বিজ্ঞানও প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের জীবনযাত্রা এগিয়ে চলেছে । আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছি। পৃথিবী ছেড়ে মঙ্গলে গিয়ে বসবাসের কথা ভাবছি। ইচ্ছে করলেই আমরা পাঁচ মিনিটে গোটা বিশ্বের খবর পৌঁছে দিতে পাড়ি পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। আর আমরা যতই প্রযুক্তির উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছি ততই মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছি। সমাজের অনিয়ম গুলো যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এক দামিনির মৃত্যু পুরো ভারতবর্ষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নারীর প্রতি হিন্ মানসিকতার বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি। এই রকম হাজারও দামিনি আছে আমাদের সমাজে,দেশে। যারা নির্যাতন,গণধর্ষণ,নিপীড়ন,অগ্নিদগ্ধ, পাচার, সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। কয়টা বা আর পত্রিকার পাতায় আসে। বেশীর ভাগই লোক চক্ষুর অন্তরালে থেকে যায় ।
গতকাল আমি ফেইসবুকে আমার এক বন্ধুর ওয়ালে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখে অবাক হলাম একটি মেয়েকে নির্যাতন করার দৃশ্য। ভিডিওতে যা দেখলাম একটি ছেলে ফুল হাতে নিয়ে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায়। মেয়েটি কি ভেবেছিল জানিনা,তবে ভেবেছিল হয়ত বন্ধুত্বের বা প্রেমের অফার করবে কিন্তু ছেলেটি খুব কাছাকাছি গিয়েই মেয়েটিকে জোরে গালে একটি চর বসিয়ে দেয়। যেন রাষ্ট্র ,আইন ,সমাজ ,ধর্ম তাকে লাইসেন্স দিয়েছে মেয়েটিকে নির্যাতন করার জন্য। কি অবলীলায় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সে চর মারে। আর তার বন্ধুরা তা ভিডিও করে রাখে।
ফলশ্রুতিতে খোঁজ নিতে থাকি কারা এরা। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যা পেয়েছি তাই আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। “২০১০ সালের অক্টোবর মাসের কথা। কিশোরী একটি মেয়ে। কলেজে গিয়েছিল ক্লাস করতে। জুয়েলস অক্সফোর্ড ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল, সিরাজগঞ্জ। সৃজন নামে তার এক সহপাঠী এই কাণ্ডটি করেছিল ক্লাস রুমে । সৃজনের বাবা আইনের লোক। পুলিশের ওসি । তাই, স্থানীয় ভাবেই “শালিস” বসিয়ে মীমাংসা হয়ে গিয়েছিল ঘটনাটির। কিন্তু ভিডিও ক্লিপটি রয়ে গেলো সৃজন এবং তার বন্ধুদের কাছে। পরবর্তীতে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় কিন্তু সৃজনও তার বন্ধুরা এই ভিডিও ক্লিপটি ছড়িয়ে দেয় ফেইসবুকে । তার ঠিকানা
১। সৃজন আহমেদ । বাবার নামঃ আবুল কালাম আজাদ, বগুড়ার ধুনট থানার ওসি । বাসাঃ রোড নং- ০৫, বাড়ী নং- ২৪,ফ্ল্যাট নং- ডি৫, ধানমন্ডি। এ-ই ভিডিওটিতে যে মেয়েটিকে অপমানিত করে।
২। শিপলু,। যে ভিডিওটি করেছে। বাড়ি সিরাজগঞ্জ, এখন ঢাকায়ই থাকে। পড়ে, DIFT BMLএ। ক্যাম্পাসের ঠিকানা ঃ মিরপুর ১০ (স্টেডিয়াম এর ৫ নাম্বার গেট এর অপজিট)।
৩। মাসুদ রানা, যে সৃজন এর সাথে ফেইসবুকে সেই ভিডিওটা ছড়িয়ে দিয়েছে। সৃজনের বন্ধু। এর প্রোফাইলে AIUBর স্টুডেন্ট লিখা আছে। এর ঠিকানা এবং পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
একবার ভাবুন এই মেয়েটি যদি আপনার পরিবারের কেউ হত তাহলে হলে কি বিবেক ঘুমিয়ে থাকত? চুপ করে থাকতেন ? এইসব ঘটনা আমাদের মানবিক বোধকে করেছে প্রশ্নের সম্মুখীন । আমি মনে করি, নারী নির্যাতনের মূল কারণ গুলো হচ্ছে ১, আইনের দূর্বলতা। ২, সামাজিক অবক্ষয়। ৩, সুশিক্ষার অভাব। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একটি মেয়ে যতই শিক্ষিত, আধুনিক হোক না কেন সে মেয়ে মানুষই থেকে যায় কখনো মানুষ হয়ে উঠতে পারেনা । আমাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন । অনেকেই বলবেন এটি সাধারণ ঘটনা । আমি বলব, এই সাধারণ ঘটনা গুলোর সঠিক বিচার হয়না বলেই অপরাধীরা আরো অপরাধ করতে সাহস পায়। আর নির্যাতিতরা যদি আইনের আশ্রয় নেয় দেখা যায় বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয় যার ফলে আরো বেশী সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাছাড়া বখাটাদের থাকে রাজনৈতিক পরিচয় বা তার পরিবার কতটুকু ক্ষমতাবান এর উপর নির্ভর করে বিচার প্রক্রিয়া । প্রয়োজন শক্তিশালী আইনের শাসন। সেই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীল গুণগত নৈতিক শিক্ষা দরকার। শুধু পরীক্ষায় পাশের জন্য জ্ঞান চর্চা নয় , পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ , শ্রেনীও লিঙ্গবৈষম্য, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের শিক্ষা দিতে হবে। এই দায়িত্ব আপনার আমার সকলের ।
( ভিডিও ক্লিপটি আপলোড করতে পারছি না বলে দুঃখিত ।)
১ জানুয়ারি ২০১৩। নিউজার্সি ইউএসএ থেকে ।
এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে http://sylheteralap.com/news/category/opinion/detail/34977
http://www.pbc24.com/index.php/article-posts/article-details?article_id=638
সজল যাযাবর বলেছেনঃ
একমত ।
এম আর ফারজানা বলেছেনঃ
ধন্যবাদ ।
জিনিয়া বলেছেনঃ
ফারজানা আপু আপনাকে ধন্যবাদ। “আমার ব্লগ.কম” এ এই ইস্যুটি নিয়ে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা হচ্ছে..আমাদের বিডি ব্লগে ব্যাপারটা আপনি তুলে এনেছেন জন্য কৃতজ্ঞ। পুলিশের ছেলে হয়ে একটা ছেলে একটা মেয়েকে অত্যাচার করে পার পেয়ে যাবে, তা কখনো আমরা সচেতন নাগরিক হিসেবে হতে দেব না..ছেলেটি এবং তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আমাদের সকলকে সোচ্চার হতে হবে।
শুভকামনা।
এম আর ফারজানা বলেছেনঃ
ধন্যবাদ পড়ার জন্য । আসলে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা খুব একটা পরিবর্তন হয়নি এখনও। আর সঠিক বিচার হলে অপরাধ কমে আসবে। ভাল থাকুন ।