ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার, খুব দরকার

এম আর ফারজানা
Published : 1 Sept 2017, 05:29 AM
Updated : 1 Sept 2017, 05:29 AM

রূপা ছিল একজন শিক্ষিত, স্বনির্ভরশীল মানুষ। জীবনের হেরে যাবার পথ গুলোকে অতিক্রম করে অগ্রসর হচ্ছিল ধাপে ধাপে। পরিবারের জন্য, নিজের জন্য তার ছিল জীবন যুদ্ধ । যে যুদ্ধে রুপা ছিল একজন সাহসী সৈনিক। সে কি কখনো ভেবেছিল তার জীবনের এই পরিনতি হবে? নিশ্চয়ই না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ এক ভয়ানক বার্তা। সাধারণ থেকে অসাধারন, সাহসী, শিক্ষিত মেয়েরা ও এখন চুপসে যাবে। তাদের ভীতর মনের অজান্তেই কাজ করবে এক ধরনের ভীতি। প্রতিবাদী মেয়েটিও ঘাবড়ে যাবে তাকে না আবার কোন লালসার শিকার হতে হয়।

এর জন্য দায়ী বিচারহীনতা। কয়টা ধর্ষণের বিচার হয়েছে? দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কি পেয়েছে? না পায়নি। ইয়াসমিন থেকে শুরু করে তনু ,পূজা – কয়টার বিচার হয়েছে? প্রতিদিন ধর্ষণ হচ্ছে। কেন হচ্ছে? এই একটি প্রশ্ন যখন করি নিজে নিজেকে প্রথমে যে উত্তরটি খুঁজে পাই তা হলো বিচারহীনতা। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সারা দেশে ধর্ষণ মামলা হয়েছে ১ হাজার ৯৪৪টি। এর মধ্যে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৫২ টি, এছাড়া ২০১৬ সালে প্রতি মাসে গড়ে সারা দেশে ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৩১০ টি।
একটা সমাজের জন্য, একটা রাষ্ট্রের জন্য একজন নাগরিকের জীবনের নিরাপত্ততার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরিহার্য।

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে ধর্ষণ শেষে ঘাড় মটকে হত্যা করা হয়। ধর্ষকরা, খুনিরা জবানবন্দি দিয়েছে, তারা স্বীকার করছে। তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কেন হবে না? এই রকম একদল অসভ্য, বর্বর যদি রূপাকে ধর্ষণ করে হত্যা করে পার পেয়ে যায়, ভবিষ্যতে এই রকম আরো হাজারো অসভ্য, বর্বর মাথা তুলে দাঁড়াবে। ভাববে ধর্ষণ করলে কী হবে? কিছুই হবে না। বরং ধর্ষণ করে এসে বন্ধুর কাছে গর্ব করে বলবে জানিস, আজ না একটা ধর্ষণ করেছি। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে নেশা করতে করতে অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে। যেন ধর্ষণ কোন সাদামাটা কিছু।

একবার ভাবুন আপনার পরিবারের কোন মেয়েকে ধর্ষণ শেষে ঘাড় মটকে খুন করা হয়েছে, কেমন লাগবে ? না এমনটি ঘটুক তা কখনই কামনা করি না। আপনার পরিবারের সদস্যের কথা চিন্তা করে হলেও রাস্তায় নামুন, জোরালো ভাবে প্রতিবাদ করুন। আজ যা রুপার সাথে ঘটছে কাল তা আপনার পরিবারের কারো সাথে ঘটতে পারে। একবার রুপার মায়ের কথা ভাবুন,
রূপার মা বুকে পাথর চেপে বয়ে বেড়াবে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা, প্রতি মুহূর্ত তাকে দগ্ধ করবে তার সন্তানের ধর্ষণের ঘটনাটি। পৃথিবীর কোন আদালত, কোন আইন, কোন বিচার এই যন্ত্রণা থেকে তাকে মুক্তি দিতে পারবে না। তবুও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। যেন রূপার মায়ের মত কোন মায়ের এই যন্ত্রণা আর পেতে না হয়। যেন কোন মা কষ্টের সাগরে ডুবে না যায়। যেন কোন রূপার স্বপ্ন গুলো হারিয়ে না যায়। যেন রূপার মত মেয়েরা ঈদে ফিরতে পারে মায়ের বুকে। মাকে যেন বলতে পারে, মা, দেখতো  এই শাড়িটা পছন্দ হয়েছে? আগামিবার যখন বোনাস পাবো এর থেকে ভালো শাড়ি কিনে দেবো। মা তখন অভিমানের সুরে বলবে কি যে করস না! তোরা সুখে থাকলেই তো আমরা ভালো থাকি। তবে মনে মনে সন্তানের জন্য গর্ববোধ করবে। রূপারা কি এ ভাবেই নির্মম, জঘন্য ঘটনার শিকার হবে? না, মানতে পারি না।
বিচার দরকার। ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার। খুব দরকার। ধর্ষণের শাস্তি রুপার মায়ের বুকে সন্তান হারানোর দগদগে ক্ষত সরাতে পারবে না জানি। তবে ভবিষ্যতে অন্য কোন রূপার মায়ের বুকে যেন ক্ষত না হয় তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।


এম আর ফারজানা
নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
৩১ আগস্ট ,২০১৭।