ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মার বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। পৃথিবীতে আর কোন দেশের স্বাধীনতার জন্য এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে তা অন্তত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়না। আমাদের স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যেই ছিল শোষণ এবং বৈষম্যহীন একটি দেশ গড়ে তোলা। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? যে শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা স্বাধীনতা এনেছি আজ স্বাধীন বাংলাদেশে সে শোষণ এবং বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে। বরং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একটি দেশকে খুব সুন্দরভাবে ধ্বংস করতে হলে প্রথমে সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং তরুণ প্রজন্মের মনোবলকে ভেঙ্গে দিতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখন আইসিইউতে ভর্তি, আর তরুণ প্রজন্ম আইসিইউতে ভর্তির খুব কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, যে বৈষম্যের শিকার হয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, সেই স্বাধীন দেশেই আজ বৈষম্য!
পৃথিবীর একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যেখানে রয়েছে মেধাবীদের তিরস্কার করা হয়, আর অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের পুরস্কৃত করা হয়! এদেশ চলে ৫৬ শতাংশ কোটা দিয়ে। আর সেখানে মেধাবীর সংখ্যা মাত্র ৪৪ শতাংশ! একবার ভাবুন তো, আপনার এলাকার বা আপনার গ্রামের ১০০ জন লোকের মধ্যে ৫৬ জনকে কোটায় আর মাত্র ৪৪ জনকে মেধায় নিয়োগের কথাটি। আসলেই কি আপনার এলাকায় ১০০ জনের মধ্যে ৫৬ জন কোটাধারী পাওয়ার কথা? বাস্তবে তা কখনোই সম্ভব না। সরকারের বিদ্যমান যে সমস্ত কোটার ক্যাটাগরি রয়েছে তাতে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩-৪ ভাগের বেশি হবার নয়, কিন্তু তাদের জন্যই মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ কোটা! কি আজব এক ব্যাপার।
এদেশের তরুণ প্রজন্ম প্রতিনিয়তই দেখছে পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষা সবখানেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। মেধাবীদের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা নামক কৌটায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। অন্য কোন দেশে আমাদের দেশের মতো মেধাবীদেরকে এমন বাধা দিলে নিশ্চিত তারা আত্মহত্যা করতো।
মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। তাঁদের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রয়েছে। তাঁরাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁরা বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার জন্যই এদেশকে স্বাধীন করেছিল, কিন্তু তাঁদের আদর্শ এবং দেশপ্রেমকে বিক্রি করে চলছে আমাদের সরকারগুলো। সরকারের ক্ষমতা পালাবদলের সাথে সাথে এদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা থাকে নীরবে-নিভৃতে।
শোষণ-নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশের তরুণ প্রজন্ম আজ ফুঁসে উঠেছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে। সরকারের প্রতি আহবান, গোঁয়ারি বা আনাড়ি সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মার শান্তির জন্য হলেও একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করুন।
মামুনুর রশিদ
ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট