
আমি একটা কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করি। এটি টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার সেরা কিন্ডারগার্টেন (ভিত্তি জিপিএ ফাইভ)। আমি একটা কোচিং সেন্টারেও শিক্ষকতা করি। এটিও মোটামুটি নামকরা একটি কোচিং সেন্টার (ভিত্তি আমার এই কোচিং সেন্টারের ছাত্র-ছাত্রীদের জিপিএ এবং ঢাকা ভার্সিটি, মেডিক্যালসহ অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ প্রাপ্তি)। আমার এই দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানই আমি। আমি চাই ছাত্ররা শুধু ভাল ফলাফলের জন্য পড়বে না; এরা পড়বে জানার জন্য, জ্ঞানের জন্য, পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত – সর্বত্রই যারা কিছু না কিছু অবদান রাখবে। এজন্য আমি ছাত্র-ছাত্রীদের কোন নোট দেই না; বোর্ড বই পড়াই। পড়ার বাইরেও যে একটা জগত আছে সেই জগতের কথা বলি। স্বপ্ন দেখাই, স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখাই, এবং সাধ্যমত সাহায্য করি।
আমার বিদ্যেয় যতদুর কুলোয় তার পুরোটাই ঢেলে দেয়ার চেষ্টা করি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের। আমার মূল কাজই হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনায়, নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী করা এবং সেদিকে তাদের ব্যস্ত রাখা। সবকিছুই মোটামুটি ঠিকই চলছিল কিন্তু বাধ সাধল যখন দেখি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অংশ পড়াশুনা করতে চাচ্ছে না। তারা ধরেই নিয়েছে প্রতিবছরই প্রশ্ন ফাঁস হবে, সরকার চেঁচামেচি করবে, জাফর ইকবাল স্যার পত্রিকায় প্রশ্ন ছাপিয়ে দিবে এবং কিছুই হবে না।
আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মন খারাপ এজন্য নয় যে তারা প্রশ্ন পায় না বা আমি সংগ্রহ করে দেই না। তাদের মন খারাপ এজন্য যে তারা সারা বছর নিয়মিত পড়াশুনা করে যে ফলাফল করে তার চেয়ে হয়তো যারা পড়ে না তারাও তাদের চেয়ে ভালো ফলাফল করবে। তাদের মন আরো একটা কারণে খারাপ। কারণটা হচ্ছে: পরীক্ষা হলে নাকি চল্লিশটা নৈর্ব্যক্তিক, দশটা শুন্যস্থান ও দশটা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর কোন কোন শিক্ষক সঠিক করে দেন। তাদের আরো মন খারাপ হয় যখন কিছু কিছু শিক্ষক তাদের সঠিক উত্তরটাকে ভুল বলে তাদের কাটাছেঁড়া করতে বাধ্য করেন।
আমি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা জানি না বললে অভিভাবকরা আমাকে নিয়ে টিপ্পনী কাটেন। তাদের দাবী অমুকের ছেলেমেয়ে জিপিএ ফাইভ পাবে। আমার ছেলে না পেলে কি ইজ্জত থাকে? পরোক্ষভাবে তারাও দাবি করেন আমি যেন তাদের সন্তানদের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেখে তার সমাধান করে দেই।
আমার বোঝাতে কষ্ট হয় যে আপনার সন্তানদের আমি এমন ভাবে পড়াই যেন তারা সবই পারে। কেউ বোঝে কেউ বোঝে না। শিক্ষক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের এসব কথায় আমি অসহায় হয়ে পড়ি। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি কেউ বের করবে না?
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
পুড়ো সিস্টেমে গলদ হয়েছে দেখছি !!!
আরীফ খান স্বাধীন বলেছেনঃ
গলদের আর দেখেছেন কী! আসল ঘটনাটাতো বলাই হয়নি
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
আপনার অভিজ্ঞতাটি নিশ্চয়ই সকল দায়িত্বশীল শিক্ষকদের বিব্রত, দু:খিত ও ব্যথিত করবে।
বাস্তবের এই অভিজ্ঞতার সাথে ভার্চুয়াল জগতের আমাদের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের আচরণ সম্পর্কেও আমার একটি পর্যবেক্ষণ আছে।
ফেসবুকে পিএসসি অথবা অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে বেশ কিছু ফেসবুক পেইজ আছে। বন্ধু তালিকার অনেককে দেখলাম মন্তব্যে/আলাপে এসবের কোন না কোনটার লিংক শেয়ার দিচ্ছেন। মজা পাচ্ছেন। এসব লিংক দেখিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে একচোট দেখে নিচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী বরাবরই ‘ভালনেরাবল’ অবস্থায় থাকছেন। আর আমরা একেকজন মহা তীরন্দাজ-গোলন্দাজ। আমাদের অনেক চিন্তা শিক্ষার্থীদের প্রশ্নফাঁস নিয়ে!!!
তাহলে আমাদেরই তো উচিৎ ছিল ফেসবুকে এ ধরনের প্রশ্নফাঁস পেইজগুলোর বিস্তারকে রোধকরণ?
নতুবা, যদি এ ধরনের কোন পেইজে মজা লুটার জন্য লাইক দিয়ে থাকেন কেউ, প্রশ্নফাঁসকারী ও তাদের মধ্যে কোনরকম ফারাক তো দেখিনা।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রশ্নফাঁসকারীদের হাত পুড়ে যাবে। তিনি বলেছেন, প্রশ্নফাঁসকারীদের জন্য আইন কঠোর হচ্ছে।
বস্তুত আইনগতভাবে এই আমাদের বিরুদ্ধেও অনলাইনে প্রশ্নফাঁসকারীদের সহায়তা ও ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়ানোর অভিযোগ গঠন দরকার…!
আমি নিজে এমন একটা পেইজের বিরুদ্ধে ফেসবুক রিপোর্ট করেছি। যদিও ফেসবুক রিপোর্টে কোন প্রশ্নফাঁস পেইজগুলো নিয়ে অভিযোগ করার সঠিক ক্যাটেগরি পেলাম না। ফেসবুক প্রত্যুত্তরে আমাকে জানিয়েছে, এই পেইজ তাদের পলিসি ভায়োলেট করছে না।
আমরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কাররা কী এইসব পেইজ নিয়ে সরব হয়েছি??? এসব পেইজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে উচ্চকণ্ঠে দাবি করছি? রিপোর্ট করছি? কোন কোন পেইজে ১ লাখ লাইক পড়েছে!!!!!
প্রশাসন ব্যর্থ এ কথা বলতে হয় না, এটা বোঝা যায়। কিন্তু আমাদের ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতা কি আমরা দেখতে পাচ্ছি?
আরীফ খান স্বাধীন বলেছেনঃ
কিন্তু আমাদের ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতা কি আমরা দেখতে পাচ্ছি? আমি আপনি হয়তো দেখতে পারছি কিন্তু সবারই পারা উচিত
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
বি:দ্র:
সকল ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং যার যার মত করে সহায়তা করার অনুরোধ জানাচ্ছি বিনীতভাবে।
মুক্তিযোদ্ধা আলমতাজের পাশে দাঁড়াই – সামান্য ঋণশোধ!
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
সমস্যাকে অস্বীকার করে তার সমাধান করা যায় না। দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে অনেক নাটক ফাটক হয়েছে। সব খবরই যেমন গুজব নয়, তেমনি সব গুজবই অসত্য নয়। এখন পর্যন্ত যাদের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে,যেমন পাবলিক সার্ভিস কমিশন, শিক্ষা বোর্ড এরা কি কোন থানায় কোন মামলা করতে গিয়েছে? থানায় মামলা করলে বোঝা যায়, এ অপরাধের কেউ বিচার চায়। কিন্তু এর সব কিছুর তদন্তই তো কেউ চাইল না।
যদি ফেইসবুকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র নিয়ে পাতা খোলা হয়, সেটা তথ্যের বিস্তৃতি হিসেবেই দেখা উচিৎ। এটা তদন্তে সহায়ক হতে পারে।
আরীফ খান স্বাধীন বলেছেনঃ
অনেকেই মামলা করতে চায় কিন্তু উল্টো তাকেই ফাসানো হতে পারে বলে তারা তা সাহস পান না সরকারের উপর, পুলিশদের মানুষের বিশ্বাস অনেক কমে গেছে