শাকিব-অপুর বিচ্ছেদে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের সন্তান

এম আর ফারজানা
Published : 5 Dec 2017, 04:53 AM
Updated : 5 Dec 2017, 04:53 AM
ভেঙ্গে যাচ্ছে শাকিব অপুর সংসার। অপু চাইছিলেন টিকিয়ে রাখতে কিন্তু পারলেন না। না এটা অপুর ব্যর্থতা নয় বরং শাকিবের মানসিক দৈন্যতা। যে অপু তার জন্য ধর্মান্তরিত হল, বাবা-মা কে ত্যাগ করল, প্রায় ৮ বছর সংসারের কথা গোপন করল তাকেই কিনা তালাকের মাধ্যমে প্রতিদান দিল শাকিব! এটা এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতাও বলা যায়। একজন মানুষ জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ করে আঁকড়ে ধরল তাকে আর সেই মানুষটা তাকে ছেড়ে গেল! অনেকে বলবেন ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি বলব তারকারা হল আইকন, আইকনদের ব্যক্তিগত ব্যপার বলে কিছু নেই। তাদের চলা, বলা সবকিছুই সমাজের উপর প্রভাব পড়ে।
অপু, আপনি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছেন। মুভিতে শাকিব নায়ক হলেও বাস্তবে খলনায়ক। প্রতিষ্ঠিত মানুষের পতনের প্রথম ধাপ হল সংসার ভাঙ্গা। অনেক বাধা ডিঙ্গিয়ে একজন মানুষ সফলতার মুখ দেখে। আর এই সফলতা সবাই ধরে রাখতে পারে না, শাকিবেরও পতনের প্রথম ধাপ শুরু হল মাত্র। শাকিব যে অভিযোগ গুলো অপুর বিরুদ্ধে এনেছে তা হাস্যকর। তার অভিযোগ-
ক. সন্তানকে গৃহপরিচারিকার কাছে রেখে দেশের বাইরে যান অপু।
খ. মুসলিম রীতিনীতি মেনে চলবেন ও গৃহিনী হয়ে থাকবেন। কিন্তু অপু সে কথা রাখেননি।
আচ্ছা, বিয়ের সময় কি শর্ত ছিল যে গৃহিণী হয়ে থাকতে হবে? যদি শর্ত থেকে থাকে তাহলে বিয়ের পর তা গোপন রেখে এতগুলো ছবি একসাথে করলেন কি করে? তখন কি ধর্মের কথা মনে ছিল না? আহা কি অভিযোগের ধরন! যে বাবা তার ক্যারিয়ারের দোহাই দিয়ে সন্তানের জন্মের সময় থাকেনি, সন্তান জন্মদানের সময় (সিজারিয়ান) মাকে নিজের সিগনেচার নিজেকে করতে হয়। যে সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য প্রকাশ্যে মাকে গণমাধ্যমের সামনে আসতে হয়, সেই বাবা কিনা অভিযোগ তুলেছে মায়ের বিরুদ্ধে? কি হাস্যকর অভিযোগ। অথচ অপু চাইলে কয়েকশত অভিযোগ তুলতে পারে শাকিবের বিরুদ্ধে।
শাকিব, আপনিও তো বাবা। বাবা হিসাবে আপনার যতটুকু দায়িত্ব আপনি কি তা করেছেন? শুধু টাকা দিয়ে বাবার দায়িত্ব পালন হয় না। শাকিব ভুলে যাচ্ছে জয় একদিন বড় হবে দেখবে, বুঝবে এবং জানবে বাবার এই কৃতকর্ম। শাকিব ভুলে যাচ্ছে অপু জয়ের মা। গণমাধ্যমের সামনে এসে যেভাবে অপু জয়ের পিতৃ পরিচয় চেয়েছে তা রেকর্ড হয়ে আছে। সেই সন্তান কি বাবাকে শ্রদ্ধা করতে পারবে? সেই সন্তান কি বাবাকে ভালোবাসতে পারবে? কখনই না। শাকিব যদি মনে করে টাকা দিয়ে জয়ের আদর-স্নেহ সব কিছু ভুলিয়ে দেবে। তার সে ভাবনা অনেক বড় ভুল ভাবনা। বরং জয়ের ভালো চাইলে একটা সুন্দর সংসার গড়ে উঠত। একজন সন্তানের জন্য বাবা, মা দুজনেই অপরিহার্য।
আমি ভাবছি আব্রাম জয়ের কথা। জয় যখন বুঝতে শিখবে তার মনে যে প্রভাব পড়বে, দাগ পড়বে শাকিবের এই সিদ্ধান্ত, শাকিব কি একবারও ভেবে দেখেছে? কারণ জয় যখন শৈশব থেকে কৈশোরে যাবে সমাজের চারপাশের পরিবেশ তাকে প্রতিনিয়ত বুঝিয়ে দেবে সে একটা ব্রোকেন ফ্যমিলির সন্তান। আমেরিকায়, ইউরোপে এগুলো কিছু না, কিন্তু আমাদের সমাজ এখনো এতটা অগ্রসর হয়নি যে ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানদের খুব সহজেই ছেড়ে কথা বলবে। বাচ্চাটি প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হবে সমালোচনার। তার ক্লাসের বন্ধুরা, প্রতিবেশী, সবাই তাকে বাঁকা চোখে দেখবে যেন তার বাবা-মার ডিভোর্সের জন্য সে দায়ী। শাকিব কি একবারও এইগুলো ভেবে দেখেছে? মনে হয় না।
সংসার মানে দু'জনে হাত ধরে একি পথে হেঁটে যাওয়া। সেখানে একজন দূরে গেলে অন্যজন হাত বাড়িয়ে দিতে হয় যাতে দূরত্ব না বাড়ে। সংসারে অভিমান থাকবে, রাগ থাকবে, ক্ষোভ থাকবে, দু'জনের চিন্তাধারাও এক হবে এমন নয়। তার অর্থ এই নয় সংসার ভেঙ্গে দেওয়া। বরং কি ভুলো আছে তা সংশোধন করা। তবে সেক্রিফাইস করার মন মানসিকতা থাকতে হবে। একজন অন্যজনকে ছাড় দিতে হবে। থাকতে হবে পারস্পারিক ভালোবাসা এবং সম্মান। সেটা সব সংসারের ক্ষেত্রেই। সময়ের সাথে সাথে মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়। একজন মানুষ কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না, শাকিবেরও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তারপরও সংসার টিকে থাকে সন্তানের জন্য।
অনেকে বলবেন, যে সংসারে ভালোবাসা নেই তা টিকিয়ে রাখার দরকার কি? আমি বলব, অনেক সময় ভালোবাসাটা লুকিয়ে থাকে। ইগো এসে ভর করে। আর সেই ইগোর চড়া মূল্য দিতে গিয়ে সংসার ভেঙ্গে যায়, বিশেষ করে সেলিব্রেটিদের ক্ষেত্রে। আর ভুলটা তখনি করে কিন্তু বুঝতে পারে না। বুঝতে পারে অনেক পরে। যখন করার আর কিছু থাকে না। শাকিব কি চাইলেই তার জীবন থেকে অপুকে মুছে ফেলতে পারবে? মনে হয় না। তার জীবনের অনেকটা জুড়েই আছে অপু।
শাকিবের এখন একটা মোহের ঘোরে পরে আছে। আর এই মোহ যখন কেটে যাবে তখন সে বুঝতে পারবে তার ভুলগুলো। খারাপ লাগছে জয়ের কথা ভেবে। শাকিব যতই অর্থ বিত্তের মাঝে জয়কে বড় করুক না কেন, বাবা-মায়ের যে ভাঙ্গন, যে দূরত্ব তা জয়ের মনে দাগ থেকে যাবে আজীবন। শাকিবের শক্তি নেই কোন কিছুর বিনিময়ে সে দাগ মোছার।
এম আর ফারজানা
নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
৪ ডিসেম্বর ২০১৭।