বিবেক জাগ্রত করুন, সচেতন হন

এম আর ফারজানা
Published : 24 Sept 2016, 07:26 AM
Updated : 24 Sept 2016, 07:26 AM
ইদানিং দেখা যায় ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি প্রতিশোধপরায়ন। তাদের চাওয়ার একটু-এদিক সেদিক হলেই আক্রমণ করে বসে অন্যের উপর। সেটা বাবা-মা কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা যেই হোক না কেন। মুগ্ধ, ঐশী এদের মত সমাজের আনাচে-কানাচে প্রচুর আছে, যা পত্রিকার পাতায় আসে না। অথবা অনেকে সামাজিকতার ভয়ে চেপে যায় মানসম্মানের কথা ভেবে। অনেক ছেলেরা আবার প্রেম প্রেম খেলা খেলে ভিডিও করে নেটে ছেড়ে দেয়। আবার নামাজ পড়া, ভদ্র অমায়িক ছেলেটার এক সময় পরিচয় মেলে সে জঙ্গি, অথচ বাবা-মা জানে না।
কিন্তু এমন হচ্ছে কেন? কী কারণে? ছেলেটা কি একদিনেই এমন হয়ে গেল? তা কি করে হয়! বাবা-মা পারিপার্শ্বিকতা কি দায়ি নয়? অবশ্যিই দায়ি। বাবা ব্যস্ত চাকুরি বা ব্যবসা নিয়ে। মা ব্যস্ত সিরিয়াল নিয়ে, জব করলে তো কথাই নেই! মাকেও বাসার বাইরেই থাকতে হয়।
এত ব্যস্ততার ভিড়ে বাবা-মা হয়ত দেখছে ছেলেটা, মেয়েটা লেখাপড়া ঠিক ভাবে করছে কিনা, তাদের কাছে রেজাল্টই আসল। ছেলে মেধাবি, আধুনিক বন্ধু-বান্ধবি আছে এতেই গর্বিত। সোসাইটিতে মাথা উঁচু করে চলে। ছেলেমেয়ে যা চায় তাই দেয়, বিশেষ করে টাকা। ভাবে থাক না,ভালো রেজাল্ট করেছে, একটু আনন্দ ফুর্তি করুক। বন্ধু-বান্ধবি নিয়ে ঘুরে বেড়াক। বাবা-মায়ের ছেলেমেয়ের মনের খবর নেয়ার সময় নেই। তারচেয়ে তারা হিসেব করতে বসে যায় কি করলে আরো দুটো টাকা আয় করা যাবে।
আচ্ছা, আপনি কি কখনো ছেলের হাত ধরে বলেছেন বাবা চল আজ সারা দিন তোর সাথে থাকবো। মা, চল আমরা একটা ফুলের বাগান করি ছোট ব্যালকনিতে। একটা পাখি পোষ মানাই , তোর জন্মদিনে পাখিটাকে মুক্ত করে দিব আকাশে। চল আমরা আজ একসাথে রান্না করি,তোর মাকে আজ ছুটি দেই। তোর রুমটা গুছিয়ে দেই। চল ক্রিকেট খেলা দেখি একসাথে বসে। চল ছুটির দিনে সবাই মিলে তোর দাদা দাদিকে দেখে আসি। (যদি বেঁচে থাকে, আজকাল তো আর একসাথে কেউ থাকে না)। কিংবা তোর চাচা, বা ফুফুর ,খালাদের বাসায় যাই। ছেলেকে, চল একসাথে নামাজে যাই। আমি শিউর উপরের এই লেখা গুলো দেখে আপনি হাসছেন আর ভাবছেন এগুলো কী বলে!
অথচ আপনারই আপনার ছেলেমেয়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হওয়ার কথা। একজন বাবা, মা সবচেয়ে কাছের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ। যে সন্তানের জন্য তারা জীবন দিতে পারে। অথচ এই কাজ গুলো করতে পারেনা সময়ে অভাবে বা দায়িত্বহীনটা এক প্রকার। বাবা দোষ দেয় মায়ের,আর মা দোষে বাবাকে। শিক্ষক, প্রতিবেশী তারা তো অনেক পরে আসে। ছোট বেলা থেকেই আপনি যদি আপনার সন্তানের মনের মধ্যে ভালোবাসার, স্নেহের বীজ বপন করে দেন, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী চলতে শিখিয়ে দেন, বড় হয়ে সে যেখানেই থাকুক না কেন অন্তত অমানুষ হবে না ,খুনী হবে না।
অনেক বাবা-মা আবার ছেলেমেয়েদের কথা শোনায়। দেখ, অমুকের ছেলেটা মেয়েটা কি ভালো স্টুডেন্ট, কি ভদ্র। আর তুই ? কড়া শাসনের শিকলে আটকে ফেলে ছেলেমেয়েকে। আর তখনি ছেলেমেয়ে সে শিকল ভেঙ্গে বের হয়ে আসতে চায় যে প্রকারেই হোক, তখন ছেলেমেয়ে খুন করতেও দ্বিধা করে না। তাদের মাঝে কোন অপরাধ বোধ কাজ করে না ,চিন্তা থাকে একটাই শাসনের বেড়াজাল থেকে বের হওয়া। বন্ধু বান্ধব থেকে ধার করে বুদ্ধি নেয়, বাবার পকেট চুরি করে। জীবন কোন দিকে গেল ভালো না মন্দ সেটা ভাবেনা।
অথচ এই ছেলে মেয়েটাই হতে পারত একজন সমাজসেবী, হতে পারত বিজ্ঞানী, হতে পারত বড় ক্রিকেটার। আমরাই আমাদের সন্তানদের প্রতিভা নষ্ট করে ফেলি। নষ্ট হওয়ার পর বলি কিভাবে সে এ রকম হল , আশ্চর্য হই।
একটা সন্তান জঙ্গি, এ কথা শুনার পর বাবা মা আকাশ থেকে পড়ে !! বিশ্বাস করতে চায় না তার সন্তান এমন হতে পারে ! অমায়িক ,নামাজ পড়া ছেলেটা কি করে জঙ্গি হল বাবা মা জানেনা, জানে না প্রতিবেশী। আসলেই কি বাবা জানেনা? কিছুই কি আঁচ করতে পারেনা?
অবশ্যই পারে, না পারার কোন কারন নেই। মূল কথা হল তারা খোঁজ নিয়ে দেখেনা সময় নেই, অবহেলা করে,জানলেও ভাবে আরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন মৃত্যু হয় সারা দেশবাসি জানে তখন আর সন্তানের লাশও নিয়ে আসে না। সত্যি কি বাবা-মায়ের মনে কষ্ট হয় না? হয়। সামাজিকতার ভয়ে তারা কষ্টটা আড়াল করে।
আপনি যদি একজন ঘুষ খোর হন, দুর্নীতিবাজ হন তাহলে আপনার সন্তান কিভাবে মানুষ হবে?  বাবা মা' রা আপনারা আগে নিজেদের দিকে তাকান সন্তানের কথা চিন্তা করে অন্তত। আপনি যদি শুদ্ধ মানুষ হন, আপনি যদি সন্তানের মনের মধ্যে ভালোবাসার বীজ বপন করে দেন, আপনার সন্তান যদি জেনে যায় আপনি তার জন্য অনেক করেন তার প্রতি আপনার সহমর্মিতা আছে, বিত্তের চেয়ে সে বেশী মুল্যবান আপনার কাছে তাহলে সে সন্তান কিছুতেই আপনাকে অবহেলা করবে না বলে আমি মনে করি। আর না হয় একটা সময় এসে দেখবেন পত্রিকার পাতায় আপনার সন্তানের নাম। সে খুনী, সে জঙ্গি, সে রেপিস্ট।
তখন আপনার অঢেল অর্থবিত্ত , সামাজিক মর্যাদা, গৌরব সব ধুলোয় মিশে যাবে। সন্তানের অধপতন দেখে সেদিন শুধু আপনার নিঃশ্বাসে একটাই কথাই প্রতিধ্বনিত হবে এ আমি কি করলাম। কেন তাকে মানুষ করলাম না। সময় তখন অন্যদিকে বাতাস বইবে আপনার আর করার কিছুই থাকবে না। তাই সময় থাকতে সন্তানের খোঁজ রাখুন, তাকে সময় দিন ।।
এম আর ফারজানা
নিউজার্সি , যুক্তরাষ্ট্র থেকে।