ব্রিটিশ প্রাইমারি-সেকেন্ডারি স্কুল শিক্ষা বনাম বাংলাদেশি শিক্ষা

মাহমুদ সাঈদ
Published : 19 June 2012, 04:50 AM
Updated : 19 June 2012, 04:50 AM

আমার সুযোগ হয়েছে দুদেশে শিক্ষক হবার। বাংলাদেশে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর বিলেতে একটি গ্রামার সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড সিক্সথ ফর্ম কলেজে।

আমার দেশে শিক্ষা এখনও বাধ্যতামূলক নয়, শিশুশ্রম অহরহ, ৫/৬ বছর বয়সেও স্কুলে যায় না, পড়া লেখা বানিজ্য, ক্লাশের পড়া বোঝতে টিচারের বাসায় পড়তে হয়, ছাত্রদেরকে নির্যাতন করা হয়, প্রাইমারীতে টিচার লেকচার দেন, প্রাইভেট টিউশনির গুরুত্ব দেয়া হয়। পড়া লেখার সাথে নৈতিকতার গুরুত্ব খুব একটা চোখে পরে না। রিলিজিয়াস এডুকেশন বাধ্যতামূলক নয়। ফিজিক্যাল এডুকেশন ন্যাশনাল কারিকুলামের অংশ নয়। ছাত্রদের ডাটা বেইজ নেই। বছরের শুরুতে ছাত্রদের মূল্যায়ন করে নতুন বছরের জন্য কোন টার্গেট দেয়ার কালচার নেই। ছাত্রদের ক্লাশ রুমে কী লারনিং ও টিচিং ইত্যাদির কোন মনিটরিং কিংবা টিচিং অবজারভেশন করার প্রচলন নেই। টিচারদের প্রমোশন পে রাইজ হয় কোন আলাদা যোগ্যতার কারনে নয়, বরং চাকুরির বয়সের ফলে। কোনো আলাদা হ্যান্ড আউট, ক্লাশ ওয়ার্ক প্রচলন নেই। ৫০ মিনিটের ক্লাশ শুধু ভাষণ, পড়া আর লেখা। মেধা ও যোগ্যতায় ক্লাশ রুমে ছাত্রদের মাঝে কোন ডিফারেন্সিয়েশন করার প্রচলন নেই। সবার জন্য একই নোট, একই ভাষণ, একই লেখাপড়া। যাকে ভাল লাগে না তার ছায়াও দেখতে চায় না। ডিসঅ্যাবল ছাত্র বলতে কোন ছাত্র আমার দেশে ক্লাশ রুমে দেখতে পাওয়া যায়না। আরো অনেক কিছু ………।

বিলেতে প্রতিটি শিশুর স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামুলক, ক্লাশ টাইমে কোন শিশু বাইরে থাকতে পারেনা , সাড়ে ৩ বছরে মাস্ট স্কুলে যেতে হয়, পড়া লেখা মোস্টলি ফ্রী (গ্রামার ও প্রাইভেট স্কুল ছাড়া), ক্লাশের পড়া ক্লাসে আদায়, নিজ বাসায় পড়তে হয় না, ভারবাল অ্যাবিউস ও করা যায়না টিচার লারনিং মনিট্রিং ও মেন্টরিং করেন, সকল ছাত্র ইকোয়াল। রিলিজয়াস এডুকেশন বাধ্যতামূলক। ফিজিক্যাল এডুকেশন ন্যাশনাল কারিকুলামের অংশ।

ছাত্রদের জন্য ডাটা বেইজ আছে। বছরের শুরুতে ছাত্রদের মূল্যায়ন করে নতুন বছরের জন্য টার্গেট ফিক্স করতে হয়।। ছাত্রদের ক্লাশ রুমে কী লারনিং ও টিচিং চলছে তার মনিটরিং কিংবা টিচিং অবজারভেশন করা হয়। টিচারদের প্রমোশন ও পে রাইজ হয় তাদের পারফরমেন্স মনিটরিং করে, চাকুরির বয়সের ফলে নয়। শুধু বই পড়ানো নয়, আলাদা হ্যান্ড আউট, ক্লাশ ওয়ার্ক করাতে হয়। হোম ওয়ার্ক, ক্লাশ ওয়ার্ক সব কিছুর রেকর্ড রাখা হয়। ৫০ মিনিটের ক্লাশ শুধু ভাষণ, পড়া আর লেখা নয়। বরং পূরো লেসন কে ৪/৫ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ৫ মিনিট রিক্যাপ, স্টারটার, ব্রেইন যাচাই, ১০ মিনিট মূল পর্ব। ২/৩ তি ওয়ার্কশিট থাকে। রুমে ছাত্রদের মাঝে ডিফারেন্সিয়েশন করতে হয়।সবার জন্য একই নোট, একই ভাষণ, একই লেখা পড়া নয়। কারো লারনিং ডিফিকাল্টি থাকলে তার জন্য আলাদা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট। ছাত্রদের সাথে টিচাররা ফ্রেন্ডলি, কখনো মুডি, আবার কখনো অতি বিচারিক আদালতের ভুমিকায়। ক্লাশে টিচার কখনো শাউট করেন না। আরো অনেক কিছু ………।