না পেয়ে রাজা তার উজির, নাজির হেকিম নিয়ে লোকটির রহস্য উদঘাটনের জন্য সভা বসালো। লোকটির বাপ-দাদার চৌদ্দ গুষ্টির পরিচয়ে দেখা গেল সে জাতিগত একজন কবলার (মুচি)। কবলারটির জীর্ণ শীর্ণ কন্ঠে বেড়ে এলো তার ফুটফুটে বাচ্ছার কথা; যাকে আজ থেকে ৩০ বছর আগে রাজার লোকেরা তার বাচ্ছার কপালে রাজ টিকা দেখে উঠে নিয়ে এসেছিল। পাশ থেকে বৃদ্ধ হেকিম রাজাকে বললো। রাজা মশাই নির্ভয় দিলে আমি একটি সত্য কথা প্রকাশ করতে চাই। রাজা বললো হা বলুন, নির্ভয়ে বলুন হেকিম সাহেব। রাজার অভয় পেয়ে হেকিম সাহেব বললো রাজা মশাই আপনার পিতামহের কোন সন্তান না থাকায় প্রাসাদ থেকে রাজ্যে রাজ্যে লোক পাঠানো হয়। আর রাজার লোকেরা কপালে রাজ টিকা দেখে যে বাচ্চাটিকে নিয়ে এসেছিল সে আর কেউ নয়, তা আপনেই মহারাজ। সভা সমাবেশে রাজার দরবারে আজাকের রাজার প্রকৃত পরিচয় উম্মোচন হয়ে গেল। কিন্তু আজ যে রাজা সমস্যার জন্য সভা বসিয়েছে তার কি হবে। বিচক্ষণ হেকিম সাহেব রাজার পূর্ণ পরিচয় পেয়ে বুঝতে পারলো রাজার দাওয়ায়ের কথা। হেকিম সাহেব আবার রাজাকে বললো, রাজা মশাই অভয় দিলে আপনার দাওয়ায়ের কথা আমি বলতে পারি। রাজা মশাই বললো, কি বলেন হেকিম সাহেব নির্ভয়ে বলেন। যে মাথা ব্যথার কারণে আজ আমি জীবন হারাতে গেছিলাম। আবার যে মাথা ব্যথার কারণে আমি আমার আসল বাবা'কে ফিরে পেলাম। আর যে ব্যথার কারণে আমি রাণীর কাছে যেতে পারছি না, সে অসহ্য মাথা ব্যথার দাওয়ায়ের কথা নির্ভয়ে বলুন হেকিম সাহেব। হেকিম সাহেব বললো রাজা মশাই আপনার অভয় পেয়ে বলছি, আপনি সুদীর্ঘ কাল যে চামড়ার গন্ধ থেকে দূরে ছিলেন তার ফলশ্রুতিতে আজকে আপনার এ অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক মাথা ব্যথা। যা আর কোন দিন ভালো হবে না। তবে এখন থেকে আপনার গলাই যদি একটি চামড়ার জুতার মালা বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখা যায় তাহলে আপনে সে চামড়ার জুতার ঘ্রাণে প্রতিনিয়ত সুস্থ্য থাকবেন। রাজার বেচে থাকার তাগিদে তাই করা হলো। রাজার গলাই চামড়ার জুতোর মালা পড়িয়ে দেয়া হলো। ব্যাস রাজা সুস্থ্য হয়ে গেল। কিন্তু রাজার গলায় জুতোর মালা কেমন লাগে, কেমন শুনায় আর কেমনই'বা দেখাই। আর এই আধুনিক লোক সমাজে বেরুই বা কি করে। তাইতো ডিজিটাল এযুগে চামড়ার তৈরি গোফ বানিয়ে রাজার নাকের নিচে লাগিয়ে হলো।

একজন সৎ আদর্শবান-নিষ্ঠাবান, আদর্শবান আমার বাবা। সৎ-মানেই সাহস, সৎ-মানেই কষ্ট, সৎ-মানেই যন্ত্রণা, সৎ-মানেই নিরবে কান্না, সৎ-মানেই সুখ আর সৎ মানেই শান্তি আর বুক ভরা আত্মতৃপ্তি। যে শান্তিতে সকল অপ্রাপ্তিতেও বুকটা গর্বে ভরে ওঠে। শান্তি পাই আত্মতৃপ্তিতে। জন্মের পর যখন থেকে বুঝতে শেখার শুরু, তখন থেকেউ কষ্ট, কষ্ট আর কষ্ট। জীবনে গড়ে ওঠার প্রতিটি পদে পদে কষ্ট আর কষ্ট। একি কষ্ট? যে পরিবেশের প্রতিটি পরতে পরতে দূর্নীতে ভরা সেখানে সৎ ভাবে জীবন যাপন করা যে, কতটা কঠিন তা একজন সৎ জীবনের অধিকারী ছাড়া কেউ উপলদ্ভি করতে পারবে না। গ্রামের যে কোন সালিশ-দরবার, যে কোন সমস্যার সঠিক সমাধান পাওয়া যায় তার কাছে, যে সৎ। এটা প্রতিটি অসৎ ব্যক্তিও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। তাই যে কোন সালিশ দরবার আর সমস্যার সমাধানে তাকে ডাকা হয়। ন্যয় বিচার পাওয়ার আসায়। এতে সমাজের সকলেই বাহবা দেয়। কিন্তু যখন তাদের মাঝে সেই সৎ, ন্যয় নিষ্ঠাবান লোকটিকে তাদের প্রতিনিধি বানানোর জন্য উপস্থাপন করা হয়, তখন টাকার বিনিময়ে অসৎ ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্বের পতাকা দিতে কেউ চিন্তা করেনা। এভাবে সমাজে হলো বঞ্চিত। চেয়ারম্যান হতে গিয়ে হলো- লাঞ্চিত। সবাই বলে সৎ, কিন্তু কেউ দিল না ভোট। সৎভাবে উপার্জনের অল্পকিছু টাকা ভোটের মার্কা আর আপ্যয়নে হয়ে গেল ফাঁকা। খুব কষ্টে জীবন চলে যেত সামান্য খেয়ে। সমাজে সবাই সম্মান করে ন্যয় পরায়ণ বলে। ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে করতে হয় ধার-দেনা-কর্জ। এর পর কষ্টের মাঝে সংসার চলে নিম্নমধ্যবিত্তের পারিবারিক যত সামান্য আয়ে। সমাজের প্রতিনিয়ত হাজার সমস্যার সমাধানে কোন বিনিময় করেন না সে সৎ বলেই। বাবার সৎ নিষ্ঠাবান জীবনের কষ্টের মাঝে গড়ে ওঠা আমার। তার আদর্শে আদর্শবান হওয়ার স্বপ্নে বুকটা ভরে যায়। কিন্তু সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরানোর কষ্টে দুচোখে জ্বল ঝরে নীরবে। একবার উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যানও হলেন। সেখানে অন্যান্য সদস্যদের মনোভাবনা, স্কুলের অগাত উপার্জনের পথ থেকে তাদের পকেট ভরানোর। যার প্রতিবাদ করায় হয়ে গেল সবার শত্রু। নিজের আত্মমর্যাদা আর সৎ জীবনের আদর্শ বজায় রাখতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন অনায়াসে। কারণ যেখানে সবাই অন্যায়ের পক্ষে সেখানে একাকি সৎ নিষ্ঠার তলোয়ার নিয়ে ঠিকে থাকা বেশিক্ষণ যায় না। অথচ তার সংসার খরচ ঠিকমতো হয় না। ছেলের লেখাপড়ার খরচ সচ্ছল ভাবে যোগান দিতে পারে না। তবুও অসৎ হয় না সেই বাবা। শত কষ্টের মাঝে বাবার আদর্শের কথা মনে পড়লে অনেক অনেক ভালো লাগে। সকাল সন্ধ্যা যার কাছে শত শত সমস্যা নিয়ে ভিড় জমাই নানান রকম মানুষ। তাদের উপকারার্থে কিছু অর্থ নিলে আর কোন সমস্যা সংসারে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু তা কখনও ঘটেনি এ অভাবী সংসারে। তার পর দাদা তার সহায় সম্পত্তি তার অন্য ছেলে, নাতী নাতনীদের লেখে দিল অকারণে বেইমানি করে। দাদার বৃদ্ধ বয়স, থানা পুলিশ করলে তার সমস্যা হবে ভেবে সব মেনে নিয়ে গার্মেন্টস্ এর কোন একটি পদে অল্প বেতনের চাকুরীতে সংসার চলে। এই প্রবাহমান ধারাবহিক কষ্টের সংসারের মাঝেই গড়ে ওঠা আমার। সউকল কলেজ জীবনে কোন দিন প্রাইভেট পড়ার সৌভাগ্যটুকু কপালে জোটেনি এই আধুনিক যুগে। বেসরকারী কলেজে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতেই কপালে জুটে গেল ছোট্ট এক সরকারী চাকুরী। ভাগ্যকে স্মরণ করি যে, যেখানে সবাই টাকা দিয়ে সরকারী চাকুরী পায় না সেখানে পাঁচটি পয়সা বিনা আমার চাকুরী হওয়াটা বাবার আদর্শের ফল ছাড়া কিছুই নয়। বাবার আদর্শে কোন কষ্টই কষ্ট মনে হয় না। সদা সর্বদা সৎ জীবনের নিষ্ঠাবান জীবনের শত দুঃখ কষ্টের মাঝে যে সুখ শান্তির ছোঁয়া পেয়েছি তা কখনও ভুলতে পারিনা। তাইতো যে চাকুরীর চারপাশে অসৎ জীবনের চতুর্দশপদী হাত ছড়িয়ে আছে উপরি আয়ের জন্য সেখানে আমি সৎ জীবনের অধিকারী হিসেবে নিজেকে আত্মগর্বে গর্বিত করতে পারছি আমার বাবার আদর্শের ফল হিসেবে। আমার বিশ্বাস এবং বাস্তব জীবনের এ পরিক্রমায় স্পষ্ট সৎ নিষ্ঠাবান হওয়ার জন্য তার পরিবারের পূর্ব পরিচয় সম্পূর্ণ দায়ী। সৎ ভাবে জীবন যাপনের যে কত রকম সমস্যা সে সমস্যার সম্মুখীন ছোট বেলা থেকে দেখে না আসলে সৎ ভাবে জীবন পরিচালনা করা কোনক্রমেই সম্ভব হতো না। যে নিত্যপণ্য দ্রব্যের দাম প্রতিনিয়ত উর্ধ্বমুখী সেখানে সামান্য তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী হয়ে দুইটি পরিবারের ছয় জন লোকের সংসার খরচ চলানো কোন ক্রমেই সম্ভব হত না। সৎ ভাবে জীবন পরিচালনার কারণে অনেক ব্যয়বহুল সমস্যা বিনা খরচে হয়ে যায়। আর এভাবেই বেচে থাকা সম্ভব হয় কষ্টের মাঝে আর মানসিকভাবে আত্মতৃপ্তির মাঝে। চতুর্দশপদী বলতে, শতকরা ৯৯ জনই যেখানে অসৎ সেখানে সৎ থাকা এক জিহাদ করার সমান বৈকি। তা কিসের জন্য সম্ভব হয়েছে? তা সম্ভব হয়েছে আমার সৎ, ন্যয় নিষ্ঠাবান, আদর্শবান সেই বাবার কারণে। যে বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যার আজ অবধি নেই কোন মুক্তি যোদ্ধার সার্টিফিকেট। বাবার বড় দুঃখ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এলাকার একজন লোকের রাইচ মিলে হাতের কবজি কাটা যায়। অথচ সে রাজনৈতিক নেতার হাত ধরে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার হাত কাটা গেছে বলে মুক্তি যোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে এ সমাজে। বাবার দুঃখ বৃথা যায়নি। যেখানে মানুষ মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকুরী পাচ্ছে, সেখানে তার ছেলে নিজের যোগ্যতায় চাকুরী পাচ্ছে বিনা পয়সায়। আর এখানেই বাবার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট এর চেয়ে বড় স্বার্থকতা। তার পরেও বাবাকে বলেছি, সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য। তার একই কথা আমার সার্টিফিকেট নেই বলে কি তোমাদের চাকুরী হয়নি? তবে কেন? বাবা যখন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তখন তার কমান্ডার যিনি ছিলেন সে একজন দেশের মন্ত্রী। তার সাথের অনেক স্মৃতি আছে আমার বাবার অথচ সে মাথা নত করবে না আজকের এই মন্ত্রীর কাছে। কারণ, সে মন্ত্রীও আজ আর এই দরিদ্র বাবার কথা মনে রাখে না। নাইবা রাখুক মন্ত্রী খোঁজ। নাইবা রইলো সার্টিফিকেট। বাবার নিজের আত্মগর্ব, মর্যাদা, সৎ, নিষ্ঠাবান জীবনের সার্টিফিকেট তো আর কেউ ক্ষুন্ন করতে পারবে না। এটাই আমাদের বড়া অহংকার আমি একজন সৎ, আদর্শবান বাবার যোগ্য সন্তান। আর একেই বলে ''বাপকা বেটা, সিপাই কা ঘোড়া ।'' আমি আমার বাবার আদর্শের মাঝেই জীবনটা উৎসর্গ করতে চাই।

বর্তমান দেশনেত্রী তাঁর বাবার আদর্শ নিয়ে বিশ্বের দরবারে যে নজির রেখেছেন তাও তাঁর যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে যোগ্য প্রতিদান। আর একেই বলে ''বাপকা বেটি, সিপাই কা ঘোড়া।'' তাঁর বাবার গুণগান আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত। আর আমার বাবার যোগ্য প্রতিদান তার ছোট্ট সংসার ঘিরে এই দেশ জুরে আবৃত। একজন আদর্শ বাবার আদর্শ সন্তান হওয়ার গর্ব যে, কতটা আনন্দদায়ক, আত্মতৃপ্তিময় তা একজন আদর্শ বাবার সন্তান ব্যতীত কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। তাই প্রতিটি ঘরে আদর্শবান, নিষ্ঠাবান, সৎ ন্যায়পরায়ণ বাবার আদর্শে গড়ে উঠুক ঘর, সংসার সমাজ রাষ্ট্র এ দেশ।।