আত্মহত্যা মানে জীবনের অপচয়

এম আর ফারজানা
Published : 2 August 2017, 03:52 AM
Updated : 2 August 2017, 03:52 AM

জীবনের মানে লড়াই করে বাঁচতে শেখা। এই যে জীবন এটা তো আর ফিরে আসবে না! তাহলে কেন বাঁচবো না? কষ্ট, দুঃখ হতাশা, বঞ্চনা পাই বলে? এমন মানুষ কি আছে যে, তার জীবনের পথটা খুব সহজ? না নেই। তাই, কেউ ঠকালে, বঞ্চনা করলে হতাশা নয় বরং ঘুরে দাঁড়ান। জীবনে কষ্ট পেলে সেই কষ্টকে ধারণ করে লড়াই করুন। আর এ লড়াই করতে হয় নিজেকেই। জীবন আপনার, কাজেই লড়াই অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না।

র‌্যাম্প মডেল ও অভিনেত্রী রিসিলা আত্মহত্যা করেছে। যদিও আমি তাকে ভালোভাবে চিনিনা। বিষয় সেটা নয়, একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, কেন সে আত্মহত্যা করল এটাই ভাবছি? তার কষ্টগুলো শেয়ার করার মত কি একজন মানুষও ছিল না? হয়ত ছিল না। একজন মানুষ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হতে হতে যখন বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায় না তখনি আত্মহত্যা করে। হতাশ হতে হতে নিরাশ হয়ে তার স্বপ্নগুলো মরে যায়। রিসিলাও হয়ত ঐ পর্যায়ে গিয়েছিল। অথচ, কি আশ্চর্য! হাজারো মানুষ আমাদের চারপাশে। প্রাণ খুলে কথা বলার মত, বিশ্বাস করে আপন ভেবে কষ্ট শেয়ার করার মত মানুষ কজন আছে? আমার ধারণা রিসিলার তেমন কেউ ছিল না। তাই বলে কি আত্মহত্যা করবে? না, আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। বরং আত্মহত্যা মানে জীবনের অপচয়।

আজকাল আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। সামাজিকতা, পারিপার্শ্বিকতা, অর্থবিত্ত, যশ- এগুলোর পেছনে ছুটছে মানুষ। চাই, চাই আর এগুলো ধরতে গিয়ে মানুষ তার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলছে আনন্দ গুলো, সুখ গুলো। জীবনকে উপভোগ করার জন্য খ্যাতি, বিত্ত নয় বরং আনন্দ করার যে পথটা, সেটা জানা দরকার। নদীর ধারে ঘুড়ি উড়িয়ে, কিংবা জ্যোৎস্না রাতে ছাদে বসে গলা খুলে গান করেও আনন্দ করা যায়। একজন অন্ধ মানুষকে সাহায্য করে বা একজন বৃদ্ধ মানুষের সাথে সময় করে গল্প করেও সুখ খোঁজা যায়। শুধু ভাবতে হবে এই জীবন আমার, সুখ, আনন্দ এই গুলো আমার। আমি আমার মত থাকবো, আমার মত ভাববো। অন্যরা যা খুশি ভাবুক। রিসিলা হয়ত সেই আনন্দ করার পথটা খুঁজে পায়নি। রিসিলা কি তার বাচ্চাটার সাথে আনন্দ নিয়ে কখনো খেলেছে? মনে হয় না। হয়ত খেলেছে দায়িত্ব বোধ থেকে। আনন্দ করে নয়, আর সমস্যাটা সেখানেই। অনন্ত আর কোন কারন না থাক এই ফুটফুটে বাচ্চাটার কথা ভেবেও বেঁচে থাকতে পারত। এই বাচ্চাটা একদিন বড় হবে এই বাচ্চাটাও তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারত। রিসিলা হয়ত সেভাবে কখনো ভাবেই নি।

আসলে ভাবনাগুলো সুন্দর করে সাজালে জীবন সুন্দর হয়। আর সেই ভাবনা গুলোকে সুন্দর করার জন্য শুধু দরকার মনোবল, সাহস। আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে নিজের জন্য, জীবনের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য। দেখবেন আপনি ঠিকি পারছেন।

যারা এখনো হতাশায় ভুগছেন, আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাদের বলছি- একবারও কি ভেবেছেন সেই সব মানুষদের কথা যারা অন্ধ, পৃথিবীর কোন আলো দেখতে পায় না অথচ মনের আলো দিয়ে, শক্তি দিয়ে কিভাবে নানা চেষ্টা করছে দেখার, বেঁচে থাকার। যে মেয়েটা প্রতিদিন পুরুষের হাত বদল হয় সেও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। জীবন যুদ্ধে লড়াই করার তার সে-কি চেষ্টা। মানুষের ধিক্কার, অপমান সহ্য করে তবুও সে দাঁড়িয়ে আছে, বেঁচে থাকে, কারণ তার কাছে বেঁচে থাকার মত সুন্দর আর কিছু নেই।

একজন বেকার ছেলে চাকুরির জন্য নিঃস্ব হয়ে ঘুরে ঘুরে স্বপ্নগুলো হারিয়ে ফেলে হতাশায় ডুবে যায়, সেও কিন্তু এক সময় ঘুরে দাঁড়ায়। একজন বাবা, কিংবা মা যে সন্তানকে সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করে আর সেই সন্তান যখন তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, সেই কষ্ট নিয়ে তারা বেঁচে থাকে। কারণ তারা বাঁচতে চায়। জীবনে সব কাজে সফল হবেন এমন কোন কথা নেই। কোথাও চেষ্টা করেও ব্যর্থ হবেন। তাতে কি?

এই জীবনে অনেক অনেক কাজ আছে, আপনি চাইলেই আপনার স্বপ্নগুলো সাজাতে পারেন। একবার ভেঙ্গে যাবে আবার স্বপ্ন দেখবেন, আবার ভাঙবে আবার দেখবেন। দেখবেন একসময় ঠিকই সফল হয়েছেন। কেউ আপনাকে ছুড়ে ফেলে দিলে সেখান থেকেই আবার উঠে দাঁড়ান। প্রতিবেশীরা ধিক্কার দিবে? সমাজ ধিক্কার দিবে? ফিরে তাকাবেন না। সমাজ নষ্টা বলবে বলুক। জীবনে চলার পথে আত্মবিশ্বাস খুব দরকার। আপনি মরে গেলে দুইদিন মানুষ আফসোস করবে তারপর ভুলে যাবে। অথচ আপনি যদি সমাজের বাঁধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন, তবে এই সমাজ, মানুষ প্রতিবেশী, তারাই মনে রাখবে আপনার কাজের জন্য।
———

এম আর ফারজানা

নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

১ অগাস্ট ২০১৭